আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক মহাসচিব আল্লামা হাফেজ নুরুল ইসলাম জিহাদী (রহ.)-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদরাসায় আন্তর্জাতিক তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের উদ্যোগে এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ঐতিহ্যবাহী দারুল উলুম দেওবন্দ ওয়াকফ-এর মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস আল্লামা সুফিয়ান কাসেমী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা সুফিয়ান কাসেমী বলেন, প্রত্যেক যুগে বাতিল ফেরকার মোকাবিলা করার জন্য আল্লাহ তা’আলা একটি জামাত তৈরি করে দেন। যখন এদেশে আহমদিয়া জামাত তথা; কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের ফেৎনা, ফাসাদ, অপতৎপরতা ও আস্ফালন বেড়ে যায় তখন উম্মাহ'র জন্য রহমত স্বরূপ আল্লাহর পক্ষ থেকে আল্লামা হাফেজ নূরুল ইসলাম জিহাদী (রহ.) এর মতো সুযোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হয়েছিলো। আল্লামা জিহাদী (রহ.) নিজের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আক্বিদায়ে খতমে নবুওয়ত হেফাজত করে এদেশে কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি আদায়ের জন্য নিজের সর্বোচ্চ মেহনত করে গেছেন।
তিনি বলেন, এদেশে খতমে নবুওয়ত আন্দোলন সংগ্রামের সঙ্গে আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী (রহ.)-এর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশে খতমে নবুওয়ত আন্দোলনের ইতিহাস লেখতে গেলে এই আন্দোলনের সংগ্রামী রাহবারদের নামের তালিকায় আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী (রহ.)-এর নাম উপরের দিকেই রাখতে হবে। আল্লাহ হযরতের বর্ণাট্য এই কর্মমুখর জীবন থেকে আমাদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তৌফিক দান করুন।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, ১৯৯০ সালে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়তের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে শুরু করে আমৃত্যু আল্লামা হাফেজ নূরুল ইসলাম জিহাদী (রহ.) খতমে নবুওয়তের কাজ করে গেছেন। তিনি খতীব ওবাইদুল হক (রহ.) এর মজবুত নেতৃত্বে এদেশে কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার জন্য আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে খতমে নবুওয়ত আন্দোলনের এক জোয়ার তুলেছিলেন। ১৯৯৩-৯৪ সালে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন তারই সুস্পষ্ট প্রমাণ। তিনি ২০২০ সালে হেফাজত মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী (রহ.) এবং ক্বায়েদে মিল্লাত আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী (রহ.)-এর দেখানো পথেই সংগঠনকে পরিচালনা করেছেন। আল্লামা জিহাদী (রহ.) শাইখুল ইসলাম (রহ.) এর অত্যন্ত স্নেহভাজন শাগরেদ ও প্রিয় একজন খলিফা ছিলেন। তিমি সুদীর্ঘ সময় আকাবীর আসলাফদের সাথে কাজ করার সৌভাগ্য অর্জন করে ছিলেন। আজীবন তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি দ্বীনের খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। ওনার মাঝে আকাবীর আসলাফদের ঝলক দেখা যেতো। আমরা আল্লামা জিহাদী (রহ.)-এর পথ অনুসরণ করে আগামীতে খতমে নবুওয়াত ও হেফাজতে ইসলামসহ দ্বীনের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করবো, ইনশাআল্লাহ।
এ সময় তিনি আরও বলেন, আগামী (১৮ জানুয়ারি) শনিবার, সকাল ৯টায়, জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররম চত্বরে আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মহাসম্মেলনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়তের জেলা, উপজেলা ও মহানগর কমিটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ দেশের আলেম উলামা ও আপামর তৌহিদী জনতার প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আল্লামা হাফেজ নুরুল ইসলাম জিহাদী (রহ.) অনেক পরিচয় ও প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াতের সভাপতি, বেফাকের সহসভাপতি, হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য ও হেফাজতে ইসলামের মহাসচিবের দায়িত্বসহ অসংখ্য মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের গুরু দায়িত্ব সফলতা ও স্বার্থকতার সঙ্গে আঞ্জাম দিয়েছেন। নিকট অতীতে ওনার মতো প্রখর মেধাবী ও বিচক্ষণ আলেম আমরা খুব কম দেখতে পেয়েছি। তিনি যে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানে সর্বোচ্চ মেধার ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
আলোচনা সভায় তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াতের সহকারী মহাসচিব মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়ার সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, হেফাজত ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউরোপ শাখার সভাপতি শাইখুল হাদীস আল্লামা শাহ্ সদর উদ্দীন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে শাখার সভাপতি শাইখুল হাদীস মুফতী শাহ্ মোহাম্মদ আনাস ও জমিয়াতুশ শাবাব ইউকে শাখার সভাপতি মুফতী শাহ্ মোহাম্মদ শুআইব, তাহাফফুজের সহসভাপতি মাওলানা জহুরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজি, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, মুফতি শিব্বির আহমাদ কাসেমী, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আশিকুল্লাহ, সহকারী মহাসচিব মাওলানা মঈনুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক মাওলানা ইউনুস ঢালী, সহ.অর্থ সম্পাদক মাওলানা মাহবুবুল আলম, প্রচার সম্পাদক মাওলানা রাশেদ বিন নূর, সহপ্রচার সম্পাদক মাওলানা আফসার মাহমুদ, সহ.দপ্তর সম্পাদক মাওলানা মোরশেদ বিন নূর, ঢাকা কামরাঙ্গিরচর জোন নেতা মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম ইসলামবাগী, ঢাকা ৭নং জোন সেক্রেটারি মুফতি মাহফুজুর রহমান, ঢাকা বারিধারা জোন নেতা ড. আব্দুল কাইয়ুম, ঢাকা মহানগর নেতা মাওলানা সানাউল্লাহ খাঁন, ঢাকা মহানগর ২নং জোন নেতা মাওলানা ওমর ফারুক মুসআব, মাওলানা ইয়ামিন, জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন সিলেটের পরিচালক মাওলানা আখতারুজ্জামান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন