মানবরচিত মতবাদ মানুষকে কিছু দিতে পারেনি; তাই দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তি লাভ করতে হলে কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের হাতিরঝিল অঞ্চল আয়োজিত অগ্রসরকর্মীদের এক শিক্ষাশিবিরে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও অঞ্চল পরিচালক হেমায়েত হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকারের সঞ্চালনায় শিক্ষাশিবিরের শুরুতেই দারসুল কোরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ।
বিষয়ভিত্তিক আলোচনা রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহি পরিষদ সদস্য আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা। উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা নগর দক্ষিণ থানা আমির মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, হাতিরঝিল পূর্ব থানার আমির অ্যাডভোকেট শেখ জিল্লুর রহমান আজমী, তেজগাঁও দক্ষিণ থানা আমির ইঞ্জিনিয়ার নোমান আহমেদী, তেজগাঁও উত্তর থানা আমির হাফেজ আহসান উল্লাহ ও শিল্পাঞ্চল থানা আমির আলাউদ্দীন প্রমুখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ইসলামী আন্দোলন আমাদের প্রত্যেকের ওপরই ফরজ। এই আন্দোলনকে বিজয়ী করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যুগে যুগে নবী-রাসুলদের দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। সর্বশেষ এ দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। উদ্দেশ্য ছিল- কুরআন-সুন্নাহ ও অহিভিত্তিক একটি শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠা। আসহাবে রাসুল (সা.)গণ আল্লাহর দেওয়া এই অত্যাবশ্যকীয় নির্দেশ পালনে সচেষ্ট ছিল। আল্লাহ আমাদের এমন সৌভাগ্যবান করেছেন যে, তিনি এই মোবারক কাজের জন্য আমাদের বাছাই করে নিয়েছেন। কিন্তু শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেই চলবে না বরং এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য আমাদের যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে সংগঠনের সব স্তরের জনশক্তিকে ময়দানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘ পরিসরে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এমন এক সমাজ কায়েম করতে চাই যেখানে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। সবাই হবেন দেশের গর্বিত নাগরিক। সে সমাজে উঁচু-নিচু, ধনী-গরিব, জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কাউকে লাঞ্ছিত বা অপমানিত করা হবে না। সর্বোপরি ইসলাম মানুষের যেসব মৌলিক অধিকার দিয়েছে সেগুলোও যথাযথভাবে নিশ্চিত করা হবে। ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি-পেশা, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষ সবাই তাদের অধিকারের নিশ্চয়তা পাবেন। তিনি সেই স্বপ্নে সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে দাওয়াত সম্প্রসারণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
মহানগরী আমির বলেন, ‘ইক্বামাতে দ্বীনের দায়িত্ব আমরাই প্রথম পালন করছি না বরং তা প্রত্যেক নবী-রাসূলদের ওপরই অত্যাবশ্যকীয় ছিল। শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) কে সে মিশন দিয়েই দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছে। সে ধারাবাহিকায় আসহাবে রাসুল (সা.)গণও সে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আমরাও একইভাবে কিন্তু এই দায়িত্ব পালন করতে গেলে আমাদের যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
কারণ, আল্লাহ পাকের প্রথম অহিই হলো, ‘পড় তোমার প্রভুর নামে’। যথাযথ জ্ঞানার্জন না করলে যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও মসজিদের ঈমাম বা খতিব হওয়া যায় না, ঠিক তেমনিভাবে ইসলাম সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান অর্জন না করলে ইসলামী আন্দোলনেও সফল হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি মানবরচিত মতবাদের অসারতা প্রসঙ্গে বলেন, মানবরচিত আদর্শ ও ভোগবাদী সমাজ মানুষের জন্য কল্যাণকর নয়। তাই এই প্রচলিত সমাজ ভেঙে অহিভিত্তিক নতুন সমাজ গড়তে হবে। খাও, দাও ফুর্তি কর- এমন ভোগবাদী স্লোগান কখনো মানুষের স্লোগান হতে পারে না। তিনি দেশ ও জাতিকে এক নতুন সমাজ উপহার দেওয়ার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।’
মন্তব্য করুন