বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ বলেছেন, আজ গর্ব করে বলতে হয়, আমাদের আপোসহীন নেত্রী তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কিন্তু তাকে যেভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী করেছিল সেটা দেখে আমি বিস্মিত। কীভাবে তিনি ধৈর্য ধরেছেন বুঝতে পারিনা। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তার এতো ত্যাগ ও ধৈর্য আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। না হলে একজন পুরুষের পক্ষেও তা সহ্য করা সম্ভব হতো না। আমাদের নেতাদেরও এতো ধৈর্য ধরে পরীক্ষায় পাস করার সুযোগ ছিলনা। আজকে জালেম সরকার বিদায়ের পর তিনি পুরোপুরি কারামুক্ত হয়েছেন। আমরা খালেদা জিয়ার কাছে ঋণী ও কৃতজ্ঞ। তিনি শুধু জেল খাটেননি, তাকে অসুস্থ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি যেন রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনীতি করতে না পারেন। তার জীবনকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এর বিচার অবশ্যই করতে হবে। সবাই খাস করে খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করবেন।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বাদ জুমা কাতারে একটি তারকা হোটেলে বাংলাদেশি প্রবাসীদের এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
গত জুলাই আগস্টে ছাত্রজনতার আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন তাদের রুহের মাগফিরাত এবং আহতদের জন্য দোয়া কামনা করেন। সেইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান।
হাফেজ হেমায়েত উল্লাহর সভাপতিত্বে ও মাওলানা শরীফ মাহমুদের পরিচালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন খোরশেদ আলম ভূঁইয়া, জুয়েল রানা ও সজীব আলম প্রমুখ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রসঙ্গে কায়াকোবাদ বলেন, তার ওপর গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কী রকম অত্যাচার করা হয়েছে তা সকলেই জানে। অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি হাটতে ও চলতে পারেন না তারপরও তাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় বিদেশে গেছেন। তাকে আল্লাহ হেফাজত করেছেন। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য ধরেছেন। বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হওয়ার পর থেকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। সকলে দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে এনে নেতৃত্ব পুরোপুরিভাবে পরিচালনার তৌফিক দেন। বিশেষ করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্য দোয়া করবেন। তার মতো নেতা যেন তারেক রহমান হতে পারেন। জিয়া ছিলেন সৎ ও নিরহংকারী। তা আদর্শ বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে ইনশআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময় এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে আজকে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ। অতীতেও আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু ওই স্বাধীনতা আমাদের কথা বলার সুযোগ দেয় নাই, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়নাই। অসংখ্য নেতাকর্মী আছেন যাদের বিরুদ্ধে ১০০, ২০০ তিনশো এমনকি চারশোর মতো মামলা হয়েছে। বিশ্বের কোনো দেশে নজির নেই যেখানে একজনের বিরুদ্ধে এতো মামলা দেওয়া হয়! আবার বিচারের জন্য কাঠগড়ায় গিয়েও রিমান্ডের নামে জুলুম-নির্যাতনে শিকার হয়েছেন। আজকে আল্লাহর রহমতে এমন এক ব্যবস্থা হেয়েছে যে, কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা হয়েছিল, আদালতের মাধ্যমে তাদের ওপর জুলুম-অবিচার করা হয়েছে। আমি নিজেও ১৩ বছর ধরে মিথ্যা মামলা দেশের বাইরে। তবে আজকে অনেকেই মুক্তি পাচ্ছেন। আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মুক্তি পেয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
কায়কোবাদ বলেন, আজকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কী ষড়যন্ত্র হয়েছে সকলেই জানেন। তাকে কিভাবে আদালতের কঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। তাকে বেইজ্জতি করা এবং জেলে ঢুকানোর জন্য কতো অত্যাচার-অবিচার জুলুম করা এবং মিথ্যা মামলা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তাকে হেফাজত করেছেন। ড. ইউনূস একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি। শুধু বাংলাদেশেই নন সারা বিশ্বে তিনি সমাদৃত। তার মতো বরেণ্য ব্যক্তিকে যদি মিথ্যা মামলা দিয়ে জুলুম-নির্যাতন করতে পারে, আমাদেরকে করবে না কেনো?
তিনি আরও বলেন, আমাদের মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবসহ অনেকেই একাধিকবার জেল খেটেছেন। স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা জেল খেটেছেন। এতো বড় জুলুম-অত্যচার আর পৃথিবীর কোথাও হয়েছে কিনা জানিনা। ছোট ছোট ছাত্র ভাইয়েরা এবং অন্যান্য দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ যেভাবে সহযোগিতা করেছে, ঢাকা শহরের মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে তা ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ছাত্রসমাজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমি ছাত্রভাইদের বলবো-চিন্তা করে সাবধানে চলতে হবে। কারণ চক্রান্তকারীরা আন্দোলনের ফসলকে নষ্ট করতে চায়। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তারা যেভাবে ধৈর্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে তা অতুলনীয়। তারা যদি ভবিষ্যতেও এভাবে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করতে পারে দেশবাসী চিরকৃতজ্ঞ থাকবে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ অবিচারকে সইতে পারে না। তারা দেখেছে কিভাবে লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে তা নজিরবিহীন। আমার এলাকা মুরাদনগরে অসংখ্য মামলার বাদী হয়েছে পুলিশ। আসলে পুলিশের একক দোষ নেই। তারা চাকরি ঠিক রাখতে গিয়ে এটি করতে বাধ্য হয়েছে।
কাজী কায়কোবাদ বলেন, তবে জুলুমকারীদের প্রাথমিক বিচার আল্লাহ করেছেন। কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে কিন্তু এভাবে পালিয়ে যেতে হয়নাই। বাংলাদেশের জালেম সরকারকে ভয়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এখান থেকে আমাদেরকেও শিক্ষা নিতে হবে। আমরা যদি কোনো ভুল বা অপরাধ করি তাহলে আমাদের পরিণতিও এমনটাই হবে। বাংলার জনগণ অন্যায় সহ্য করতে পারেনা। বাংলার মাটি শাহজালালের মাটি, ৩৬৫টি আউলিয়া ও আলেমদের মাটি। এই মাটি নিয়ে খেলাধুলা করলে চলবেনা। একমাত্র ক্ষমতা আল্লাহর। আমরা সবাই মিলেমিশে চলতে চাই।
মন্তব্য করুন