বিএনপিকে ‘জনগণের দল’ উল্লেখ করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘আমরা ক্ষমতা চাই না, আমরা জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। জনগণ যাকে ভোট দেবে, রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদেরই বৈধ অধিকার।’
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জাগ্রত বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলের করণীয়’-শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
গয়েশ্বর রায় বলেন, সরকার বদলে গেছে, আমি-আপনি আগের মতোই আছি। আমাদের এখনো আদালতে হাজিরা দিতে হয়, আমাদের নামে ওয়ারেন্ট হয়। খালেদা জিয়ার মামলা আগে যেভাবে ছিল, এখনো সেভাবেই বহাল আছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ১৫ বছর নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছে। হাজার হাজার মামলা মাথায় নিয়ে ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে। এখনো তাদের বিরুদ্ধে সেই মামলা বহাল রয়েছে। কেবল স্বৈরশাসক হাসিনার পতন হওয়ার পর ক্ষমতার হাত বদল হয়েছে। তাহলে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম করে আমাদের কী লাভ হলো? দেশের মানুষ কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে না। তাদের মনে হয়- আগে যেমন ছিল, এখনো তেমনই রয়েছে। আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) উচিত রাজনৈতিক দলের পরামর্শ নেওয়া। আপনারা যদি পরিবর্তন ঘটাতে না পারেন, তাহলে বেশিদিন ক্ষমতা ধরে রাখা ঠিক হবে না। যদি মনে করেন জনম জনম ধরে ক্ষমতায় থাকবেন, তাহলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসুন।
উপদেষ্টাদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তাদের কর্মকাণ্ডে মনে হয়- তারা যেন একে অন্যকে চেনেন না। তারা এর আগে পাঁচজন একত্রে চা খেয়েছেন- তাদের দেখে সেটাও মনে হয় না। এত মানুষের রক্তের মধ্য দিয়ে দেশে পরিবর্তন এলো- তাতে কয়জন মানুষ উপদেষ্টা হলেন। তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন না। মনে রাখতে হবে, দেশ কোনো গোষ্ঠীর না, দেশ জনগণের। জনগণ ঠিক করবে, কারা দেশ পরিচালনা করবে। কারো বা কোনো দলের কথায় নির্বাচনের জন্য কালক্ষেপণ করা যাবে না। জনগণ চায় একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকার। সেটা মাথায় রেখেই আপনাদের দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, যারা শেষ দশ দিন আন্দোলন করেছিল, তারা এখন দেশের মালিক। তারা মনে করে, সব কৃতিত্ব তাদের। কিন্তু যারা ১৫/১৬ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, দয়া করে তাদের কথাটাও একটু মনে রাখবেন। আমরা আগেও সৈনিক ছিলাম, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমরা সবসময় জনগণের সৈনিক হয়ে থাকতে চাই, কখনো সেনাপতি হতে চাই না। জিয়াউর রহমান দেশের বেহাল অবস্থায় অল্প সময়ের জন্য ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি দ্রুত সংস্কার করে জনগণের অধিকার জনগণের মাঝে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) জিয়াউর রহমান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলনের প্রতিটি স্তরে একজন সেনাপতির মতো স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশ রক্ষার প্রয়োজনে দ্রুত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন। নতুবা দেশি-বিদেশি চক্রান্ত আপনারা মোকাবিলা করতে পারবেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন, পরিস্থিতি দিনদিন ঘোলাটে হচ্ছে। মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। এ অবস্থার মধ্যে থাকার জন্য জনগণ আন্দোলন করেনি। যখন দেশে গণতন্ত্র থাকে না, তখন ষড়যন্ত্র হয়। আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) বিএনপিকে ঠেকাতে চান? হাসিনা বিএনপিকে ঠেকাতে গিয়ে নিজেই হারিয়ে গেছেন। আপনারা বিএনপিকে ঠেকানোর চেষ্টা করবেন না। বিএনপিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। বিএনপির সঙ্গে জনগণের শক্তি রয়েছে। এ কারণে বিএনপি এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, দেশ পরিচালনার জন্য গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। আপনারা নির্বাচনের পথে হাঁটুন। দ্রুত নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে নির্বাচন দিন। যদি ক্ষমতায় থাকতে চান, আপনারাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, আমরা যে ছাত্রলীগকে দেখেছি সেই ছাত্রলীগ এখন নেই। এই ছাত্রলীগ হেলমেট বাহিনী, লুটেরা এবং ধর্ষকদের সংগঠন। এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করাকে আমি সমর্থন করি। একইভাবে যে আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সেই আওয়ামী লীগ নয়। এই আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংস করেছে, দেশের গণতন্ত্র নস্যাৎ করেছে, মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। কমপক্ষে ১৫ বছর এই দলকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
জাগ্রত বাংলাদেশ’র সভাপতি ও দৈনিক খোলাবাজার পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক মো. জহিরুল ইসলাম কলিমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শাহীনের পরিচালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেন, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক এস.এম মিজানুর রহমান, প্রজন্ম একাডেমির সভাপতি কালাম ফয়েজী, জাসাসের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. খালেদ এনাম মুন্না, জাগ্রত বাংলাদেশর সাংগঠনিক সম্পাদক রমিজ উদ্দিন রুমি, ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাড. মনিরুল ইসলাম সোহাগ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন