বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, কোনো দিন যদি আল্লাহ তায়ালা দেশের খেদমত করার দায়িত্ব আমাদের হাতে তুলে দেন, আমরা প্রবাসীদের লাশ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশে আনার ব্যবস্থা করব। আমরা এটাকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে মনে করব।
সম্প্রতি লন্ডনের রয়্যাল রিজেন্সিতে বাংলাদেশি প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবদুল বারি’র সভাপতিত্বে এবং পরিষদের সেক্রেটারি সৈয়দ আহবাব হোসেন পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় জামায়াতে ইসলামীর আমীর আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা মারা গেলে তাদের লাশগুলোর কি হবে? এটা নিয়ে রাষ্ট্রের চিন্তা করা উচিত। তারা যা রুজি করে প্রায় সবই দেশে পাঠিয়ে দেয়। এখানে মারা গেলে তাদের লাশ দেশে পাঠানোর জন্য তারা কোনো ডিপোজিট করে রাখতে পারে না। আমরা মুখে মুখে শুধু গালভরা বুলি দিয়ে তাদেরকে ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’ বলি। বাস্তবে তাদের জন্য যা করা উচিত আমরা তা করতে পারছি না। পশ্চিমের দেশগুলোতে যারা সিটিজেনশিপ পেয়েছেন, তারা মারা গেলে আদের লাশ আর দেশে যাচ্ছে না। কারণ তাদের পরিবার এখানে এবং আল্লাহ তায়ালার হুকুম হচ্ছে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার লাশ খুব দ্রুত দাফন করা উত্তম।
তিনি প্রবাসীদের দেশে ইনভেস্টের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রবাসীরা দু’ভাবে দেশের কল্যাণ করতে চান। একটা হলো দান খয়রাতের মাধ্যমে আরেকটা হলো ইনভেস্টের মাধ্যমে। দান খয়রাত করতে গেলেও অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। আপনি একটা ব্যবসা করবেন তাও কত ঘাটের পানি খেতে হয় তার কোন শেষ নেই। অথচ আমরা ইনভেস্ট করার আহবান জানাচ্ছি। ইনভেস্ট করার একটি পরিবেশ তো থাকতে হবে। সেই পরিবেশ তৈরীতে এই সরকারের সৎ ইচ্ছা আছে। এ সময়ের মধ্যে তারা হয়তো সবকিছু করতে পারবে না। আমরা আশা করি তারা অন্তত একটা রাস্তা দেখিয়ে যাবেন। তা হলে পরে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা আগামীতে সে পথে চলতে বাধ্য হবেন। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল না। অনেকে ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে ধ্বংস করে আবার অনেকে ক্ষমতায় না গিয়েও সৎ ইচ্ছা থাকার কারণে তারা দেশ ও জাতির জন্য অনেক কিছু করে। আপনারা আমানত হিসেবে আমাদের ওপর আস্থা রাখলে, আমাদেরকে ভোট দেওয়া উপযুক্ত মনে করলে আমরা দেশ ও জাতির সেবায় সর্বদা নিজেদের নিয়োজিত রাখব।
জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দিন শেষে বাংলাদেশই আমাদের সব। এখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণে টুকরা টুকরা করলে আমরা অবশ্যই ভালো কিছু করতে পারবো না। অনেকেই ম্যানপাওয়ারকে অভিশাপ দিচ্ছেন। কারণ আমরা আমাদের সন্তানদের হাতকে কাজে পরিণত করি না। আমরা স্কিল ডেভলেপমেন্ট করি নাই। আমরা কাগজ বিতরণ করি একটার পর একটা, বছরের পর বছর। সে কাগজগুলো ইনভেলিড, এগুলো কথা বলে না। আমরাতো আমাদের বাচ্চাদের হাতগুলোকে কর্মীর হাত বানাইনি। এভাবে যদি স্কিলফুল হাত আমরা তৈরী করতে পারি তা হলে এই বিশাল ম্যানপাওয়ার কখনো অভিশাপ হবে না।
যারা কর্মঠ, যাদের সৎ সাহস আছে তাদেরকেই সত্যিকারের তারুণ্য বলা যায় উল্লেখ করে ডা. শফিক বলেন, আমরা এই ধরনের তরুণদের হাতে আজ দেশকে তুলে দিতে চাই। আপনারা আজকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন তার প্রতিদান দেওয়ার শক্তি আমার নেই। আমি আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেনো আপনাদের এই ভালোবাসার প্রতিদান দেন।
জামায়াতের আমীর আরও বলেন, আল্লাহ যেটা এ জাতির জন্য উত্তম মনে করেন আল্লাহর কাছে আমরা সেটাই চাই। আল্লাহর কাছে আমাদের কোন বায়না নেই। আমরা আল্লাহর কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করতে পারি, এরচেয়ে বেশী কিছু না। আমরা সেটাই আল্লাহর কাছে চাই।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ব্যরিস্টার আবু বকর মোল্লা, পরিষদের সহ সভাপতি ফয়েজুর রহমান, সাবেক সভাপতি আশিকুর রহমান, পরিষদের উপদেষ্টা সাগীর বাগত ফারুক, সানা উল্যাহ, কাউন্সিলর ফারুক চৌধুরী, সহ সভাপতি আয়েশা চৌধুরী, ট্রেজারর আবদুল হালিম চৌধুরী এবং আবু নাছের মু. মুজাহিদ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন