সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন আগামী ১৮ মাসের মধ্যে হওয়া উচিত বলে যে মন্তব্য করেছে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাতে তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান জয়।
সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের দেওয়া টাইমলাইনের বিষয়ে নিজের সন্তুষ্টি প্রকাশ করে জয় আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাছে অন্তত এখন একটি প্রত্যাশিত টাইমলাইন আছে শুনে আমি খুশি।’
তবে নির্বাচন নিয়ে এই টাইমলাইন প্রত্যাশার তুলনায় অনেক দেরি বলেও মন্তব্য করে জয় বলেন, দেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে দেশের প্রকৃত সংস্কার এবং বৈধ নির্বাচন করা অসম্ভব।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখা হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে ছেলে জয় বলেন, দেশে ফেরার বিষয়টা শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করবে।
যদিও গত মাসে জয় জানিয়েছিলেন তার মা দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত। প্রসঙ্গক্রমে গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান দেশে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে যেন নির্বাচন হতে পারে, সে জন্য তিনি যে কোনো পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেবেন। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে বলে জানান তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর তার পূর্ণ সমর্থন আছে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান রয়টার্সকে বলেন, সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করার একটি পথের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।
সামরিক পোশাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আমি তাকে (মুহাম্মদ ইউনূস) সমর্থন করব। পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন। যেন তিনি তার কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। ড. ইউনূস দেশের বিচার বিভাগ, পুলিশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে সেনাপ্রধান বলেন, তবে ধৈর্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, যদি আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমি বলব, এ সময়ের মধ্যে আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যাওয়া উচিত।
এদিকে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গঠিত ছয়টি সংস্কার প্যানেলের সুপারিশ পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করা হলে এবং ভোটার তালিকা প্রস্তুত হলে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য, সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামানের সঙ্গে শেখ হাসিনার পারিবারিক আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানের কন্যা বেগম শারহনাজ কমলিকা রহমানের স্বামী সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামান। মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনার চিফ অব আর্মি স্টাফ ছিলেন। এই মুস্তাফিজুর আবার শেখ হাসিনার সম্পর্কে কাকা। অর্থাৎ সম্পর্কে শেখ হাসিনার বোন শারহনাজ কমলিকা রহমানের স্বামী ওয়াকার উজ-জামান।
মন্তব্য করুন