এক যুগ পর শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে দেশে ফিরেছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির তিন বারের সাধারণ সম্পাদক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা কয়ছর এম আহমদ।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) তিনি নিজের জন্মস্থান সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় গেলে হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক গণসংবর্ধনা প্রদান করে।
বিকেলে জগন্নাথপুর পৌর শহরের পৌর পয়েন্টে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সংবর্ধনা উপলক্ষে সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়ছর এম আহমেদকে বরণ করতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলে জড়ো হন।
বিকেল চারটায় উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মুকিতের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির নেতা জিয়াউর রহিমের সঞ্চালনায় সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে কয়ছর এম আহমেদ বক্তব্য দেন।
কয়ছর এম আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, গত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ ছিলাম। এক যুগ আমরা দেশে আসতে পারিনি। আত্মীয়স্বজনের কাছে আসতে পারিনি। পরিবারের সদস্যদেরও কাছে পাইনি। আজ মাতৃভূমিতে এসেছি। এ এক অন্য রকম ভালো লাগা।
তিনি আরও বলেন, ‘মামলা-হামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হয়। দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
কয়ছর এম আহমদ বলেন, তারেক রহমান দেশে আসার জন্য মুখিয়ে আছেন। ইতোমধ্যে দেশে ফিরে আসার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছেন তিনি। দেশের মানুষের সঙ্গে তার আগেও যোগাযোগ ছিল। দেশে আসার জন্য ইদানীং যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করেছেন। খুব কম সময়ের মধ্যে আমাদের নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন।
কয়ছর বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশ জালিম মুক্ত হয়েছে। আমরা আমাদের সব ধরনের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলাম। আমাদের পাসপোর্ট জব্দ করে রেখেছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আমরা দেশে আসতে পারিনি। আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন মারা গেছেন, রাজনৈতিক অনেক সহকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমরা দেশে আসতে পারিনি। শেখ হাসিনা কতটা অমানবিক আচরণ করেছে আমাদের সঙ্গে।
তিনি আরও বলেন, ৮৫ নেতা যুক্তরাজ্য থেকে আমার সঙ্গে দেশে এসেছেন। তারা এক রকম নির্বাসিত ছিলেন। আপনারা ছাত্রদের নিয়ে দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করেছেন বলেই আমরা আজ আসতে পেরেছি। ছাত্র-জনতার কাছে আমরা চিরঋণী। মাফিয়া সরকারের কোনো চক্রান্তই আর কাজে আসবে না। খুব কম সময়ের মধ্যে দেশনায়ক তারেক রহমান দেশের হাল ধরতে বাংলার জমিনে পা রাখবেন। সে দিন খুব বেশি দূরে নয়, অতি সন্নিকটে।
উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে যোগ দেন। গণসংবর্ধনায় আগত সংবর্ধিত অতিথিদের বসার জন্য ১৬০ আসনের একটি বৃহৎ মঞ্চ তৈরি করা হয়। দুপুরে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে শতাধিক গাড়িবহর নিয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির সংবর্ধিত অতিথিসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও সিলেট বিভাগের নেতারা জগন্নাথপুরে এসে পৌঁছলে কয়ছর এম আহমেদকে উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতারা ফুল দিয়ে বরণ করেন। জগন্নাথপুর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ মুকিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন মিলন, স্বাগত বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মল্লিক মঈন উদ্দিন সোহেল, যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা সোহেল আহমদ, সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুক আলম, যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপি সহসভাপতি তাজুল ইসলাম, যুক্তরাজ্যে বিএনপির সহসভাপতি সুজাতুর রেজা, যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহিম শাহীন ও জগন্নাথপুর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন আহমেদের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাসহ সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি, অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
জানা যায়, জগন্নাথপুর পৌরশহরের ছিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা, সিলেটের জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদকে তার নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ-৩ শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর দলীয় নেতাকর্মীরা আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান।
যুক্তরাজ্য বিএনপির তিনবারের সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ রাজনৈতিক মামলাসহ নিরাপত্তাহীনতার কারণে গত ১ যুগ ধরে যুক্তরাজ্য থেকে মাতৃভূমিতে আসতে পারেননি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর তিনি দেশে এসেছেন।
তিনি গত ১৬ অক্টোবর ৮৬ নেতাকর্মীকে সফরসঙ্গী করে যুক্তরাজ্য থেকে সৌদি আরবে গিয়ে পবিত্র ওমরা পালন করেন এবং ২০ অক্টোবর (রোববার) পবিত্র ওমরা পালন শেষে রোববার ভোরে এসে শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। একই সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে আসা আরও ৩৮ নেতাকর্মী তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন। ২১ অক্টোবর সোমবার দুপুরে কয়ছর আহমদের নেতৃত্বে সফরসঙ্গী নেতাকর্মীরা শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত শেষে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
মন্তব্য করুন