বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, আপনারা শুধু আমার নির্যাতনের কথা জানেন। তবে আজ প্রথম মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করছি, আমার এক সন্তান শহীদ। এ কথা আমার পরিবার ছাড়া কেউ জানে না।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ আয়োজিত মুফতি মুহাম্মাদ ওয়াক্কাস রহ. স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মাসুদ বলেন, আমার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে আমার শ্বশুর কেরানীগঞ্জের জেলখানায় (আমার সন্ধানে) দেখা করতে গিয়েছিলেন। তৎকালীন র্যাবের সদস্যরা আমার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে গাড়িতে উঠিয়েছেন। আমার স্ত্রী বলেছে, দেখুন আমার শরীর খারাপ। তখন র্যাব বলেছে, তোমার স্বামীর সঙ্গে দেখা নেই তাহলে তোমার শরীর খারাপ হয় কী করে। এমন অনেক নির্যাতনের পথ পাড়ি দিয়ে আমরা আজ এখানে এসেছি।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রীকে র্যাব-১ এর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। সে সময় আমার আড়াই বছরের একটা সন্তান বাড়িতে অবস্থান করছে। আমার ৯০ বছরের বৃদ্ধা মা ওই সন্তানকে নিয়ে র্যাবের কার্যালয়ে গেলে বলা হলো আপনার সন্তানকে নিয়ে আসুন তারপর আপনার সন্তানের স্ত্রীকে নিয়ে যান। এরপর আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসা হলো কোনোভাবে।
জামায়াতের এ নেতা বলেন, এ ঘটনার কয়েকদিন পরে আমার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হলো। আমাকে খবর দেওয়া হলে আমি যাওয়ার জন্য উদ্যোগ নিলাম। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হলো আপনি হাসপাতালে আসতে পারবেন না। কারণ, হাসপাতালের সবদিকে সবাই ঘিরে ফেলেছে। আসলে আপনিসহ আপনার সন্তান-স্ত্রী কেউ বের হতে পারবেন না। বললাম, আমি আসব, আমার সন্তানের মুখ দেখব। চিকিৎসক বলেছেন, সে কতক্ষণ বাঁচবে আমি জানি না। এগুলো আলোচনা করতে করতেই আমার সন্তান পৃথিবী থেকে চলে গেল।
জানাজা নির্ধারিত হলো, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে জানাল আপনার সন্তানের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে একটু পর। আমার নেতাদের আমি জানালাম যে, আমাকে যদি গ্রেপ্তার হতে হয়, ক্রসফায়ারে যেতে হয়, গুম হতে হয় তাও আমার সন্তানের জানাজায় আমি যেতে চাই। কিন্তু আমাকে জানানো হলো সংগঠনের সিদ্ধান্ত, তোমাকে সবর করতে হবে, তোমাকে এই মুহূর্তে আমরা প্রশাসনের মুখে ঢেলে দিতে চাই না।
ড. মাসুদ আরও বলেন, আমার শহীদ সন্তানের জন্য আপনাদের কাছে দোয়া চাই। আমি বিশ্বাস করি নবজাতক হিসেবে আল্লাহতায়ালা তাকে কবুল করেছেন। আল্লাহতায়ালা যেন তার সঙ্গে আমাকে জান্নাতে দেখা করার ব্যবস্থা করিয়ে দেন।
তিনি আরও বলেন, এ রকম পথ মাড়িয়ে যে বাংলাদেশ পেয়েছি, তা কোনো অবস্থায় বিপদের মুখে ফেলে দিতে পারি না। আমাদের নবজাতকরা শহীদ হয়েছে। আমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন, আমাদের বোনেরা শহীদ হয়েছেন, ছাত্র শ্রমিক যুবক শহীদ হয়েছেন, শহীদের এই বাংলাদেশে বিশ্বাস ঘাতকদের আর স্থান দেওয়া না।
মন্তব্য করুন