পতিত স্বৈরাচার পেছন থেকে আবারও দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে অভিযোগ করে সবাইকে সর্তক থাকা এবং ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীতে গত দুদিনে সহিংস ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে কোমলমতি বালক ও ছাত্ররা যেসমস্ত কাজ করছে তাদের এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে, এটা একটা অন্তর্বর্তী সরকার, এই সরকারের পক্ষে সবকিছু একসঙ্গে করে ফেলা সম্ভব নয়। সংস্কার করে আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। যেটা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক সাহেব বলেছেন। কেন নির্বাচনে যেতে চাই এই কথা আমি বারবার বলেছি। নির্বাচন ছাড়া এ ধরনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়, এই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। একমাত্র নির্বাচিত সরকারই পারে এই সমস্ত সমস্যা সমাধান করতে। অন্তত তার পেছনে যে জনশক্তি থাকে, যে ম্যান্ডেট থাকে সেই ম্যান্ডেট নিয়েই সেটা তার পক্ষে করা সম্ভব হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে দেশের চারদিকের অবস্থা দেখে অনেকে একটু আতঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন হচ্ছেন, এগুলো কি হচ্ছে? আসলে আপনাদের বুঝতে হবে, আমাদের সেই শত্রুরা যারা সামনে থেকে চলে গেছে তাদের পেছনে থেকে তারা দেশকে আবার অস্থির করে তুলছে। এখানে আমাদের অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। দুর্ভাগ্য আমাদের, আমাদের দেশের মানুষরা কেনো জানি না সহনশীলতার অভাব হয়ে গেছে। ধৈর্য ধরতে হবে। আজকে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। কারণ এই সরকার ফেল করলে অভ্যুত্থান ফেল করে যাবে, বিপ্লব ফেল করে যাবে… আমরা আবারো সেই অন্ধকারে চলে যাবো। সুতরাং এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার মনে হয় আপনাদের পজিটিভ চিন্তা করা প্রয়োজন।
রাজধানীর হোটেল লেকশোরে ‘তারেক রহমান : পলিটিক্স এন্ড পলিসিস কনটেমপরারি বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের এই প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। লেখক মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে নিউইয়র্কের ‘উড ব্রিজ’। অনুষ্ঠানস্থলে গ্রন্থটি এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ৫৭১ পৃষ্ঠার গ্রন্থে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জীবন-কর্ম-রাজনীতির নানা দিক বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় আঘাত রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, জরুরি একটা বিষয়ে আমি বলতে চাই, দুর্ভাগ্যক্রমে আজকে একটা ভয়াবহ কাজ শুরু হয়েছে, যেটা হচ্ছে সংবাপত্রের ওপর আঘাত, স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে আঘাত। যার জন্যে আমরা সব সময় সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি। বেগম খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে তিনি প্রথম সংবাদপত্রকে মুক্ত করেছিলেন। বণিকবার্তার সম্পাদক আমাকে বলছিলেন, আপনারা এই বিষয়টাকে জোরে বলেন না কেনো যে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছে খালেদা জিয়ার সময়ে, বিএনপির সময়ে এটা হচ্ছে বাস্তবতা। আজকে যখন দেখছি, কিছু সংখ্যক হঠকারী, কিছু সংখ্যক উসকানিদাতা তারা বিভিন্নভাবে এই সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে বিঘ্নিত ও ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন যেটা কোনোমতেই সচেতন ও দেশপ্রেমিক মানুষের মেনে নেওয়া উচিত নয়। আমি অনুরোধ জানাব- সংশ্লিষ্ট সকলকে যে, অনুগ্রহ করে এই ভয়াবহ আত্মহননের কাছ থেকে সরে আসুন এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার জন্য সহযোগিতা করুন।
তারেক রহমান জীবন্ত ইতিহাস মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি প্রায় সবসময় এই কথাটা বলি, ইচ্ছা করলেই, চেষ্টা করলেই কাউকে ম্লান করে দেওয়া যায় না, উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ইতিহাসকে বিকৃত করা যায় না। কিউবার ফিদেল কাস্ট্রো তিনি যুদ্ধ করতেন প্রথম দিকে সেই যুদ্ধের সময়ে তিনি বাতিস্তার হাতে গ্রেপ্তার হলেন। গ্রেপ্তারের পরে তার বিচার হলো সেখানে ১২ বছর সাজা হয়েছিলো। সেই সময়ে কাস্ট্রো বিচারকদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘কনডেম মি ডাজেন্ট মেটার হিস্ট্রি উইল এবজোরড মি’ আমাকে তোমরা এখন কনডেম করতে পারো কিন্তু ইতিহাস আমাকে ধারণ করবে। সেই ইতিহাস ধারণ করেছে জিয়াউর রহমানকে, বেগম খালেদা জিয়াকে, তারেক রহমানকে। ইনশাআল্লাহ জীবন্ত ইতিহাস তারেক রহমান। আমাদেরকে আলোকিত বাংলাদেশে দিকে তিনি নিয়ে যাবেন এই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। সুদূর প্রবাসে থেকে দলকে সংগঠিত করে এবং দলের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের নেতৃত্বে প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব।
তারেক রহমানসহ জিয়াউর রহমানের পরিবারের ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের নির্মম নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একটা পরিবারের ওপরে কি পরিমাণ অত্যাচার-নির্যাতন হতে পারে, একটা ইয়াং সম্ভাবনাময় নেতা তার ওপরে কিভাবে নির্যাতন হতে পারে তা এই জিয়া পরিবারকে এবং তারেক রহমান সাহেবকে না দেখলে আমরা বুঝতে পারব না। তার (তারেক রহমান) উপরে নিদারুণভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন হয়েছে। অথচ দেখেন এই নেতা তিনি কখনো থেকে যাননি এবং মাথানত করেননি। মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে, মিথ্যা মামলায় বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার পরে তিনি সেখানে চিকিতসা নিয়েছেন এবং ইতিমধ্যে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলো তখন বিএনপির নেতৃত্বে কে আসবে এটা অনেকের মনে চিন্তা ছিলো। অনেকে ভাবছিলেন যে, আমাদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এই দায়িত্ব নিতে পারবেন কিনা? কিন্তু তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে অতি দ্রুত সমস্ত পার্টিকে সংগঠিত করে মহান একটা ছাত্র-জনতার বিপ্লব অভ্যুত্থান ঘটাতে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মধ্যে যে অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা আছে, তার মধ্যে যে অসাধারণ গণতান্ত্রিক মন আছে আমরা যারা তার সঙ্গে কাজ করছি তারা সবসময় বুঝতে পারি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে ও সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারজানা শারমিন পুতুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সাংবাদিক শফিক রেহমান, চারুকলা ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক কামরুল আহসান, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, গবেষক মোবাশ্বর হোসেন, শরীফুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতা মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, রুহুল কবির রিজভী, আবদুস সালাম আজাদ, মাহদী আমিন, আনোয়ার হোসেন খোকন, সেলিম রেজা, শামা ওবায়েদ, আফরোজা আব্বাস, বাসস পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, কূটনীতিক ও বিএনপির বিভিন্ন স্তরের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন