কোনো দলকে ক্ষমতায় বসাতে কিংবা কাউকে নেতা বানাতে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেনি বলে দাবি করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে এক দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভায় এ দাবি করেন তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ এবং আহত ও নিহতদের স্মরণে গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান হয়।
ভিপি নুর বলেন, দুই হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছে, লাখ লাখ মানুষ আহত হয়েছে, রক্ত দিয়েছে। কোনো দলকে ক্ষমতায় বসাতে বা কাউকে নেতা বানাতে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেনি। ১৫-২০ দিনে মেসি-রোনালদো হওয়া যায় না। কতিপয় ছাত্র নেতার দ্বারা এতো প্রভাবিত হলে সরকারের ছয় মাস টেকা মুশকিল হয়ে যাবে। আমরা চাই না- এই সরকার ব্যর্থ হোক। এই সরকার ব্যর্থ হলে দেশ আরেকটা সংকট ও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। সরকারকে বলবো, রাষ্ট্র সংস্কার ও সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য আন্দোলনকারী সব দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করুন।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা এই সরকারকে ক্ষমতায় বসালেও আড়াই মাসেও এখনো পর্যন্ত আহতদের সুচিকিৎসা ও শহীদ পরিবারকে সেভাবে সহযোগিতা করতে পারেনি। অথচ এটি এই সরকারের প্রথম কাজ হওয়া দরকার ছিল। দুঃখ হয়, কষ্ট লাগে- সরকারের প্রতি ক্ষোভ হয়। সরকারকে পরিষ্কার বলতে চাই, আগামী এক মাসের মধ্যে নিহত পরিবারকে ১ কোটি এবং আহত পরিবারকে অর্ধ-কোটি টাকা সহযোগিতা করতে হবে। প্রয়োজনে আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠাতে হবে। জানি না- কেন মুগ্ধর ভাই স্নিগ্ধকে জুলাই ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুনছি, কতিপয় ছাত্রনেতার প্রভাবে সরকার-উপদেষ্টারা কাজ করতে পারছে না।
নুরুল হক নুর বলেন, ভারত এখনো তাদের পোষা সরকারের (বিগত আওয়ামী লীগ সরকার) পতন হজম করতে পারেনি। সমালোচনা করলেও আন্দোলন কিংবা চাপের মাধ্যমে এই সরকারকে সঠিক লাইনে রেখেই রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। রাষ্ট্র ও রাজনীতি সংস্কারের মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্র-জনতাকে নিয়ে কাজ করবে গণঅধিকার পরিষদ।
দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দোসররা কিন্তু রয়ে গেছে। দেখেন- পুলিশ, র্যাব, বিজিবির কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছে না। এগুলো কীসের আলামত? আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি যে অপরাধ করেছে, তারা আর বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না। এই যে সরকার, তাদের তো জনগণ বসিয়েছে। কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণকে কতটুকু সম্পৃক্ত করছে? আইনশৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্য কোনো কিছু তারা এখনো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এমনকি শহীদ ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণও দিতে পারেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের দূরত্ব। তারা কী করতে চাচ্ছেন, তা স্পষ্ট না। আমরা বলবো- রোডম্যাপ দিন, দলগুলোর মতামত নিন। অন্যথায় সফল হওয়া কঠিন হবে। রাষ্ট্র সংস্কার আপনাদেরই করতে হবে। সেটি না হলে এই স্বাধীনতা দ্বিতীয় বারের মতো ব্যর্থ হবে। তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে জটিলতা। কিন্তু কেন আপনারা তার হাতে শপথ নিলেন? তখনই তো ভাবা দরকার ছিল। কিন্তু সেটি না করে তড়িঘড়ি করে ক্ষমতায় বসে আজকে সংকট সৃষ্টি করেছেন। জনগণকে অন্ধকারে রেখে রাষ্ট্র সংস্কার করা যায় না। ধোঁয়াশা দূর করে সব দলকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র চালান। দলগুলো যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করেছে, তাদের ঐক্যবদ্ধ রেখে কাজ করা আপনাদের দায়িত্ব।
গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সহসভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আবির ইসলাম সবুজের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন- গণঅধিকার পরিষদের সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নেওয়াজ খান বাপ্পি, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আব্দুর রহমান, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিমউদ্দীন, মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন