বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা ভারত কী বলল সেটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আমাদের দরকার, বাংলাদেশের মানুষ কী বলছে? সেটাই আসল। মানুষ বলছে, তোমরা বিদায় হও। সুতরাং এই সরকারকে যেতেই হবে। দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের পেছনে যাওয়ার কোনো পথ নেই। এই দেশকে, দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য আমাদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। মরণপণ সংগ্রাম, মরণপণ যুদ্ধ করে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনে এদের বিদায় করতে হবে। এই সরকার বিদায় হলে মামলা-মোকদ্দমা-রায় সবকিছু চলে যাবে।
আরও পড়ুন : আদালত বিচারের নামে মশকরা করছে : গয়েশ্বর
নেতাকর্মীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশে আসায় বক্তব্যের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে আজ ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ, দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলে এই দানবকে পরাজিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ জোর করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে; বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন, প্রশাসন এবং বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তারা (সরকার) আজ প্রমাণ করেছে, তাদের কথার মধ্য দিয়েই ভয়ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।’
এর আগে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিকেল সোয়া তিনটার দিকে এই সমাবেশ শুরু হয়। দুপুর দুইটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তা নির্ধারিত সময়ে শুরু হতে পারেনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং ঢাকা জেলা বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এ সমাবেশ হচ্ছে।
প্রতিবাদ সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে এখন উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আব্দুস সালাম, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ইরফান ইবনে আমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ নেতারা।
এদিন নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে নয়াপল্টনে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর প্রথম মিছিলটি আসে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির। এই মিছিলে নেতৃত্ব দেন অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী। এ ছাড়া দোহার নবাবগঞ্জ উপজেলার একটি মিছিল আসে। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক।
সাভার ও আশুলিয়া থেকেও মিছিল আসে, যার নেতৃত্ব দেন ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু।
ধামরাই থেকে আসা মিছিলের নেতৃত্ব দেন তমিজ উদ্দিন। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড-থানা থেকে মিছিল আসতে দেখা যায়।
গত বুধবার (২ আগস্ট) জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পলাতক আসামি তারেক রহমানের ৯ বছর ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের তিন বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
আরও পড়ুন : আবারও গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার চলছে : রিজভী
কারাদণ্ডের পাশাপাশি তারেক রহমানকে তিন কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অনাদায়ে তাকে আরও তিন মাস সাজা ভোগ করতে হবে।
অপরদিকে জুবাইদা রহমানকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৩৫ লাখ জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে তাকে আরও এক মাস সাজা ভোগ করতে হবে।
সেই সঙ্গে তারেক-জুবাইদা দম্পতির অপ্রদর্শিত সম্পদ হিসেবে দুই কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।
মন্তব্য করুন