ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সঙ্গী-সাথী ফেলে স্বার্থপরের মতো পালিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর বনানীতে এক চক্ষুসেবা ক্যাম্পের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’- এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের নির্দেশনায় জুলাই গণআন্দোলনে চক্ষু হারানো, চক্ষু ক্ষতিগ্রস্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষের চক্ষু সেবার উদ্দেশ্যে প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিনামূল্যে এই চক্ষুসেবা ক্যাম্পের আয়োজন করে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’।
রিজভী বলেন, কয়েকদিন আগে তারা নূর হোসেন দিবসে ঢাকা শহর না কি উথাল-পাতাল করে দিবে। ওইদিন আমাদের দলের নেতাকর্মীরা কয়েকটি মিছিল করেছে; ওদের মতো তো মোড়ে মোড়ে বন্দুক নিয়ে পাহারা দেয়নি। তারপরও তো ওদের কোথাও দেখা যায়নি। কই যুবলীগ? কই ছাত্রলীগ? কারণ শেখ হাসিনা তাদের লুটপাটের জন্য তৈরি করেছিলেন। ফরিদপুরের ছাত্রলীগের নেতা দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছিলেন। শেখ হাসিনা তার নেতাকর্মীদের বলেছিলেন তোরা যত পারিস লুটপাট কর কিন্তু বিএনপিকে বের হতে দিবি না, বের হলেই হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়বি। এটাই ছিল শেখ হাসিনার নীতি। এর পরিণাম হয় ভয়াবহ, তাই হয়েছে। সঙ্গী-সাথী ফেলে দিয়ে স্বার্থপরের মতো পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার মতো একজন রক্তপিপাসুর এই দেশে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের আর কোনো সুযোগ নেই। আপনি শিশুদের রক্ত পান করা একজন রক্তপিপাসু নারী। আপনি যে পাপ করেছেন, যে হত্যালীলা চালিয়েছেন, এর জন্য হয় আল্লাহর কাছে মাফ চান, না হলে চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত হয়ে থাকবেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এই শেখ হাসিনা শুধু নিজের ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব তিনি পার্শ্ববর্তী দেশের কাছে জিম্মি করে দিয়েছিলেন। এখন জনগণের একটাই দাবি, শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ৫ আগস্ট, ২০২৪ পর্যন্ত যত চুক্তি করেছে, সেই চুক্তিগুলো অন্তর্বর্তী সরকার প্রকাশ করুন। তিনি (শেখ হাসিনা) দেশের কত বড় ক্ষতি করে গেছেন, তার প্রমাণ তো আমরা দেখতে পাই।
ভারতের আদানির সঙ্গে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিদ্যুৎ চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি ছিল অত্যন্ত অসম চুক্তি, অত্যন্ত অন্যায় চুক্তি। আদানির কাছ থেকে যে বিদ্যুৎ কেনা হয়, সেটা এক ইউনিটের দাম ১২ টাকা। পৃথিবীর কোথাও এত দাম দিয়ে বিদ্যুৎ কেনা হয় না। তিনি (শেখ হাসিনা) আদানির সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন একটা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে; তাকে যদি কখনো পালাতে হয়, তাহলে আদানি তাকে অর্থায়ন করবে। জনগণের কল্যাণের জন্য শেখ হাসিনা আদানির সঙ্গে কোনো চুক্তি করেননি। না হলে আদানি কেন হুমকি দিবে?
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার কোনো দেশপ্রেম ছিল না। তার ছিল ভারতপ্রেম। ওই একটাই প্রেম ছিল শেখ হাসিনার। কারণ তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। সুতরাং তার প্রেম কার সঙ্গে ছিল এইটা জনগণ জানতো এবং বুঝতো।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, আপনাদের তো সমস্ত গণতান্ত্রিক দল, ছাত্র, সংগঠন সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো দেখতে পাই, স্বাস্থ্য বিভাগে যারা অন্যায় করেছেন দীর্ঘদিন- তারা এখনো রয়েছেন। এটা একটা টেকনিক্যাল খাত- এখানে ডাক্তার যিনি হবেন তিনি তার যোগ্যতা দিয়ে হবেন। তিনি ভালো ডাক্তার কি না, তিনি উন্নতমানের চিকিৎসক কি না, সেটা আওয়ামী লীগ বিবেচনা করেননি। যদি কোনো ডাক্তারের বাবা, চাচা, মামা কিংবা শ্বশুর বিএনপি করতো, তাদের কোনো পদোন্নতি হয়নি, তাদের কোথাও পদায়নও করা হয়নি। স্বাচিপ নামে আওয়ামী লীগের একটি সংগঠন আছে- আজকেও অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওই স্বাচিপের চিকিৎসকদের ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করছে। এগুলো যদি অন্তর্বর্তী সরকার না দেখে- বিপদ তো তাদেরও হবে, আমাদেরও হবে। কোনো ফাঁক দিয়ে যদি ওই দানবরা ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে, তাহলে তো অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য শুভ হবে না।
তিনি বলেন, যে মার্কেটগুলো এখনো আওয়ামী সিন্ডিকেটের কাছে, বাজারগুলো এখনো তাদের সিন্ডিকেটের কাছে- আপনারা কী তাদের একজন লোককেও ধরেছেন? একটা লোককেও গ্রেপ্তার করেছেন? আপনারা শুল্ক কমিয়েছেন, তারপরও তো পেঁয়াজের দাম কমে না, তারপরও তো আলুর দাম কমে না, চিনির দাম কমে না, আটার দাম কমে না, সয়াবিন তেলের দাম কমে না। কারণ এগুলো ইমপোর্ট করতে হয়। এই বিষয়গুলি আপনারা যদি না দেখেন, পরাজিত ফ্যাসিস্টরা নানাভাবেই মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে এবং মাঝে মাঝেই আওয়াজ দিবে, ভূত-পেত্নির মতো আওয়াজ দিচ্ছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সহবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’- এর আহ্বায়ক সিনিয়র সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন