পরিচ্ছন্ন সমাজ গঠনের জন্য পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বের প্রয়োজন উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ৪ দফা কর্মসূচির অন্যতম হচ্ছে সমাজ সংস্কার করা এবং একটি মানবিক সমাজ গঠন করা। পরিচ্ছন্ন সমাজ গঠনের জন্য পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় নূরুল ইসলাম বুলবুল জামায়াতে ইসলামীর সামাজিক কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরে বলেন, সিলেট অঞ্চলসহ ১৩টি জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি। করোনাকালীন যখন নিজ পরিবারের লোকজনও করোনা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ায়নি, জামায়াতে ইসলামী সারা দেশে তখন মানুষের পাশে দাঁড়ায়। পঞ্চগড়ে নৌকাডুবে হিন্দু পরিবারের ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আমিরে জামায়াতের নিদের্শে পাশে দাঁড়িয়েছি। কয়েকমাস আগে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী খাদ্যসামগ্রী, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছি। সামাজিক কাজ করতে আমরা দল-মত ধর্ম-বর্ণের বিবেচনা করি না, সবাই সমাজের মানুষ এই বিবেচনায় আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করি।
ভোট পাওয়ার জন্য বা মানুষের সমথর্নের জন্য আমরা সামাজিক কাজ করি না। আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তার দেওয়া দায়িত্ব পালন করছি। অথচ আমাদের এসব কাজে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত আমাদের নিঃশেষ করতে গত ১৫ বছর নানা রকম ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালানো হয়েছে। জুলুম নির্যাতন চালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নিঃশেষ করা হয়েছে। এতোকিছুর পরেও আমরা একদিনের জন্যও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি এবং হবো না। আমরা জনগণের পাশে আছি, জনগণ যদি আমাদেরকে তাদের পাশে রাখতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয়, তবে আমরা জনগণের স্বপ্নের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গঠন করতে পারব।
ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হলে, জাকাতভিত্তিক অর্থনীতি ব্যবস্থার ফলে সমাজের ধনী-গরিবের বৈষম্য থাকবে না। সকলেই মর্যাদাশীল নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার লাভ করবে। সমাজ থেকে অনাচার, অবিচার দূর হয়ে যাবে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস চাঁদাবাজ, মাদক থাকবে না। নারীরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে। সকল ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে। রাষ্ট্রের কাছে ধর্মের মূল্যায়ন নয়, মূল্যায়ন হবে মানুষের। তাই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগামী নির্বাচনে ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয়ের সামনে পল্টন থানা আমির শাহীন আহমেদ খানের পরিচালনায় শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন, কামাল হোসেন, শামসুর রহমান প্রমুখ।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ৪ দফা কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে। তারমধ্য ৩নং দফা হচ্ছে সামাজিক কাজ। জামায়াতে ইসলামীর স্লোগান হচ্ছে আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই। জামায়াতে ইসলামী সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব গঠনের কারখানা। জামায়াতে ইসলামীর কাছে রাষ্ট্র ও সমাজের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হলে একটি কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র জনগণ উপহার পাবে। জামায়াতে ইসলামী একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। এজন্য জনগণের সমথর্ন ও সহযোগিতা প্রয়োজন।
অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামী মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজ শুধু শীতবস্ত্র বিতরণে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা আমাদের সাধ্যমত যে কোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকার কাজ করি। আমাদের এই কাজ ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী, দল-মত নির্বিশেষ। বিগত আওয়ামী সরকারের লুটপাটের কারণে সমাজে দরিদ্রতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগের লুটপাটের বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার অপরাধে আমাদের শীর্ষ ১১ জন নেতাকে বিচারক হত্যা করেছে। তিনি একটি কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনে জামায়াতে ইসলামীকে সমথর্ন ও সহযোগিতা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি কল্যাণ ও মানবিক সংগঠন। জামায়াত কর্মীরা, সমাজকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষাসহ যে কোনো দুর্যোগ দুর্দিনে মানুষের প্রয়োজনে জামায়াতে ইসলামী সবার আগে সবখানে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেছি এটা মনে করি না, আমরা মনে করি আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। জামায়াতে ইসলামী সামাজিক কাজের মাধ্যমে জনগণের পাশে থাকায় হিংসাত্মক রাজনৈতিক গোষ্ঠী জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। জামায়াত কে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করে তারাই পালিয়ে গেছে। আমাদের সামাজিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে আজ আমরা সমাজের শীতার্ত মানুষদের জন্য শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল উপহার দেওয়ার কাজ শুরু করেছি। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
পরে নেতারা উদ্বোধনী দিনে প্রায় ৩ শতাধিক কম্বল বিতরণ করেন। মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন থানায় পর্যায়ক্রমে বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
মন্তব্য করুন