বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, পতিত স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্রে দেশে নানা ধরনের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমরা মনে করি, দীর্ঘদিন লড়াই করে বহু সাথীর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পরিবর্তনকে সুরক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনরত সকল সংগঠনের জাতীয় ঐক্য আরও সুদৃঢ় করা দরকার। বৃহস্পতিবার (০৭ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্য অনেক চক্রান্ত করা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনরত দল এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে।
জোটের সমন্বয়ক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন- দেশে সংস্কার কার্যক্রম প্রয়োজন। এটা প্রথম বিএনপি উপলব্ধি করেছে এবং সে লক্ষ্যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটুর সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন, ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারি, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের (পিএনপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ মো. লিটন, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি এম এ মান্নান, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবু হানিফ, বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব এম এ বাশার, লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, জমিয়তের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি জাকির হোসেন, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির মহাসচিব ইমরুল কায়েস প্রমুখ। নেতারা বলেন, ৭ নভেম্বর জাতির জীবনে একটি মহান ও অতীব মর্যাদাময় বিজয়ের দিন। এই দিনে আধিপত্যবাদী শক্তির পরাজয় ঘটে। ক্যান্টনমেন্টের নিজ বাসায় গৃহবন্দি তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সিপাহী-জনতা স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মুক্ত করে আনেন। ৭ নভেম্বরের অবিনাশী চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশ আধিপত্যবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে চির জাগ্রত থাকবে। অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়কে যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে, সংহত করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত্তিকে মজবুত করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে হবে। তারা আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের হাত ধরে ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ জাতি ভয়াবহ নৈরাজ্য ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়া থেকে রক্ষা পায়। জাতি ফিরে আসে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারায়। শাহাদাত বরণের ৪৩ বছর পরেও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং তার দল বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের অবস্থান ধরে রেখেছে। নেতারা বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান বাকশালী স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্র, বাক-ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছেন, খালকাটা বিপ্লব করে দেশের কৃষিকে সমৃদ্ধির শিখরে এগিয়ে নিয়েছেন। তার সময়ে দেশে উন্নয়নের ধারা সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগ দেশ স্বাধীন হওয়ার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে গণতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা হরণ করে দেশের সব পত্রিকা নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। একইভাবে শেখ হাসিনার শাসন ব্যবস্থা ছিল বাকশালের দ্বিতীয় সংস্করণ। দেশের জনগণ মনে করে- স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তির চেতনার সঙ্গে শহীদ জিয়া মিশে আছেন, অনন্তকাল মিশে থাকবেন।
মন্তব্য করুন