বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সীমান্তে লাশের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ভারতের হাতে বানানো তাদের গোলাম শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তাই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) আরও আক্রমণাত্মক। ৫ আগস্ট জনগণের যে বিপ্লব হয়েছে তার ধারাবাহিকতায় জনগণের আস্থা নিয়ে ড. ইউনূস সরকারে আসে। আমাদেরও এই সরকারের প্রতি আস্থা আছে। তবে গণতন্ত্রের চর্চাকে সামনে রেখে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত। নির্বাচন দিতে কেন বিলম্ব করছেন? অতি দ্রুত গণতন্ত্র রক্ষায় নির্বাচন দিন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব তিনি কাতারের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি তখন যারা বিএনপি করত তাদের পাসপোর্ট রিনিউ করত না। এ বিতর্কিত রাষ্ট্রদূতের কারণেই অনেক বাংলাদেশিকে দেশে ফিরতে হয়েছে। সে তো স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার এজেন্ট। সে কিভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব হলো? এরা কখনোই চাইবে না আপনি সফল হোন। এদের মতো স্বৈরাচারী সরকারের এজেন্টরা আপনাকে প্রতিনিয়ত বিতর্কিত করবে।
রিজভী বলেন, ফেলানীর মতো সীমান্তে স্বর্ণা দাসকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বিএসএফ। সীমান্তের এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদাসীন কেন? কেন আপনারা জোরালো আওয়াজ তুলছেন না? একটি নিষ্পাপ কিশোরী মেয়েকে হত্যার মতো ধৃষ্টতা যে দেশ দেখাতে পারে সে দেশকে কেন কড়া প্রতিবাদ জানানো হলো না? বিএসএফ সীমান্তে হিন্দু নাকি মুসলমান তা দেখে গুলি করে না, সীমান্তে তাদের মূল টার্গেটই হলো বাংলাদেশিরা।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার হাসিনার নির্দেশে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর কারাগারে রাখা হয়েছে। তারপরও দেশনেত্রী স্বৈরাচারী সরকারের কাছে মাথা নত করেননি। আমরা সেই নেত্রীর দল করি। আমরা সেই নেতার দল করি যেই নেতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে একটি জাতিকে একটি দেশ এনে দিয়েছেন। ’৭৫-এর পরে বাকশালের কালো অন্ধকার গর্ত থেকে আবারও বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। গত ১৫ বছরের আন্দোলনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পাশাপাশি দেশনায়ক তারেক রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে গোটা জাতিকে গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনের যেভাবে প্রস্তুত করেছেন তার ফসল জুলাই আন্দোলন।
রোববার (৬ অক্টোবর) মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের খাকটেখা কালনীগড় বাজারে বিএসএফের গুলিতে নিহত স্বর্ণা দাসের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ পরবর্তী পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির উপদেষ্টা শরিফুল হক সাজুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, আলমগীর কবীর, আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু।
এ সময় আমরা বিএনপি পরিবারের পক্ষ থেকে বিএসএফের গুলিতে নিহত স্বর্ণা দাসের পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
পথসভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমের সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা হয়েছে, হামলা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার, গুম ও খুন করা হয়েছে। তারপরও বিএনপির একজন নেতাকর্মীকেও লক্ষ্য থেকে তারা সরাতে পারেনি। দলের প্রতিটি নেতাকর্মী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লড়াইয়ে কাজ করে গেছেন। দেশের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, সর্বশেষ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুৎ করার চূড়ান্ত লড়াইয়ে অনেক প্রাণ গেছে। এত শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশে ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারের দোসরদের স্থান হবে না।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের ১১ শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, শহীদদের রক্ত কোনোভাবেই বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। গণখুনি ও তাদের সব দোসরের বিচার দেশের মাটিতেই হবে ইনশাআল্লাহ।
মন্তব্য করুন