আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যদি এই গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হতো তাহলে আমরা যারা আন্দোলনে ছিলাম, ছাত্র জনতা যারা বিপ্লবে শামিল হয়েছে, সবাইকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা নিশ্চিহ্ন করে দিত। শত সহস্র জীবন ও রক্তসাগর পেরিয়ে যে অর্জন তার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়তে হবে।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) চট্টগ্রামে এবি পার্টির উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ ও আহতদের স্মরণ ও আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা জেলে ঢুকাতে চেয়েছিল, আল্লাহর কি মর্জি তিনি আজ বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময় কাঁচামরিচের কেজি ছিল ১২০০ টাকা। ব্যাংক লুট করে কানাডা, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় বেগম পাড়া, হোটেল ও মার্কেট বানানোর বিষয়টি উপস্থিত জনসাধারণকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন; দেশের আজ যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই সব শূন্য। ব্যাংকে আপনাদের যে টাকা আছে তা তুলতে পারবেন না।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার এই ত্যাগ আমরা ভুলে যেতে পারি না। বাংলার জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাধ্যমে আমরা আহত ও নিহতদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করব।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ না করেও আওয়ামী লীগ যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের একক দাবিদার হয়ে বাংলাদেশকে বিভক্ত করেছিল, বর্তমানেও অনেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিজের অবদান দাবি করে জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করছে। সবাইকে এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এবি পার্টি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি, এই নতুন যাত্রায় আমরা একটি সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ এবং সমতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ উপহার দিতে পারব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এবি পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
এবি পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক লে. কর্ণেল অব. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও অনিরাপদ রাখবো না। ছাত্র জনতা, সেনাবাহিনী থাকতে বাংলাদেশে আর ফ্যাসিস্ট আমল ফিরে আসতে দেওয়া হবে না। আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এনায়েত উল্লাহ পাটোয়ারী বলেন, পত্রিকায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় আহতদের আহাজারি দেখতে আমাদের ভালো লাগে না। অবিলম্বে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবি পার্টির চট্টগ্রাম উত্তর জেলার ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক সাংবাদিক জিয়া চৌধুরী এবং মোরশেদ চৌধুরী।
এসময় বক্তব্য রাখেন- এবি পার্টির কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্যসচিব ইঞ্জিনিয়ার লোকমান, চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্মআহ্বায়ক এবং কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্যসচিব ছিদ্দিকুর রহমান, বিএনপি ফটিকছড়ি উপজেলার সভাপতি কর্ণেল অব. আজিমুল্লাহ বাহার, ছাত্র পক্ষের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মুহাম্মদ প্রিন্স, এবি পার্টির হাটহাজারী উপজেলার নেতা মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, বোরহান উদ্দিন, ছাত্র নেতা আব্দুল কাদের, এবি পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার যায়েদ হাসান চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহকারী সদস্য সচিব আব্দুর রহমান মনির, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ সোহরাব হোসেন পিয়াস, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হাটহাজারী উপজেলার প্রতিনিধি ইয়াকুব ওয়াসিব, আর্কিটেক্ট তানভীর মাসুদ, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধা সামিন রহমান, মো. সাইম, দিলদার, আব্দুল আলিম, মাইমুন নূর চৌধুরী, তামিম, সিনান, শহীদ ইউসুফের স্ত্রী, শহীদ জামালের স্ত্রী, মির্জাপুর রুপায়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক জীবন বড়ুয়া, কুলগাঁ সিটি করপোরেশন স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক আবু রাহেল ফয়সাল।
স্মরণ, দোয়া ও আলোচনা সভায় হাটহাজারী উপজেলার কৃতিসন্তান কর্ণেল অব. দিদারুল আলমের পক্ষ থেকে আহত ও শহীদ পরিবারকে সম্মাননা ও বিপ্লবী স্বারক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে মনমুগ্ধকর দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন হাটহাজারী শাস্ত্রীয় সংগীত নিকেতন এর শিল্পী সুমন দে ও তার দল।
মন্তব্য করুন