ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। ফ্যাসিবাদ মাফিয়াতন্ত্রমুক্ত দেশগঠনে রাসুলের সিরাত অনুসরণ অপরিহার্য।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ আমবাগিচা খেলার মাঠে সিরাতুননবি (সা.) মহাসম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ ঢাকা জেলা দক্ষিণ ও কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানা শাখার যৌথ উদ্যোগে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, রাসুল (সা.)-এর সিরাত থেকে দূরে থাকার ফলে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য, বেইনসাফ ও কায়েমি স্বার্থবাদগোষ্ঠী আমাদের ওপর চেপে বসেছে। ইসলাম ছাড়া কোথাও শান্তি নেই। শান্তি ও মুক্তির একমাত্র ঠিকানা হলো ইসলাম। রাসুল (সা.) যে নীতি-আদর্শ নিয়ে আসছে সেই নীতির অনুসরণ ছাড়া সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সমাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ৫ আগস্টের পূর্বে দেশে যা ঘটানো হয়েছে তা মনুষ্য সমাজে ঘটতে পারে না। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা জীবনবাজি রেখে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জান-মাল রক্ষায় কাজ করেছে। আর এটাই ইসলামের শিক্ষা। মুসলমানরা হিন্দুদের জান-মাল ও উপাসনালয় পাহারা দেয়, বিনিময়ে তারা মুসলমান হত্যা করে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নিরাপদে এবং নিরাপত্তার সঙ্গে আছেন। উগ্রবাদী ইসকন ও আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘু ইস্যুকে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। এ দেশের জনগণ তা রুখে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হিংসা, বিদ্ধেষ, পরনিন্দা বন্ধ করে সবাইকে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বর্তমান সরকারের উদ্দেশে বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছরে এত বেশি পরিমাণ সমর্থন নিয়ে আর কোনো সরকার পায়নি। এতো সমর্থন পাওয়ার পর আপনাদের ভয় কিসের? আপনারা রাষ্ট্রের আমূল পরিবর্তন আনুন। প্রয়োজনীয় সংস্কার করুন বিনা ভয়ে। কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী যেন আপনাদের দ্বারা বিশেষ কোনো সুবিধা না পায় সেদিকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে- ফ্যাসিবাদের ও মাফিয়াদের বিরুদ্ধে আমাদের শহীদের রক্ত যেন অমলিন না হয়। শহীদের রক্তের সাথে গাদ্দারি করা হলে জনগণ তা রুখে দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
মুফতি ফয়জুল করীম আরও বলেন, দেশে নতুন করে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে তা প্রতিরোধ করা হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলা হবে। রাসুল (সা.)-এর সিরাত প্রতিষ্ঠা হলে মানুষ ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। মানুষ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করবে। এ জন্য সুন্নাহর অনুসরণ জরুরি। ব্যক্তি নাজাতের জন্য ইসলামী রাজনীতি করতে হবে। যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার মনোবাসনা পরিহার করতে হবে। ইসলামী রাজনীতি সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে করতে হবে।
তিনি বলেন, সমাজের উন্নতি-অগ্রগতির জন্য রাসুল (সা.)-এর নির্দেশনা রয়েছে। সে সঙ্গে উন্নতি-অগ্রগতির ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। আমরা যে দেশে বসবাস করছি সে দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ বৈষম্য চলছে। চলছে নির্যাতন-নিপীড়ন। সমাজ-রাষ্ট্রে রাসুল (সা.)-এর সিরাত বাস্তবায়ন করতে পারলেই সমাজ থেকে বৈষম্য দূর হবে, জুলুম-নির্যাতন দূরীভূত হবে, মানবতা মুক্তি পাবে।
সংগঠনের ঢাকা জেলা দক্ষিণ সভাপতি মুফতি শফিউদ্দিন কাসেমী ও মুফতি মোহসিন উদ্দীন ওবায়দীর সভাপতিত্বে এবং ঢাকা জেলা দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মুহা. জয়নুল আবেদীন ও মুফতি খাদেমুল ইসলামী নাটোরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সিরাতুননবি (সা.) মহাসম্মেলনে বক্তব্য দেন মাওলানা আব্দুল আউয়াল পীর সাহেব খুলনা, সুলতানুল ওয়ায়েজ মুফতি খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী, হানাফি মাজহাবের ভাষ্যকার মুফতি রেজাউল করীম আবরার, মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী, আন্তর্জাতিক আলেমেদীন মুফতি হাবিবুল্লাহ আরমান পাকিস্তান, মুফতি বেলাল হোসাইন, মুফতি আবু সাঈদ, মাওলানা সালেহ উদ্দীন আহমদ, মাওলানা আশরাফ আলী নুরী, মুফতি মাজহারুল ইসলাম রাশেদী, মাওলানা জহিরুল ইসলাম।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- আলহাজ আবু হানিফ মিয়া, আলহাজ সুলতান আহমদ খান, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, হাজি লুৎফুর রহমান, হাজি শাহীন আহমদ, আলহাজ শামীম খান, হাজি জাকির হোসেন কাজল, মাস্টার মো. সুমন মিয়া।
মন্তব্য করুন