অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ইউনূস গুড উইল বলে একটা কথা আছে। জনগণ সেই ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায়।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত মোহাম্মদপুর মডেল সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান সৈকতের শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা ও আর্থিক সহায়তা প্রদানকালে এ কথা বলেন তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এই আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
রিজভী বলেন, দেশে আইনের শাসন কায়েম করে জুলাইয়ের সকল হত্যাকারী ও অপরাধীর দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান না করলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিপ্লবী ভূমিকা মানুষের কাছে ম্লান হয়ে যাবে। ইউনূস গুড উইল বলে একটা কথা আছে। আমরা সেটার প্রতিফলন দেখতে চাই। সেই প্রতিফলন শুধু আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা থেকে নয়; দেশের মধ্যে সুশাসন, আইনের শাসন এবং ভয়ংকর জুলাইয়ে যে নারকীয় গণহত্যা হয়েছে- দ্রুত সেই অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে।
শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা অবৈধ লুটের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য পুতুলের মতো নিষ্পাপ শিশু, বাচ্চাদের রক্ত ঝরাতেও দ্বিধা করেননি।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সবার সমর্থন আছে। কিন্তু কাজের গতি যদি স্লো হয়, কাজের গতি যদি অত্যন্ত নিম্নগতির হয়, তাহলে তো এ দেশের মানুষের কাছে আপনারা দিনকে দিন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বেন। আপনারা একটি বিপ্লবী সরকার। এই কিশোর বাচ্চাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট পৃথিবী কাঁপানো যে বিপ্লব হলো, আপনারা তার সরকার। ওই সমস্ত অপরাধী ঘুরে বেড়ায়, তারা পিকনিক করে, লাঠি মিছিল করে, আর আপনারা যদি নিশ্চুপ থাকেন- তাহলে তো আপনাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকত নিজের জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে আমাদের মুক্ত বাতাসে নিয়ে এসেছে। কিন্তু তারও স্বপ্ন ছিল, অদম্য প্রত্যয় ছিল। সে একজন ভালো ছাত্র ছিল। একজন ক্রিকেটার হতে চেয়েছিল। এই দেশকে তার আরও অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। অথচ তার আগেই তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। তার বিদায় স্বাভাবিক ছিলো না। তার মতো শহীদদের জীবনের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গোটা জাতি কারাগার থেকে বেরিয়ে বিশুদ্ধ বাতাস নিতে পারছে। কিন্তু সৈকতের মতো এমন টগবগে একটি কিশোর ছেলে স্বৈরাচারের গুলিতে মারা যাওয়ায় আজ গোটা দেশ, গোটা জাতি শোকে স্তব্ধ।
তিনি এ সময় প্রশ্ন রেখে বলেন, নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কি শেখ হাসিনার এত রক্ত, এত লাশের দরকার ছিল। এই বাচ্চাদের লাশ দেখে তিনি খুশি হয়েছিলেন। আজ তার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। উনি উনার মেয়ের সঙ্গে দিল্লিতে একটি রেস্তোরাঁয় খাবার খাচ্ছেন। কতটা নির্লজ্জ!
রিজভী বলেন, দেশকে যারা নিজেদের কব্জায় নিতে চেয়েছিল, শেখ হাসিনা ছিলেন তাদের প্রতিনিধি। তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে তিনি নিজ দেশের তরুণদের রক্ত ঝরাতে দ্বিধা করেননি।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, সৈকতের মৃত্যুর ঘটনায় হতভাগ্যের পিতা একটি মামলা করেছেন। কিন্তু পুলিশ এখনও প্রধান আসামিসহ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আর পারবেই বা কী করে? পুলিশের অধিকাংশ কর্মকর্তা ছিলেন ভয়ংকর এক দূরাচারী সরকারের দোসর। স্বৈরাচারের রক্তপিপাসু শাসনকে তারা প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তা না হলে সৈকতকে গুলি করে হত্যাকারী এসআই শাহরিয়ার গ্রেপ্তার হতো। সাবেক ভূমিমন্ত্রী, সালমান এফ রহমানদের মতো দূরাচাররা পার পেয়ে যেত না। প্রশাসন ও আদালত নানা ধানাই-ফানাই করছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা ও তার দোসররা ১৫ বছর ধরে দেশটিকে খেয়ে ফেলেছে। আর তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী। শেখ হাসিনা তার প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপিদের মাধ্যমে হরিলুটের রাজ্য কায়েম করেছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তারা উপহাস করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের ব্যাংকে রাখা অর্থ লোপাট করায় সিদ্ধহস্ত ছিল। আর সেই অর্থ দিয়ে বিদেশে বাড়ি করবে, পাচার করবে। তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠলেই কণ্ঠরোধ করা হতো। তারা সেটাই করতে চেয়েছিল। তারা মনে করেছিলো- গণতান্ত্রিক শক্তি আর আওয়াজ করবে কোথা থেকে। জনগণ যে ভেতরে ভেতরে ফুসে উঠেছিল তারা সেটি টের পায়নি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, সংগঠনের আহ্বায়ক সিনিয়র সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মো. মোকছেদুল মোমিন মিথুন, যুবদল নেতা মেহেবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ নেতারা।
মন্তব্য করুন