বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং বিএনপির নেতৃত্বে গত ১৫-১৬ বছরের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী অপশক্তিরা এখনো দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তবে তাতে কোনো লাভ হবে না। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী অপশক্তির সকল অপতৎপরতা নস্যাৎ করে দিতে জাতি প্রস্তুত আছে। শনিবার (২ নভেম্বর) কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার দিঘিরপাড় ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন আয়োজিত ‘মানবিক, সাম্য ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণ এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফার ওপর’ অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, যে কোনো মূল্যে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে হবে। দীর্ঘ ১৬ বছরের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অর্জিত বিজয়কে সংহত ও সমন্বিত করে দেশকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের শাসন কায়েমের ধারায় এগিয়ে নিতে হবে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী অপশক্তির সকল অপতৎপরতা নস্যাৎ করে দিতে জাতি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল- শেখ হাসিনার পতনের পরে দেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। অন্তত পাঁচ লক্ষ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হবে। তাদের এই ধারণার কারণ ছিল তাদের অত্যাচার, নির্যাতন, লুটপাট, খুন-গুম ও আয়নাঘরের অসংখ্য নজিরবিহীন ঘটনা। তারা অনুমান করেছিল তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত একটি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। সৌভাগ্য, বাস্তবে ৫ জন নেতাকর্মীও মারা যায়নি। বিরোধী দল এবং অত্যাচারিত জনগণ সংযমের পরিচয় দিয়েছে।
১২ দলীয় জোটের এই সমন্বয়ক বলেন, অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়কে যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে ও সংহত করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত্তিকে মজবুত করে দেশকে সম্প্রীতির মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে হবে। সবশেষ এবং সবচেয়ে বড় অপচেষ্টা ছিল আন্দোলনমুখী দলগুলোর মধ্যে সংঘাত বাধিয়ে দেওয়া, বিশেষ করে জামায়াত এবং বিএনপিকে দুই মেরুতে নিয়ে মাঝ থেকে আওয়ামী লীগকে আবার উঠে আসার ব্যবস্থা করা। আলহামদুলিল্লাহ আওয়ামী বিরোধী শক্তিগুলো অবশেষে বুঝতে পেরে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা এবং সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনে। এই মুহূর্তে জাতি আবারো সুসংহত, সুসংঘবদ্ধ। দেশের মানুষ আবার নিরব নিরাপত্তাবোধের উষ্ণতায় উজ্জীবিত। বিজয়ী শক্তিকে বিভাজিত করার অপচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি এবং জামায়াত উভয়পক্ষই অনুধাবন করতে পেরেছে, তারা আওয়ামী অপশক্তি এবং ভারত প্রশ্নে উভয় দলই একই দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে। ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াতের ঐক্য আওয়ামী অপশক্তিকে পরাজিত করেছে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের বিচ্ছিন্নতার সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। ২০২৪ সালে একই ভুল করতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত সম্বিত ফিরে এসেছে। এহসানুল হুদা বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিরপেক্ষকরণ এবং যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়া তিনি বাজিতপুর ও নিকলির জনগণকে দেশবিরোধী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
বাজিতপুর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আনিসুর রহমান খোকনের সঞ্চালনায় ও দিঘিরপাড় ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহকোষাধ্যক্ষ মশিউর রহমান রাসেল, জেলা যুবদলের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ আলম, পিরিজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ফারুক সিদ্দিকী, পিরিজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. মুজিবুর রহমান, কিশোরগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য অ্যাডভোকেট নাসিরুজ্জামান, বাজিতপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আশরাফুল আলম আশরাফ, বাজিতপুত উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল মাহমুদ, নিকলি উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিন মাহমুদ ও আরিফ, রফিকুল ইসলাম লিটন, ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি সোহরাব হোসেন প্রমুখ নেতারা।
মন্তব্য করুন