দেশে গুজব ছড়িয়ে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি এ অভিযোগ করেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ষড়যন্ত্রকারী থেমে নাই। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে বলেই মনে করবেন না, সব স্বৈরাচাররা, ফ্যাসিবাদের দোসরা পালিয়ে গেছে… না; আছে তারা।
নানা রকম গুজব এবং বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। আপনাদের হুঁশিয়ার এবং সাবধান থাকতে হবে। কোনো রকমের গুজবন ও বিভ্রান্তিতে যেন আমরা পা না দেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, ওদের (পতিত আওয়ামী লীগ) পক্ষে দেশে-বিদেশে শক্তি আছে, ওদের অনেক টাকা-পয়সা আছে... তারা নানাভাবে চেষ্টা করতে পারে আমাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির… সেটা যেন করতে না পারে সে দিকে সজাগ থাকতে হবে। কারণ মনে রাখতে হবে শহীদ জেহাদ থেকে আরম্ভ করে এর আগের এবং পরের যারাই আমাদের ভাই-বোনেরা শহীদ ও গুম হয়েছেন তাদের রক্ত কিংবা তাদের স্মৃতির প্রতি আমাদের দায় আছে, এই দায় আমাদেরকে পরিশোদ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যারা বেঁচে আছি আমাদের দায়িত্ব হলো শহীদদের স্মৃতি মনে রাখা। যা তারা চেয়েছিলেন যার জন্য তারা জীবন দিয়েছেন সেটা অর্জন করা। আর সেই অর্জন করার পথে যে বাধা আসবে সেই বাধাকে আমাদের অতিক্রম করতে হবে। অতিক্রম করতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগনকে সাথে নিয়ে।
মনে রাখবেন, রাজনীতিতে জনগণের চাইতে বেশি শক্তিশালী আর কেউ নাই। আল্লাহর মেহেরবাণীতে সেই জনগণের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা আছে শহীদ জিয়া, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানসহ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের। কাজেই আমাদের উচিত জনগনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা এবং তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করা।
১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর ছাত্রদল নেতা জেহাদ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আন্দোলন আরো তীব্র হয়। জেহাদের লাশ ছুঁয়ে তৎকালীন ছাত্রনেতারা শপথ নেন স্বৈরাচার এরশাদকে হঠানোর। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বরে ক্ষমতা ছাড়েন এরশাদ।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর রাজউক এভিনিউয়ের জেহাদ স্কয়ারে স্মৃতিস্তম্ভে বিএনপির পক্ষ থেকে আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, নাজিমউদ্দিন আলমসহ নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
অনৈক্যসৃষ্টিকারীদের বিষয়ে সজাগ থাকা নিয়ে তিনি বলেন, এমন অনেক আছে যাদের আমরা হয়ত চিনতে ভুল করতেছি… মনে হচ্ছে আমাদের পক্ষে। ওই লোকগুলো আমাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করার মতো স্লোগান দেয়, অনৈক্য সৃষ্টি করার মতো কথা বলে, যাতে করে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই করেছে যারা বা যে শক্তি তাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। আরেকটা উদ্দেশ্য আছে তাদের। তারা জানে যে, এদেশের জনগণের মন-মানসে বিএনপির অস্তিত্ব এতোই প্রসারিত, এতোই পথিত হয়ে আছে, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের সম্ভাবনা খুব কম। অতএব, বিএনপিকে হেয় করা যায় কিভাবে, বিএনপির জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করা যায় কিভাবে, বিএনপির দুর্নাম করা যায় কীভাবে… এরকম ষড়যন্ত্রে কেউ কেউ লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করছে।
কোনো দল বা জোটের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, আমরা সবাইকে অনুরোধ করব, আমরা পরস্পর শত্রু নই। আসুন আমরা পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বি হই। আপনি আপনার কথা বলেন, আমি আমার কথা বলি। আপনার অতীতও জনগণ জানে, আমার অতীতও জনগণ জানে… আগামী দিনে যখন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে জনগন নির্ধারিত করবে কাকে তারা তাদের কল্যাণের জন্য দায়িত্ব দেবে, আগামী দিনের সরকার পরিচালনার। কিন্তু সেটা না করে মিথ্যা কথা বলা, অন্যায়ভাবে সমালোচনা করা আল্লাহ পছন্দ করে না সেইগুলো।
দুর্গাপূর্জায় যাতে কোনো ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে তিনি বলেন, দুর্গা উৎসব চলছে। আমাদের দায়িত্ব যাতে করে সেখানে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদেরও আছে। কারণ কিছু মানুষ আছে যারা চক্রান্ত করে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আমাদের দেশের বদনাম করার চেষ্টা করবে।
এই সরকার কিংবা যারা এই সরকারকে নিয়ে এসেছে তাদের হেয় করার চেষ্টা করবে। এটা যাতে করতে না পারে সেই নজর আমাদের রাখতে হবে। চেষ্টা করতে হবে যে, তারা এদেশের নাগরিক তারা তাদের ধর্ম পালন করবে যথাযথভাবে এবং নিরাপদে নিশ্চিন্তে যেন তারা ধর্ম পালন করতে পারে… এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের।
তিনি বলেন, আজকে বন্যা হচ্ছে অনেক জায়গায়, বিভিন্ন জায়গায় প্লাবন হচ্ছে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে, তাদের বিপদে তাদের সঙ্গে থেকে তাদের ভালোবাসা আমাদের অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে। এভাবে আমাদেরকে আগামী দিনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া লাগবে।
আজকে আইনশৃঙ্খলা সমস্যা হচ্ছে। বহু পুলিশ এখনো যোগ দেয় নাই, অনেক জায়গা কাজ-কর্ম ঠিকমতো শুরু হয়নি। সেই সব জায়গায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা ভূমিকা রাখতে পারি।
নব্বইয়ের ডাকসুর ভিপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নব্বইয়ের সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে আসাদুজ্জামান রিপন, সালাহউদ্দিন আহমেদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, কামরুজ্জামান রতন, খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান আসাদ, মীর সরাফত আলী সপু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, ছাত্র দলের সভাপতি রকিবুল ইসলাম রাকিব ও শহীদ জেহাদের বড় বোন চামেলী মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন