আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর দেশের ক্ষমতা দখল করে রেখে সব শ্রেণি- পেশার মতই সাধারণ শ্রমিকদের তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) রাতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশ কর্তৃক আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিকসহ যে কোনো স্তরের শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার চাইলেই পুলিশ দিয়ে তাদের লাঠিচার্জ করে, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে, এমনকি কুকুরের মতো পিটিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিল। এসব ঘটনায় বহু শ্রমিক আহত-নিহত হয়েছে। অসংখ্য শ্রমিক নেতাকে গুম করেছে। দ্রব্যমূল্য হু হু করে বাড়লেও মানুষের মূল্য বাড়েনি। বরং আওয়ামী লীগ মানুষকে মূল্যহীন করে দিয়েছে। তাদের নির্যাতনে বহু মানুষ পুঙ্গ হয়ে অকর্ম হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া তিনি বলেন, শ্রমিক অঙ্গনকেও আওয়ামী লীগ দলীয়করণ করেছে। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজদের শ্রমিক নেতা সাজিয়ে শ্রমিকদের শোষণ করেছে। তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই নিরপরাধ শ্রমিকদের হামলা-মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। ২০১২ সালে তাজরীন গার্মেন্টসে পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে ১১৪ শ্রমিককে তারা হত্যা করেছে। এভাবে বহু কল-কারখানা তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু এসব ঘটনার কোনো সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি এমনকি বিচারও হয়নি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যদি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় তবে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করবে। কোনো শ্রমিককে ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য জীবন দিতে হবে না, পুঙ্গ হতে হবে না। কোনো শ্রমিক শোষণের শিকার হবে না। শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গঠনই জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচি। শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীকে সাধারণ শ্রমিকদের সুখে-দুখে পাশে থাকার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ধানমন্ডি অঞ্চলের পরিচাল মো. আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও আব্বাস উদ্দীনের সঞ্চালনায় রাজধানীর হাতিরপুলে এক কনভেশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকে অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম, ধানমন্ডি থানা আমির হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, প্রকৌশলী তৌফিক হাসান, আনিছুর রহমান, জসিম উদ্দীন ও কামরুজ্জামান।
এর আগে দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার এক হিন্দু পরিবারের অসুস্থ বৃদ্ধের শারীরিক খোঁজ-খবর ও হুইল চেয়ার উপহার দিতে গিয়ে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আমাকেসহ বাউফল উপজেলা জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগ চেয়েছে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে। এজন্য তারা হামলা, মামলা, খুন, গুম, জুলুম, নির্যাতন এমনকি প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে বহু নেতাকে দণ্ডও দিয়েছে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি, যাবে না। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা বাউফলবাসীর পাশে ছিল এবং থাকবে। ভবিষ্যতে যদি বাউফলবাসী জামায়াতে ইসলামীকে তাদের সেবক হিসেবে দায়িত্ব দেয়, তখন বাউফল উপজেলা হবে বাংলাদেশের একটি আদর্শ উপজেলা।
বাউফলের কোনো মানুষ জুলুমের শিকার হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচি বাস্তবায়নের সুযোগ জনগণ দিলে বাংলাদেশ হবে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র। যেখানে থাকবে না কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, থাকবে না দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি। বৈষম্যহীন বাংলাদেশের নেতৃত্বকে বিশ্ববাসী অনুসরণ করবে।
তা ছাড়া তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেরাই হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পদ দখল করেছে, মন্দির ভেঙেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট করেছে। কিন্তু তারা চেয়েছে তাদের অপকর্ম জামায়াতে ইসলামীর উপর চাপিয়ে দিতে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সম্পদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মন্দির, বাড়িঘর পাহারা দিয়ে প্রমাণ করেছে জামায়াতে ইসলামীর হাতে দেশের সব মানুষ নিরাপদ। আওয়ামী লীগ হিন্দুদের সংখ্যালঘু বানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী বলছে সংখ্যালঘু কারো পরিচয় হতে পারে না, সবাই দেশের নাগরিক। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দল-মত, ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী বিবেচনায় রাজনীতি করে না। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি হচ্ছে কেবলই মানুষের সেবায়। তিনি দল-মত, ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠীর ভেদাভেদ ভুলে নির্বিঘ্নে জামায়াতে ইসলামীর নিরাপদ ছায়াতলে আসতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন