আওয়ামী লীগকে ক্যানসেল (বাতিল) করতে হলে জনগণের ভোটের মাধ্যমে করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আপনি যদি আওয়ামী লীগকে ক্যানসেল করে দিতে চান অন্য কোনোভাবে, এগুলো টিকে থাকে না। ফ্যাসিস্টকে ক্যানসেল করবেন ভোটের মাধ্যমে চরমভাবে পরাজিত করে। অন্য কোনোভাবে ক্যানসেল করলে কোনো সুফল বয়ে আনে না।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ : নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। আয়োজন করে ভয়েস অব ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ভোটার রাইটস।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির জন্য সংস্কার নতুন কিছু নয়। খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে ভিশন ২০৩০ সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল। তারেক রহমানও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দলের মতামতের ভিত্তিতে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন। শুধু সবাইকে নিয়ে নয়, বাস্তবায়নের জন্য ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে থাকা সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণের আস্থা নিয়ে সংস্কার করবে হবে। সেটা একমাত্র সম্ভব নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে। অনির্বাচিত কোনো সরকার তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও দর্শনের সেভাবে সংস্কার করা সুযোগ নেই। যেসব সংস্কার ঐকমত্যে আছে সেগুলো বাস্তবায়নে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, জনগণকে বাইরে রেখে যে বয়ান তৈরি করা হচ্ছে তা জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবের একটা বয়ান ছিল, স্বৈরাচারের একটা ছিল এবং ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার একটা বয়ান ছিল। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বলেছিল, উন্নয়নের ওপরে গণতন্ত্র। কিন্তু উন্নয়নের সঙ্গে হাতে হাত মিলে চলতে হয়। গণতন্ত্র বাদ দিয়ে উন্নয়ন করলে হবে লুটপাট ও বিদেশে টাকা পাচার উন্নয়ন। গণতন্ত্র বাদ দিয়ে উন্নয়ন করলে পকেটের উন্নয়ন। একমাত্র বয়ান হবে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া। এর বাইরে নতুন বয়ান শুনতে চাই না।
আমীর খসরু আরও বলেন, আমরা ৩১ দফা সংস্কার বাস্তবায়ন করাতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ১৬ বছরে জ্বলে-পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। ত্যাগ-জুলুমের মধ্যে দিয়ে বিএনপি নতুন বিএনপিতে পরিণত হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা ত্যাগ করতে শিখেছে, রক্ত দিতে শিখেছে ও জীবন দিতে শিখেছে। আমরা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ভোটারধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার লড়াই থেমে থাকব না। তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা ব্যর্থ হতে দেব না। আমরা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি এবং যাব। সবাই মিলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছি। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র পক্ষের কাজ করতে হবে। হাসিনা পালনোর পর দেশের মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন হয়েছে। যে দল ও ব্যক্তি বুঝতে পারবে না, তাদের রাজনৈতিক বেশিদূর এগোতে পারবে না।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপি শুধু বিপ্লব নয়, বিএনপি সংহতি। বিএনপি জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের কথা বলছে। আমরা জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে যেটা প্রতিষ্ঠিত করব সেটাই থাকবে। তাই বিএনপি নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। স্বাধীন মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। দেশকে সঠিক ট্রাকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক সহকারী অধ্যাপক ড. এম মুজিবুর রহমান।
মন্তব্য করুন