অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করা মানে সরকারকে ব্যর্থ করা নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো এই সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। আবার আপনাদের নানা কাজের সমালোচনা হবে। সমালোচনায় ‘ভুল’ সংশোধনের সুযোগ তৈরি হয়। এটাই গণতন্ত্রের রীতি, গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য।
রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে- তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে রিজভী এসব কথা বলেন।
যাত্রাবাড়ীর ভাঙ্গাপ্রেস এলাকার নবী টাওয়ারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারগুলোর মাঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
রিজভী বলেন, আমরা যদি বলি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমরা সবাই পছন্দ করেছি সবাই। বিএনপির নেতানেত্রীরা যেমন- শেখ হাসিনার দ্বারা অপমানিত হয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন; তিনিও (ড. ইউনূস) শেখ হাসিনার দ্বারা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কিন্তু গণতন্ত্র তো একটা সার্বজনীন ব্যাপার। এখানে (দেশে) জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের আগেও তো অনেকে গুম হয়েছেন, দুজন এমপি গুম হয়েছেন, একজন সাবেক এমপিকে পটুয়াখালীতে যুবলীগ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে, কত ছাত্র-যুবককে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছে। তখনতো ড. ইউনূস একটি বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানাননি। অথচ আপনার (ড. ইউনূস) প্রতি যখন অন্যায় হয়েছে, আপনাকে যখন মামলা দেওয়া হয়েছে- বিএনপি কিন্তু ঠিকই তখন প্রতিবাদ করেছে। ইউনূস সাহেব সর্বনন্দিত একজন ব্যক্তি। তিনি ক্ষুধা দূরীকরণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে যে ভূমিকা রেখেছেন, তাতে আমরা গর্ববোধ করি। জাতিকে যখন আওয়ামী লীগ দাসে পরিণত করেছিলো, তখন জাতি প্রত্যাশা করেছিলো- ড. ইউনূস প্রতিবাদ জানাবেন, বিবৃতি দিবেন।
তিনি বলেন, আমি এ কারণেই বলছি, ভারতে সম্ভবত ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগে ইংরেজ সৈনিকেরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য ভারতীয়কে হত্যা করে। এর প্রতিবাদে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ইংরেজদের দেওয়া খেতাব পরিত্যাগ করেছিলেন। গোটা জাতি তো প্রত্যাশা করেছিল ড. ইউনূস সাহেব, যিনি নিজেও শেখ হাসিনা দ্বারা নির্যাতিত, তিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কমপক্ষে একটা বিবৃতি দেবেন।
তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্য প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থ করতে চাইছে। আমার মনে হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার এ ধরনের কথা বলা সমীচীন নয়। কারণ, যে গণতন্ত্র শেখ হাসিনা আটকে দিয়েছিল, কথা বলার স্বাধীনতার যিনি টুঁটি চেপে ধরেছিলেন, আইনের শাসনকে যিনি আজিমপুর গোরস্তানে কবরস্থ করেছিলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে যিনি ভাসিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গোপসাগরে- আপনাদের কথা সেই শেখ হাসিনার মতো হবে কেন।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশ গণতন্ত্রের পথে যে যাত্রা শুরু করেছে, আপনারা তাকে সহায়তা করবেন। এই মুহূর্তে যখন দেশ সংকটে পড়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস সবার সঙ্গে কথা বলে জাতীয় ঐক্যের যে বৈশিষ্ট্য দেখিয়েছেন, তাতে সবাই একাত্মতা ঘোষণা করেছে। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। আবার আপনাদের নানা কাজের সমালোচনা হবে। এটাই তো গণতন্ত্রের রীতি, গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য।
সমালোচনায় ‘ভুল’ সংশোধনের সুযোগ তৈরি হয় জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আপনার প্রতিদিনের কাজে যদি সমালোচনা হয়, আপনি নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পারবেন। ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলো এটাই চর্চা করে। সমালোচনা করা মানে সরকারকে ব্যর্থ করা নয়। এ ধরনের কথা একজন উপদেষ্টার মুখ থেকে আসা কখনোই ঠিক হয়নি।
ভারতের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আজকে পতিত স্বৈরশাসকের জন্য ভারত মায়াকান্না করছে। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছে। এই যাত্রাবাড়ীতে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এখানেই তো অনেক মন্দির আছে, সেখানে কোনো হামলা হয়েছে? কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে? এসব ধূম্রজাল সৃষ্টি করে তারা গণধিক্কৃত আওয়ামী লীগকে আবার ফিরিয়ে আনতে চায়।
তিনি বলেন, অপপ্রচার দিয়ে, অপতথ্য দিয়ে ধূম্রজাল তৈরি করা যায়, কিন্তু সেই ধূম্রজাল কেটে যায়।
তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনে এখনও পতিত আওয়ামী স্বৈরশাসকের দোসর বিদ্যমান। তাই হত্যা মামলা নিয়ে গড়িমসি করছেন। হত্যাকারীদের আটকের জন্য পুলিশ কঠিন হচ্ছে না। তাই অবিলম্বে পুলিশের নামে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের চাকরিচ্যুত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী বলেন, আওয়ামী হায়েনা সরকারের দলীয় ক্যাডার এবং পুলিশ বাহিনী যেভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে, তার বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে। যারা এই সরকারের দোসর ছিল, লুটেরা ও খুনীদের ইন্ধন দিয়েছে- তাদেরকেও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলাম, মকবুল হোসেন টিপুসহ যাত্রাবাড়ীতে শহীদ পরিবারের সদস্যবর্গ।
মন্তব্য করুন