পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক অস্থিরতার ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব সংবিধান সংশোধন, সংস্কার কার্যক্রম, দেশের রাজনীতি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, পাবর্ত্য চট্টগ্রামের ঘটনাকে আমি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করি না। এর সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত আছে। একদিকে শূন্যতার সুযোগ নেওয়া, অন্যদিকে জিও পলিটিক্সে যে পরিবর্তন ঘটছে মিয়ানমারকে কেন্দ্র করে আশপাশের অঞ্চলে, ওইদিকে ভারতবর্ষের মনিপুরের যে বিদ্রোহ … এসবগুলোকে যদি আপনি আনেন …জিওপলিটিক্সের এ ঘটনাগুলো ভেরি সিগনিফিকেন্ট বলে আমি মনে করি। যেহেতু এখন কমেন্ট করাটা ঠিক হবে না।
তবে আমি মনে করি যে, এটা নিঃসন্দেহে একটা সরকারকে ডিস্টার্ব করা, বাংলাদেশের পলিটিক্সকে ডি-স্টেবেলাইজড করা। অর্থাৎ এখন যে প্রক্রিয়াটা চলছে অন্যভাবে যে, আপনার এটাকে (পরিবর্তনটা) যারা বিপ্লব বলছেন, একটা প্রতিবিপ্লব ঘটানো, যে সুফল আমরা অর্জন করেছি সেই সুফলটাকে নষ্ট করা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, একটা বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়াকে শুরু করার চেষ্টা করা।
তিনি বলেন, অন্যদিকে শেখ হাসিনা পার্শ্ববর্তী দেশে থেকে যে সমস্ত কথা বলছেন সেগুলো কতটুকু সত্য-মিথ্যা আমি জানি না। তবে সে কথাগুলো এখানে বড় ইম্পেক্ট তৈরি করছে। সব মিলিয়ে বিষয়গুলো খুব কমফোর্টেবল না, বেশ আন-কমফোর্টেবল… বলা যায় যে, উদ্বিগ্ন হবার কারণ আছে।
গত ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সচিবালয়ে আনসার বাহিনীর ঘেরাও, বিভিন্ন সংগঠনের নানা দাবি-দাওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মব লিঞ্চিং’, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার বিভিন্ন ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ উল্লেখ করে সরকারকে অস্থিতিশীল করতেই করা হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।
পাবর্ত্য চট্টগ্রামের অস্থিরতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, গতকাল শুক্রবার মেইন ঘটনাটা ঘটছে। আমাকে আমাদের দলে যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন দীপেন দেওয়ান…উনি আগে এমপি প্রার্থী ছিলেন… তিনি আমাকে ফোন করে বললেন যে, স্যার ইমিডিয়েটলি কারফিউ দিতে বলেন… কারফিউ ছাড়া একে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তখন আমি জানার পরে যাদের চিনি তাদের জানানোর পরে কারফিউ হয়নি… ১৪৪ ধারা দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে। ঠিক এফেক্টিভ কনট্রোল তারা করতে পারেনি… এর মধ্যে এটা (ঘটনা) বিস্তারলাভ করেছে।
এই যে একটা দেরি হচ্ছে এই দেরিটা কিন্তু ক্ষতির ব্যাপার হচ্ছে। এটাতে আমি তাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) দোষারোপ করছি না। যারা দায়িত্বে আছেন…ব্যুরোক্রেসি মেইনলি… তাদের দায়িত্ব হচ্ছে সরকারকে সঠিকভাবে পরামর্শ দেওয়া… এটা করা উচিত। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, এক্ষেত্রে অনেকটা গ্যাপ আছে। সমস্যাটা ওই জায়গায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার খুবই সিরিয়াস… তারা করতে চান… তারা সব কিছু করতে পারেন। আমার কথা হচ্ছে, আমরা সহযোগিতা করি। ইতোমধ্যে তারা অনেক বড় বড় কাজে হাত দিয়েছেন সেগুলো আমরা দেখি।
এই অবস্থার প্রেক্ষিতে বিএনপির পরামর্শ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, রেগুলার পলিটিক্যাল পার্টির সাথে বিশেষ মেইন পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সাথে কথা বলতে হবে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে হলো, পাবর্ত্য চট্টগ্রামে তো আমাদের চুক্তি আছে… এতদিন কোনো সমস্যা হয়নি।
এখানে শুধু পাবর্ত্য চট্টগ্রামের সমস্যা তা নয়, সামাজিক সমস্যা আছে… এই সমস্যাগুলো দীর্ঘকাল ধরে… আমরা সমাধান করিনি। আওয়ামী লীগ সরকার এতো কথা বলেছে, চুক্তি করেছে কিন্তু সমস্যার সমাধান করেনি। এটা তো একদিনে হবে না, ওদের সাথে বসতে হবে, কথা বলতে হবে, বিষয়গুলোকে আলাপ-আলোচনা করে একটা জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।
মন্তব্য করুন