বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের আঘাতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সকল বৈশিষ্ট্য মুছে যেতে বসেছে। এটা নিশ্চিত করতেই আবারও বিরোধী নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার ও কারান্তরীণ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : আ.লীগকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় : চরমোনাই পীর
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এখন মধ্যযুগীয় ‘ডাইনি শিকার’ নীতি গ্রহণ করেছে। মধ্যযুগে ইউরোপে যেমন নারীদের ডাইনি হিসেবে অভিহিত করে হত্যা এবং জুলুম-নির্যাতন করা হতো, ঠিক তেমনি বাংলাদেশে বিএনপি এবং গণতন্ত্রকামী বিরোধী দল ও ভিন্নমতের মানুষদের অবরুদ্ধ করে নানা কায়দায় নারকীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে। যতই একদফার আন্দোলন দ্রুতগতিতে ধাবিত হচ্ছে, ততই এই সরকারের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুদ্গমের ন্যায় ক্রোধাগ্নি জ্বলে উঠছে। এরা বাংলাদেশকে বিরোধীদলশূন্য প্রান্তরে পরিণত করতে চায়।
আরও পড়ুন : ফখরুল দেখতে যাওয়ার পরই নুরকে জোর করে রিলিজ দেওয়ার অভিযোগ
তিনি বলেন, আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি এবং তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণীকে সাজা দেওয়ার পরেও নিজেরা স্বস্তি পাচ্ছে না, অজানা আতঙ্কে ভুগছে। তাদের গদি এখন নড়বড়ে অবস্থায়, যে কোনো সময় হুড়মুড় করে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় গুম, গ্রেপ্তার এবং জামিন না দিয়ে কারাগারে আটকিয়ে রাখার মতো অমানবিক আচরণে লিপ্ত রয়েছে। আওয়ামী লীগ কখনোই সদিচ্ছাপ্রসূত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করেনি। ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় এসেই ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য নিজেদের নানামুখী চক্রান্তে নিয়োজিত রাখে। ইতোমধ্যে বিএনপির কর্মসূচিতে বিপুল লোক সমাগম হওয়ায় সরকার বিচলিত হয়ে গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, একদিকে রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে বিরোধী দলের কর্মসূচিকে নৃশংস পন্থায় বানচাল করা, অন্যদিকে পর্দার আড়ালে গণতন্ত্রের সর্বশেষ নাম-নিশানা মুছে দিতে চলছে সর্বনাশা চক্রান্তের নানামুখী রোডম্যাপ। তাই এরা এখন গায়েবি মামলা কিংবা মামলা ছাড়াই গ্রেপ্তার করার নতুন তামাশা শুরু করেছে। বিভিন্ন এলাকার বিএনপির যেসব নেতারা জনপ্রিয়, বারবার সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন এবং আগামী নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন- এ ধরনের নেতাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে। এটি বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদের চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের স্বীয় উদ্দেশ্য হাসিলে সরকারের একটি হীন কৌশল।
আরও পড়ুন : অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ
তিনি দাবি করেন, বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর পাতা ফাঁদে কেউ পা দিবে না। শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী মানুষের অঙ্গীকার কখনোই নিস্ফল হবে না।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে জাতির দুর্দিন কখনোই শেষ হবে না। প্রতিবাদী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রক্ত ঝরানো হচ্ছে, করা হচ্ছে বেপরোয়া গ্রেপ্তার। মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী বাড়ি-ঘর, এলাকাছাড়া। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদসহ সাতজন নেতাকর্মী সরকারের চলমান হামলা, গ্রেপ্তার ও জুলুমের সর্বশেষ শিকার। তাদের অন্যায়ভাবে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। গ্রেপ্তার, হিংসা ও হানাহানি দিয়ে সরকার নিজেদের অনাচারগুলো ঢাকতে চায়। তিনি সালাহউদ্দিন আহমেদসহ সাতজন নেতাকর্মীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেন।
এ সময় গত ২৮ ও ২৯ জুলাই বিএনপির মহাসমাবেশ এবং ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আহত ও গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরেন রিজভী। তিনি জানান, ওই দুই কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলায় প্রায় ৮০০ নেতাকর্মী আহত এবং ৪ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন