কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভিতরে সুবিধাভোগীরা ঢুকে গেছে : নুরুল হক নুর 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে পেশাজীবীদের ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভা । ছবি : কালবেলা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে পেশাজীবীদের ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভা । ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে পেশাজীবীদের ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভা শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদ ১ বছর আগে ড. ইউনূসকে নিয়ে প্রোগ্রাম করেছিল, শিরোনাম ছিল বিচারিক হয়রানি ও ড. ইউনূস। তখন অনেক ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমরা এ কাজটি করেছি। আমাকে ১৯ জুলাই আটক করে কি পরিমাণ নির্যাতন করেছিল তা আমার সঙ্গে যারা ছিল তারা জানে। আমি আদালতেও বলেছিলাম এই ফ্যাসিবাদ টিকবে না। যার জন্য আমাকে আরও বেশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ১ বছর আগে আমরা বলেছিলাম ২ বছরের জন্য জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। এখন সে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বর্তমান সরকারের ভিতরে সুবিধাবাদীরা ঢুকে গেছে, এই এনজিওমার্কা সরকার নিয়ে খুব বেশি দূরিএগোনো সম্ভব না। আমরা বলছি সরকারকে জাতীয় সরকারে রূপ দিতে, অনেকেই ভাবতে পারেন আমি উপদেষ্টা হওয়ার জন্য বলছি। আমি এখানে ঘোষণা দিচ্ছি, আমি এই সরকারের পার্ট হবো না। তবে সরকার চাইলে আমরা প্রস্তাব দিতে পারি। এই সরকারে যারা আছে তাদের কয়জন এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে সরব ছিল? অথচ যারা রাজপথে ছিল তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এই সরকার পতনে আন্দোলন একদিনে হয়নি, গত কয়েক বছর ধরে এর পটভূমি রচিত হয়েছে। ২০১৮ সালের আন্দোলন না হলে ২৪ সালে এ আন্দোলন হতো কিনা সন্দেহ। এই আন্দোলনে সামনের সারির অনেকেই আমাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ছিল- তাই বলে আমরা তো নিজেদের মাস্টার মাইন্ড দাবি করতে পারি না। এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের অংশগ্রহণ না থাকলে আন্দোলন সফল হতো না।

এখন হুট করেই নির্বাচন দিলেও বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। কারণ অনেকের অনেক ক্ষুধা রয়েছে। ড. ইউনূস স্যারের আন্তর্জাতিক যে যোগাযোগ রয়েছে, যেভাবে বিশ্বনেতারা তাকে সম্মান করেন, এটা আমাদের গর্ব। আমাদের ড. ইউনূসের উপর আস্থা রয়েছে কিন্তু আশংকা তার চারপাশের লোকদের নিয়ে। দেশের সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার জন্য ভারত ষড়যন্ত্র করছে। পাহাড়িদের ভারত উসকানি দিচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সামনে দুর্গাপূজা আসছে, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সনাতন ধর্মের লোকেরা পূজা পালন করতে পারে। আশঙ্কা রয়েছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা হামলা করে বিশ্বকে দেখাতে পারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে।

দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কার আলাপের বাইরে রাখা বিরাজনীতিকরণের অংশ। শপথের ৫০ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো কোনো কিছু সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলে আরেকটি ১/১১ সৃষ্টি হবে। এখনো পর্যন্ত শেখ পরিবারের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি, আওয়ামী হাইকমান্ডের কেউ আটক হচ্ছে না। শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ দেখছি না। গণহত্যার নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তার না করে কিসের রাষ্ট্র সংস্কার? সেনাবাহিনীর হাতে ৬২৬ আশ্রয় নেওয়াদের নাম কেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রকাশ করছে না? এই তালিকার কেউ পালিয়ে গেলে দায় সরকারকে নিতে হবে। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। এবার রাষ্ট্র সংস্কার না হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়ে যাবে। সুতরাং রাষ্ট্র সংস্কারের রোডম্যাপ প্রকাশ করুন। আপনাদের পরিকল্পনা আমরা জানতে চাই। পরিকল্পনা ব্যতীত কোন রাষ্ট্র চালানো যায় না।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দীন বলেন, এখন সব জায়গায় বলা হচ্ছে একজন মাস্টার মাইন্ড আর সমন্বয়করা নাকি সব করেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর, জনগণের ভূমিকা অস্বীকার করা হচ্ছে। অথচ সবাই এই আন্দোলনে যুক্ত ছিল। এই সরকার এখনো কোনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। সরকার নিজেদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে নিজেদের মাঝে দূরত্ব বাড়াচ্ছে। প্রয়োজন হলে নতুন করে সংবিধান নতুন করে রচনা করেন। অহংকারীকে আল্লাহ পছন্দ করে না, শেখ হাসিনা তো অহংকার করেছিল তার তো পতন হয়েছে। সেনাবাহিনীকে বলবো, নির্বাচনের দিকে না দিয়ে পাহাড়ের দিকে মনোযোগ দিন। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নির্মূল করার জন্য অপারেশন চালান। তবে নিরীহ মানুষের উপর অন্যায় করবেন না।

প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু বলেন, এখন সবাই পদ-পদবির জন্য দৌড়াচ্ছে, দেশ সংস্কারে তাদের মনোযোগ কম। সংস্কারের পাশাপাশি আমাদের ইমপ্লিমেন্টের বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।

বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ বলেন, ৬টি সংস্কার কমিটি করলেও এখনো গণমাধ্যম সংস্কার কমিটি করা হয়নি। এখনো গণমাধ্যমগুলোয় ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে। তারা নিউজের শুরুতে বিভ্রান্তিকর শিরোনাম দিলেও কৌশলে ভিতরে ফ্যাসিবাদের পারপাস সার্ভ করছে।

সিনিয়র সাংবাদিক পার্থ সারথি দাস বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ধাপে ধাপে সংস্কার করতে হবে। বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার জন্য সংবিধান সংস্কারের মধ্য দিয়ে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও আইনজীবী অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাড. নুরে এরশাদ সিদ্দিকী বলেন, হাইকোর্টে স্বৈরাচার হাসিনার বিচারপতি যারা আছেন তাদের দ্রুত অপসারণ করতে হবে এবং ইকবাল সোবহান চৌধুরীর মতো তেলবাজ সাংবাদিক ফ্যাসিবাদের দোসরদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। আর কোন সময় এ দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম না হোক এজন্য পেশাজীবী অধিকার পরিষদকে সজাগ থাকতে হবে, জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এরশাদুল বারী মামুন বলেন, সংবিধান সভা করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন সংবিধান করতে হবে। বিচার বিভাগে ও সরকারি অফিসে নাগরিককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বসার ব্যবস্থা করতে হবে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সভাপতি ডেন্টিস জাফর মাহমুদ, সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খালিদ হাসান। সভায় আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লতিফ মাসুম, ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, সহ-সভাপতি আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক রেজওয়ান রূপ দীনেশ, গণমাধ্যম ও প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক জিএম রোকনুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী নাসির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম সুমন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কাউছার শেখ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শামসুল আলম, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বাড়ল

বিএনপি নেতার মৃত্যুতে কায়কোবাদের শোক

ট্যানারির বর্জ্য পুড়িয়ে মাছ ও মুরগির বিষাক্ত খাদ্য তৈরির কারখানায় অভিযান

মুনতাহা হত্যাকাণ্ড : আদালতে যা বললেন সেই গৃহশিক্ষিকা

প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল নিয়ে ডিআরইউর বিবৃতি

বিশ্ববাজারে আরও কমলো জ্বালানি তেলের দাম

ইমরুলের শেষের আয়োজন / প্রথম দিনেই লিডে চট্টগ্রাম-সিলেট

সবই ছিল অভিনয় ও লোক দেখানো : রিজভী

সোলাইমানিকে হত্যার বিচার নিয়ে ইরানের হুংকার

রংপুরের শহীদদের ৪৪ পরিবারকে দুই কোটি বিশ লক্ষ টাকার চেক প্রদান

১০

তারেক রহমানের ইতিবাচক রাজনীতি আশার সঞ্চার করছে : দুলু

১১

ছায়ানটের তিন হাজার শিক্ষার্থীর কণ্ঠে জাতীয় সংগীত

১২

‘সনাতনীদের ঢালাওভাবে আ.লীগের ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে’

১৩

ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ৮ জনের মৃত্যু

১৪

ওত পেতে থাকা স্বৈরাচারের কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না : তারেক রহমান

১৫

আহত কাজলকে নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড, হাসপাতালে উপদেষ্টা নাহিদ

১৬

চুরির অভিযোগে ঝুলিয়ে মারধর, রিকশাচালকের মৃত্যু

১৭

যারা আ.লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে, জনগণ তাদের প্রত্যাখান করবে : আবু হানিফ

১৮

যবিপ্রবির এপিপিটি বিভাগে এক মাস বন্ধ ক্লাস পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি

১৯

ঢাবিতে এএইচএফবির বৈজ্ঞানিক সেমিনার অনুষ্ঠিত

২০
X