সীমান্তের ওপারে ফ্যাসিস্ট বসে আছে এবং ওখান থেকে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কোনো ষড়যন্ত্রে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অর্জনকে বৃথা যেতে দেওয়া হবে না।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে ঢাকার ঠাকুরগাঁও ছাত্র কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে অয়োজিত এক কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তোমাদের প্রতি (ছাত্রদের) একটাই অনুরোধ যে, আমরা যেটা অর্জন করেছি সেটা যেন বৃথা না যায়। প্রতি মুহূর্তে তারা (ফ্যাসিস্ট) একেকটা ঘটনা ঘটিয়ে সেখানে ফলাও করে বিশ্বে দেখাতে চায় যে, বাংলাদেশ নাকি মৌলবাদীর দেশ হয়ে গেছে, বাংলাদেশে এখানে নাকি সংখ্যালঘু ভাইকে নির্যাতন করা হচ্ছে। ভারতের পত্র-পত্রিকাগুলোতে, আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে এমনভাবে লেখা হচ্ছে যেন বাংলাদেশে এখন এ ধরনের সব নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটছে। আসলে তা না, কারা এগুলো করছে? কেন করছে? আমি এ কথাটা এজন্য বলছি যে, এই আনন্দে আমাদের চিন্তামুক্ত থাকার অবকাশ নেই যে, আমরা জিতে গেছি, সব হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের মাথার ওপরে সেই খড়গ এখনো আছে এবং চতুর্দিকে তারা চেষ্টা করছে আবার অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার। এজন্য খুব সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। কোনো রকম হঠকারিতা, বিশৃঙ্খলা যাতে কেউ করতে না পারে সেটাকে রুখে দিতে হবে, এটা হচ্ছে একটা বড় কাজ।
ছাত্রসমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে ভারাক্রান্ত করতে চাই না। কারণ নিঃসন্দেহে তোমরা নতুন স্বপ্ন দেখছো, নতুন পৃথিবীর দেখছো। সবচেয়ে বড় বিষয়টা তোমরা চিন্তা করছো- এর পরে কি? হ্যাঁ এটাই তোমাদের চিন্তা করতে হবে। এখন এই বাংলাদেশকে তৈরি করা, এখন এই বাংলাদেশটাকে গড়ে তোলা।
মির্জা ফখরুল বলেন, শেষ করে দিয়ে গেছে ওরা (আওয়ামী লীগ)। কোথাও কোনো অবশিষ্ট রাখেনি, একেবারে লুটপাট করে আমি সবসময়ে আমার বক্তৃতার মধ্যে বলতাম মেঠো ভাষায় ফোকলা করে দিয়ে গেছে। অর্থনীতি নেই, ব্যাংক লুট, সব জায়গায় লুট, ঘুষ, দুর্নীতি সমাজটাকেই শেষ করে দিয়ে গেছে। এ বিষয়গুলোকে আমাদের বন্ধ করতে হবে, আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জনগণ যদি রুখে দাঁড়ায় কোনো শক্তি নেই সেটাকে কেউ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
আমার অনুরোধ- তোমরা ছাত্র, তোমরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছ, তোমরা অংশীদার, তোমরা এই বিষয়গুলোর দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবে। কেউ যেন আমাদের অর্জিত সম্পদ কেড়ে না নিতে পারে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমার নাতনিও বলে, হাসিনা পলাইছে, হ্যাঁ জিজ্ঞাসা করলে বলে হাসিনা পলাইছে, হাসিনা পালিয়েছে না, হাসিনা পলাইছে, এই পলাইছে কথা চালু করতে হবে জোর করে। এটা এজন্য বলা দরকার, এ ধরনের ফ্যাসিস্ট, এ ধরনের নির্যাতনকারী, এ ধরনের নিপীড়নকারী, এ ধরনের খুনি, এ ধরনের হত্যাকারী তারা পালিয়ে যায়। সেই জায়গাটা আমরা পার হয়েছি। এখন একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে দেশের জন্য কিন্তু চারদিকে আবার অন্ধকার আসছে। এটা তোমরা ভালো করে জানো। আমি ভীষণ কষ্ট পাই যখন দেখি যে, আমার ছেলেরা ছেলেরা মারামারি করছে। যখন তুমি এতো বড় একটা বিজয় অর্জন করলে, একটা ফ্যাসিস্টকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিলে, একটা ইতিহাস সৃষ্টি করলে সে সংঘাত আমাদের দেখতে হবে যে, আমরা সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও মোল্লা কলেজের ছাত্ররা মারামারি করে রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে। এটা তো কোনো মতেই গ্রহণযোগ নয়।
তিনি আরও বলেন, এটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র এবং তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এদের বুঝানো ‘দিস ইজ নট দ্য ওয়ে...’ এটা রাস্তা নয়। আমি আবারও খুব ভীত হই যখন দেখি ইসকনের নামে, ধর্মের নামে একজন আইনজীবী নিহত হয়ে পড়ে থাকে রাস্তায়। এই বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাইনি। আমরা তো একটা নতুন জায়গায় এসেছি, নতুন স্বপ্ন দেখছি, নতুন দিগন্ত দেখছি সেখানে এ ধরনের ঘটনা আমরা দেখতে চাই না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা লাখ লাখ ছাত্রদের মিছিল নিয়ে বেরিয়ে এসেছে যে, আমরা শান্তি চাই, আমরা এই ধরনের ঘটনা দেখতে চাই না, ইতোমধ্যে অনেকে প্রতিবাদ করেছে। আমি বয়স্ক মানুষ, জীবনের প্রায় শেষ সময় এসে গেছি, একটাই অনুরোধ- আমরা যেটা অর্জন করেছি সেটা যেন আমাদের বৃথা না যায়।
এসময় ছাত্র সমাজকে ভ্যানগার্ড হিসেবে অভিহিত করে তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
ঠাকুরগাঁওয়ের উন্নয়নে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ছাত্রদের কাজ করা এবং ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য কাজ করা পরামর্শ দেন তিনি।
সংগঠনের সমন্বয়ক মিলন মাহমুদের সভাপতিত্বে কনভেনশনে আরও বক্তব্য দেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শরিফ উদ্দিন আহমেদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হোসেন শাহরিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমির হোসেন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরফান আলী, অধ্যাপক এসএম মাহবুবুর রহমান, তেজগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যাপক সোলায়মান আলী, বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য জেড মোর্তুজা চৌধুরী তুলা, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহম্মেদ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন