অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা তো হবেন বিপ্লবী। তাদের চেতনা থাকবে অত্যন্ত গতিশীল। তা না করে বাংলাদেশে কি আর কোনো উপযুক্ত লোক নেই সরকার চালানোর জন্য যে তাদেরই বাছাই করে নিয়ে আসতে হবে তারা এখন তাদের পছন্দমত কাজ করছেন- এটা হয় কি করে? গণবিছিন্ন মানুষ কোনো দিনই জনগণের উপকারে কাজে লাগে না, গণবিচ্ছিন্ন মানুষ কখনোই কল্যাণকামী এবং বিপ্লবী কোনো কাজ করতে পারে না।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে গণঅভ্যুত্থানে রিকশাচালকদের হত্যার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ সমাবেশটির আয়োজন করেন সাধারণ রিকশাচালকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- ব্যাংক-বীমায় নির্বাচন করে হচ্ছে শ্রমিকরা, শ্রমিক-কর্মচারীর একটি সংবাদ দেখলাম অফিসার কল্যাণ সমিতি না কি যেন একটা কল্যাণ সমিতি নির্বাচন করেছে সেখানে আওয়ামী লীগের সমর্থিত লোকেরা বিজয়ী হয়েছে। এটা কি করে সম্ভব? বিগত ১৫ বছরে হয়তো ছাত্রলীগ-যুবলীগ দেখে দেখে অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে, সবকিছু নিয়োগ করা হয়েছে। আবার তারা ইউনিভার্সিটির মতো ইউনিভার্সিটিতে যেমন সাদা দল আছে, নীল দল আছে, তেমনি তারা আবার রং-বেরঙের সেখানে বিভিন্ন সংগঠন করছে সেখানকার অফিসাররা। আমিও ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলাম- আমি কখনোই ব্যাংকের অফিসারদের এমন সংগঠন দেখিনি। কিন্তু সেখানে নীল দল, সাদা দল কোনো রাজনৈতিক দলের সংগঠন থাকে আমরা জানি না। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সাহেব আপনি মাঝে মাঝে দেখি আন্দোলনের যে স্পিড সে অনুযায়ী কথা বলেন- সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ কিন্তু আপনার ওখানে কি হচ্ছে, কারা এরা? কারা এখানে এই নির্বাচন করছে? আবার তারা ফলাও করে বলছে তারা নাকি আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দল সেখানে জিতেছে। ঘাপটি মেরে ব্যাংকের টাকাগুলো পাচারের ক্ষেত্রে এ লোকগুলোই জড়িত আছে। এদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয়েছে ১৫-১৬ বছর ধরে, তারা এখনো ভেতরে ষড়যন্ত্র করছে- আপনি তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? এর কারণ কি?
রিজভী বলেন, আজকে সালমান এফ রহমান, আজিজ খান একের পর এক যারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে আর সেই কলাগাছ হয়েছে তারা ন্যায়-নৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে নয়, তারা হয়েছেন অনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে। শেখ হাসিনা যাদের আনুকূল্য দিয়েছেন তারাই আজকে লুটেপুটে, চেটে টাকা পাচার করে আজকে কেউ কেউ বিদেশে অবস্থান করছেন। এই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তিনি সুযোগ দিয়েছিলেন তোমরা মার, ধরো, লুটপাট করে, কিন্তু আমাকে তোমরা ক্ষমতায় রাখ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আলুর কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এখনো যদি থাকে তাহলে মানুষের যে বিশ্বাস যে আস্থা সেই আস্থা বিশ্বাস তো কমতে থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি। আজকে ডিম, তেল এগুলোর দাম এখনো কয়েকটি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। সে কোম্পানিগুলোকে আপনারা ধরছেন না কেন? এই সিন্ডিকেটবাজদের আপনারা ধরছেন না কেন? কেন ডিমের দাম এখনো আকাশচুম্বী থাকবে? কেন সয়াবিন তেলের দাম এখনো আকাশচুম্বি থাকবে? এই যে নিম্ন আয়ের মানুষ কৃষক, সিএনজিচালক আগে যেমন ছিল এখনো তাই থাকছে- কেন এই পরিস্থিতি হবে? এখন তো মানুষ একটু সুখের মুখ দেখবে, সেই সুখের মুখ এরা যদি না দেখে এই যে গণতান্ত্রিক চেতনা, এই যে আত্মত্যাগ, এই যে রক্তপাত, এই যে তাদের অকাতরে জীবন দেওয়া- এটা তো সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হবে। আর কয়েকটা আপনার সুখে থাকা উপদেষ্টারা এসে বড় বড় কথা বলবে আর তারা নিজের মতো করে যা ইচ্ছা তাই করবে- এটা তো চলতে দেওয়া যায় না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, অনেকেই দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিলেন শুধু চাচা, মামা, খালু অথবা ছাত্রজীবনে বিরোধী দলের ছাত্র রাজনীতি করেছেন বলে যারা ক্যাডার সার্ভিসে এএসপি ছিলেন তারা এএসপিই থেকে গেছেন। তারা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থাৎ ড. ইউনূস সাহেবের সময় হয়তো প্রমোশন পেয়ে একটা জায়গায় আছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যারা বঞ্চিত ছিল, যাদের প্রমোশন হয়নি, পদোন্নতি হয়নি- তাদের উপরই বেশি অ্যাটাক করা হচ্ছে। কোনো কোনো উপদেষ্টা এ জিনিসটা করছে। আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি- ছাত্রজীবনে হয়তো ছাত্রদল করেছে কিন্তু সে তো মেধার জোরে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসেছে। গত ১৫-১৬ বছরে তাদের কোনো পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এখন তো তাদের একটি জায়গায় থাকার কথা। কিন্তু চুপচাপ ঘাপটি মেরে থাকা আন্দোলন সংগ্রামের কোনো স্পিরিটের সঙ্গে যাদের কোনো সম্পর্ক নেই আমি শুনি তারা সুশীল সমাজের লোক। তারা হচ্ছে গুণীজন তাই তাদের উপদেষ্টা করা হয়েছে।এই গুণীজন উপদেষ্টারা তারা তো চাকরিজীবীর মতো কাজ করছে।
আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে জানিয়ে রিজভী আরও বলেন, আমি এবং বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গত ৪-৫ দিন আগে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম। দেখলাম এখনো অনেকেই হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। কারো পিঠের চামড়া খুলে গেছে, কারো পা নেই, কেউ কেউ অন্ধ হয়ে গেছেন- এদের দায়িত্ব কি রাষ্ট্র নিবে না?এদের দায়িত্ব তো রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ।
মন্তব্য করুন