বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কীভাবে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে তা চিন্তা করাও যায় না। প্রতি বছর তারা ১৬ বিলিয়ন ডলার করে পাচার করেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাসহ দেশের সব প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ভারতের নানা আচরণের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করেন, এটা কোন ধরনের বন্ধুত্ব, এটা কোন ধরনের প্রতিবেশীসুলভ আচরণ?
স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যের ইস্ট লন্ডনের রয়্যাল রিজেন্সি হলে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। সমাবেশের আয়োজক যুক্তরাজ্য বিএনপি।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেকের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ।
এছাড়াও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নেন।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, পতাকা নামিয়ে আগুন দেওয়া, কলকাতায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সামনে সহিংস বিক্ষোভ, সিলেট ও বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে উগ্রবাদী ভারতীয়দের বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টার প্রতিবাদ জানান যুক্তরাজ্য সফররত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, এটা কোন ধরনের বন্ধুত্ব? এটা কোন ধরনের প্রতিবেশীসুলভ আচরণ? বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, এমন একটি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন। শত শত মানুষকে গুম করেছেন। সেই শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে তার দলবল নিয়ে চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন।
ভারতকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ও বন্ধু উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা (ভারত) আমাদের সাহায্য করেছে। ভারতের কাছে আমরা অনুরোধ জানাতে চাই, আপনারা বড় দেশ, তাই বলে যে বাংলাদেশ যুদ্ধ করে, জীবন দিয়ে স্বাধীন হয়েছে, যারা সংগ্রাম করে গণতন্ত্র আদায় করে নিয়েছে, যারা বুকের রক্ত দিয়ে তাদের অধিকার আদায় করেছে, তাদেরকে খাটো করে দেখে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। বাংলাদেশের মানুষ কখনোই তা মেনে নেবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের সব রাজনৈতিক দলের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, এই বিষয়ে আমরা এক এবং ঐক্যবদ্ধ থাকব। আমরা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখতে একজোট হয়ে এই সংগ্রামে টিকে থাকব।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের দায়িত্বটা কী? এই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, দ্রুত এই জঞ্জালগুলোকে সাফ করে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়া। তারা মনে করেন নির্বাচনী ব্যবস্থা, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ন্যূনতম যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন, সেগুলো দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত। কারণ, তারা এর আগেও বলেছেন, নির্বাচন যত দেরি হবে, সমস্যা তত বাড়তে থাকবে। তত বেশি গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
হঠকারিতা পরিহারের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা উগ্রতা করেন, হঠকারিতা করেন। হঠকারিতা ও উগ্রতা কখনোই আমাদের সঠিক পথে নিয়ে যাবে না। সুতরাং কোনো বিশৃঙ্খলা নয়, কোনো হঠকারিতা নয়, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আমাদের সামনে পা ফেলতে হবে।
মন্তব্য করুন