বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যমান সব বৈষম্য দূরা করা হবে বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
শনিবার (৫ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত বিশ্ব শিক্ষক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, চরিত্র ও শিক্ষা একসঙ্গে না থাকলে শিক্ষার সুফল পাওয়া যায় না। একজন শিক্ষক যখন জাল সার্টিফিকেট লিখতে পারে, ভোট চুরিতে সহায়তা করতে পারে, ৫% ভোটকে ৬০% ভোট দেখাতে পারে তখন শিক্ষার কোনো মানমর্যাদা থাকে না। নৈতিকতাহীন এই শিক্ষা দিয়ে জাতি গঠন করা যায় না। এটি জাতির জন্য চরম লজ্জার।
শিক্ষিত ব্যক্তি যদি চরিত্রহীন হয় তবে সে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে যায় মন্তব্য করে মুজিবুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের রচিত শিক্ষা নীতিতে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয় থাকলেও পরীক্ষা ছিল না। পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা ও জ্ঞানের মূল্যায়ন হয়, কিন্তু আওয়ামী লীগ বলছে বিষয় থাকুক কিন্তু পরীক্ষা হবে না। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের তামাশা দেখতে দেখতে অসহ্য হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে।
অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, শিক্ষানীতি যদি এক ব্যক্তি বা এক দলের স্বার্থ হাসিলের জন্য রচিত হয় তবে সে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড হতে পারে না। আওয়ামী লীগের রচিত শিক্ষা নীতি মানুষের নীতি-নৈতিকতা নষ্ট করার শিক্ষা নীতি। এই শিক্ষা দিয়ে আদর্শ মানুষ গঠন করা সম্ভব নয়। আর আদর্শ মানুষ গঠন করতে না পারলে আদর্শ ও কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করা যাবে না। এই শিক্ষা ব্যবস্থা বহাল থাকলে নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন পূরণ হবে না। নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য কোরআন ও সুন্নাহ অনুসারে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে।
ড. মাসুদ আরও বলেন, ইসলাম ও আধুনিকতা একসঙ্গে চলে না। সব আধুনিকতা হচ্ছে ইসলামী সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার অন্যতম মাধ্যম। হাসিনার শিক্ষা নীতিতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী আবু জাহেল সৃষ্টি করেছে। জামায়াতে ইসলামী আর কোনো আবু জাহেল সৃষ্টি হোক চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চাই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে, স্কুল-কলেজে, পাড়া-মহল্লা, ঘরে-ঘরে ওমর সৃষ্টি হোক। শেয়ারবাজার, ব্যাংক, বিমা যারা লুট করেছে তারা কেউ অশিক্ষিত নয়, তারা নৈতিকতাহীন, চরিত্রহীন অমানুষ। আওয়ামী লীগের আমলারা দুর্নীতি করতে করতে সীমাহীন পর্যায়ে চলে গেছে; প্রশাসন দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের সেই দুর্বল প্রশাসনকে দেশপ্রেমিক মানুষ সবল ও জনবান্ধব করে তুলতে কাজ করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকারকে সব শ্রেণিপেশার মানুষ সহযোগিতা করছে।
জুলাই-আগস্টের চেতনা ধারণ করলে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া হবে না বরং সফল হতে জামায়াতে ইসলামী সার্বিক সহযোগিতা করবে বলেও জানান ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
তিনি আরও বলেন, বিগত স্বৈরাচার হাসিনা সরকার আদর্শ শিক্ষকদের হামলা-মামলা, জেল-জুলুম করে নানা রকমের নির্যাতন চালিয়েছে। তারা প্রথমে শিক্ষকদের দমিয়ে রাখার পথ অবলম্বন করেছে। তারপর শিক্ষানীতি গঠন করেছে নিজেদের পোষা দলীয় শিক্ষক নামের চরিত্রহীন, নৈতিকতাহীন অমানুষদের দিয়ে। কারণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে পারলেই আগামীর প্রজন্ম থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ থাকবে না। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরাশক্তি ভারত আমাদের শাসন করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সে স্বপ্ন বাংলার মানুষ কখনো পূরণ হতে দিবে না। সেজন্যই ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে দিয়েছে, আমাদের নেতৃত্ব আমরা দিতে পারি এবং দিব। তোমরা ভারতের দালালেরা ভারতে চলে যাও। আওয়ামী লীগের সভাপতি খুনি হাসিনাসহ যতগুলো ভারতে পালিয়ে গেছে এরা সবাই ভারতের গুপ্তচর, দালাল ছিল। এদের চিনে রাখতে এবং আগামী দিনের জন্য সজাগ থাকতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি অধ্যক্ষ নুর নবী মানিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রবিউল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল আজিজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটির সভাপতি অধ্যক্ষ ইকবাল ভূইয়াসহ বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতারা।
মন্তব্য করুন