আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৫-১৬ বছরের শাসনামলে যুবলীগ-ছাত্রলীগ মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, যুবলীগ-ছাত্রলীগ যে দিক দিয়ে হেঁটে যেত, মানুষ সে দিক দিয়ে যেতেও ভয় পেত।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানার নারিন্দাতে প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের নির্দেশনায় ‘বিনামূল্যে চক্ষুসেবা ক্যাম্প’ এর উদ্বোধনের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এ কথা বলেন।
গত জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে চক্ষু হারানো ও চক্ষু ক্ষতিগ্রস্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষের চক্ষু সেবার উদ্দেশ্যে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর উদ্যোগে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এই চক্ষুসেবা ক্যাম্প পরিচালিত হয়।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা তার শাসনামলে এমন বন্য আইন, এমন শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন যে, তখন একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে দেখলে ভয় পেত; একজন বন্ধু আরেকজন বন্ধুকে দেখলে ভয় পেতে। যুবলীগ-ছাত্রলীগ ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। তারা যে দিক দিয়ে হেঁটে যেত, মানুষ সে দিক দিয়ে যেতে ভয় পেত। মানুষ ফিসফিস করে কথা বলতো, নিরবে কথা বলতো। তারা ভাবতো- আমাদের কথা যদি ছাত্রলীগ-যুবলীগ জেনে যায়, তাহলে আমাদের বাড়ি- ঘরে আক্রমণ করবে অথবা পুলিশ-র্যাব এসে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে চিরদিনের জন্য নিরুদ্দেশ করে দিবে।
তিনি বলেন, সারাদেশকে একটা বিকলাঙ্গ দেশে পরিণত করেছিলেন শেখ হাসিনা। সারাদেশেই শুধু রক্ত ঝরেছে। সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, হাসপাতালে হাসপাতালে কাতরিয়েছে। অনেকে হাসপাতালে যেতেও ভয় পেত। কারণ, হাসপাতালে এসেও আক্রমণ করেছে শেখ হাসিনার ক্যাডাররা।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, অন্যায় এবং পাপ যে বেশিদিন টিকতে পারে না, এটার যে পতন হয়- ইতিহাস থেকে শেখ হাসিনা এই শিক্ষা গ্রহণ করেননি। এ কারণে তাকে আজকে বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে হয়েছে, পালাতে হয়েছে। তার মধ্যে যদি সত্যিকারের দেশপ্রেম থাকতো, তিনি যদি ভাবতেন যে- আমি যদি বাড়াবাড়ি করি, আমি যদি টাকা পাচার করি, মানুষের টাকা আত্মসাৎ করি, তাহলে একদিন না একদিন আমাকে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে, আমার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হবে, নিজ দেশে আমি টিকে থাকতে পারবো না। এইটা যদি শেখ হাসিনা মনে করতেন, তাহলে আজকে শেখ হাসিনার এই পরিণতি হতো না।
তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে যারা এই লুটপাটের সাথে জড়িত- তারাই শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ লোক। এস আলম নামে একজন ব্যক্তিকে বাংলাদেশের নয়টি ব্যাংক দিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তিনি নিজেই সেই ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এই ছিল বাংলাদেশের পরিস্থিতি, এইভাবে ১৫-১৬ বছর শেখ হাসিনা রাজত্ব করেছেন। তিনি ভেবেছিলেন, তাকে কেউ বাংলাদেশ থেকে বের করতে পারবে না। তিনি আজীবনের জন্য এখানে ক্ষমতায় থাকবেন। তিনিম তার পুত্র জয়, কন্যা পুতুল, বোন রেহানা- তারা যেন একটা রাজপরিবার হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই-আগস্টে যে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, সেখানে শেখ হাসিনা কল্পনাই করতে পারেননি যে, তাকে এত প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হবে- তিনি এটা চিন্তাও করতে পারেননি। তিনি ভেবেছিলেন- তার পাশে আছে ভারত এবং বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী র্যাব-পুলিশ। এখানে বেনজীর আছে, মামুন আছে- আরও তার কত পুলিশ অফিসার আছে, যারা নির্দেশ দেওয়ার আগেই নিরীহ মানুষদের উপর গুলি চালাতেন, ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যা করতেন। বিএনপি-ছাত্রদলের কত ছেলে যে ক্রসফায়ারে মারা গেছেন, কত ছেলে যে গুম হয়েছেন-তার ঠিক নেই। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরুর মতো যারা অনেকেই এমপি ছিলেন- তাদেরকেও নিরুদ্দেশ করা হয়েছে।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহবায়ক সিনিয়র সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন- বিএনপি’র কোষাধ্যক্ষ ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহবায়ক রফিকুল আলম মজনু, বিএনপি নেতা ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. এম এ মুহিত প্রমুখ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, সদস্য মাসুদ রানা লিটন, মুস্তাকিম বিল্লাহ, ছাত্রদল নেতা শারিফুল ইসলাম, মশিউর রহমান মোহান ও স্থানীয় বিএনপির নেতারা।
মন্তব্য করুন