ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, ভারত তাদের স্বার্থে আঘাত লাগায় বাংলাদেশের ওপর ক্ষেপে গেছে। বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতের স্বার্থে সবকিছু করে দেশকে গিলে খাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিল। দেশ ভারতের রাহু মুক্ত হয়েছে। ভারতের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ে এখন আর কিছু হচ্ছে না। তাই ভারতের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন পায়ে পা দিয়ে যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করছে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মাদারীপুর জেলা শাখার উদ্যোগে লেকপার স্বাধীনতা অঙ্গনে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের মাদারীপুর জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাজি আজিজুল হক মল্লিকের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা আমিনুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) মাওলানা নুরুল ইসলাম আল আল আমিন, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এস এম আজিজুল হক প্রমুখ।
চরমোনাইর পীর বলেন, উগ্রবাদী ইসকনকে দিয়ে সরকারি আইনজীবীকে হত্যা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে উসকানি দিচ্ছে। ভারত বিভিন্ন হাইকমিশন, সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও পতাকা ছিঁড়ে চরম অসভ্যতার পরিচয় দিয়েছে। মুসলমানদের হত্যা করে দেশে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা সৃষ্টি করে দেশে গৃহযুদ্ধ লাগাতে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে ভারত। কিন্তু মুসলমানরা হিন্দুদের মত অসভ্য নয়। তারা অত্যন্ত ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়েছে। মুসলমানরা ক্ষেপে গেলে জালিমদের রক্ষা হবে না। সৈয়দ রেজাউল করীম আন্তর্জাতিক আইন এবং ভিয়েনা কনভেনশনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক মিশন ও কুটনৈতিকদের নিরাপত্তা বিধান করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, কালো টাকা, পেশিশক্তি ও সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনী ব্যবস্থার বিকল্প নেই। পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে ভোটারদের ভোটের প্রকৃত মুল্যায়ন হয়। তিনি বলেন, যে সকল বিজ্ঞজনেরা বলেন সংবিধান মেনে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা সম্ভব নয়, তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়া করার সময় কি সংবিধান অনুসরণ করেছিলেন? গণঅভ্যুত্থানে হাজারো ছাত্রদের বুকের উপর গুলি করে যখন হত্যা করা হয়েছিল তখন কি সংবিধান হয়েছিল? আওয়ামী লীগ ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থানকে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন করেছিল এখন কেন আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সংবিধানের দোহাই দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন দেওয়া মানে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন দেওয়া এমনটাই ধরে নেওয়া যায়, যার কারণ হলো আওয়ামী লীগের প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। যারা রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতায় রাখতে চান তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কি? তারা কি ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগের মতো নিজ দলীয় লোককে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে ফ্যাসিবাদের মতো একক শক্তি ব্যবহার করে দেশ চালাবে। তা এদেশের জনগণ কখনোই মেনে নেবে না, ছাত্র জনতার রক্ত বৃথা গেলে দেশ ভবিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। যার কারনে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলো (পিআর) সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের জোর দাবি জানিয়ে আসছে।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, হাইকমিশনে এ ধরনের হামলা, পতাকা পুড়িয়ে ফেলা এবং কূটনৈতিকদের উপর আক্রমণের ঘটনাকে অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও উসকানি আখ্যা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনা আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থি। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ভারতীয় হাইকমিশনকে ডেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে হবে। নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে ভারত থেকে সকল দূতাবাস গুটিয়ে ফেলতে হবে।
মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী বলেন, কলকাতা ও আগরতলায় ভারতের সরকার দলীয় উগ্র কর্মীরা বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা করে দেশে যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। বিগত ১৬ বছরে ভারতের অভিপ্রায়ে শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করেছিল। হাসিনা জনতার আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। খুনি হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ করেছে। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত ভারতের মিডিয়াগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক নিউজ প্রচার করছে। ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, আমরা ভারতকে ভয় করি না। এদেশে ১৬ কোটি যোদ্ধা ভারতের চক্রান্ত রুখে দিতে প্রস্তুত। ইসকন ভারতের উগ্রবাদী সংগঠন। ভারতের মদদে ইসকন নেতা চিন্ময় দাস বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত। বাংলাদেশের পতাকার উপরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করে রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করায় দেশের আদালতে তার নামে মামলা হয়েছে। সে আলোককে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হলে ভারতের সংসদে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি এটা কীসের আলামত?
মাওলানা নুরুল ইসলাম আল আমিন বলেন, ভারত সরকারের প্রকাশ্য ইন্ধনে হাইকমিশনে হামলা হয়েছে। লাল-সবুজের পতাকা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশন, উপহাইকমিশনসহ কূটনৈতিকদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ভারত সরকারের মদদে প্রতিনিয়ত মসজিদ, মাদরাসা, মুসলমানদের দোকানপাঠ, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। মুসলমান হত্যা করে বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে। সেই ভারত এখন আমাদেরকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বয়ান দিচ্ছে? তিনি বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গি আছে বলে ভারতের মিডিয়াগুলো অপপ্রচার করছে। বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এটা খুনি হাসিনার সৃষ্টি। বাংলাদেশে আমরা সকলেই মিলেমিশে ভাই ভাই হয়ে কাজ করছি।
সভাপতির বক্তব্যে হাজি আজিজুল হক মল্লিক বলেন, আগস্ট বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পরাজয়ের পরে কসাই মোদি হাসিনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। হাসিনা ভারতে বসে বসে লাল-সবুজের বাংলায় অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। বাংলাদেশের জনগণ ভারত বিরোধী নয়, যেমনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরোধী তেমনি কসাই মোদি বিরোধী। আগরতলা উপ-হাইকমিশনে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
মন্তব্য করুন