কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রাজনীতিবিদদেরও সংস্কার হওয়ার আহ্বান ড. মঈন খানের

ছবি : কালবেলা
ছবি : কালবেলা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, এটি কোনো সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। রাজনীতিতে শেষ বলতে কোনো কথা নেই, এটি বলে বাংলাদেশের ছাত্রজনতা তরুণদের কাছে আর পাওয়া যাবে না। তিনি সব কিছু সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিবিদদেরও সংস্কার হওয়ার আহবান জানান।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে দ্য মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘জনগণের প্রত্যাশা : অন্তর্বর্তী সরকারের রোডম্যাপ’ শীর্ষক দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, গণতন্ত্রের মূল হলো ভিন্নমত, এটি না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না। এটি কিন্তু ’৭২ সালেও হরণ করা হয়েছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়া কিন্তু দেশের জন্য সুখকর নয়, ভিন্নমত হরণের ফলে কিন্তু তার অবস্থা এমন হয়েছে। ভিন্নমত দমন না করলে রাষ্ট্র পরিচালনা কোনো সমস্যা হয় না, এটা আমি মনে করি। ভিন্নমত দমন করেছিল পূর্বের পতিত স্বৈরাচার হাসিনা সরকার।

তিনি বলেন, বর্তমান যে অবস্থায় আছি, এই সময়ে আইন নিয়ে কথা বললে, এটি অবান্তর। ডকট্রিন অব নেসেসিটিতে একটি আইনগত নীতি, যা সংকটের পরিস্থিতিতে আইন বা নিয়মের প্রয়োগ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অনুমতি দেয়। এর মানে হল, যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া বা কাজ করা জরুরি হয় এবং সাধারণ আইন অনুসরণ করা সম্ভব নয়, তখন সেই পরিস্থিতিতে বিশেষ অনুমতি দিয়ে আইন প্রয়োগ করা হতে পারে। এটি সাধারণত সরকারি বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেখানে জরুরি অবস্থায় আইনগত বাধা অতিক্রম করতে হয়) আছি। এ সরকার ব্যর্থ হলে দেশের জন্য সামনে বিপদ অপেক্ষা করছে।

মঈন খান বলেন, আমরা এখানে একটি পর্যায়ে এসেছি, সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তাদের (অন্তর্বতী সরকার) যৌক্তিক সময় দিতে হবে। তবে অন্তর্বতী সরকারের মনে রাখতে এই সময় কিন্তু সীমাহীন নয়। এটা সরকারকে বুঝতে, কোন সময়টা যোক্তিক আর কোনটি যোক্তিক নয়। কোন সংস্কার প্রয়োজনীয় এটা সরকারকে বুঝতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাজনীতিবিদদের কথা কেন এ দেশের ছাত্র ও তরুণ সমাজ বিশ্বাস করে না, এটি হৃদয় থেকে খুঁজে বের করতে হবে, আত্মপোলব্ধি করতে হবে। আমার গলা ফেটে যখন কথা বলি, তখন কেন ছাত্র জনতা সেটি বিশ্বাস করে না, তারা মনে করে 'এটি কথার কথা'। আস্থা আনতে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবর্তন হতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সংস্কার করলে আগে রাজনীতির দিকে চোখ দেওয়া দরকার, যাতে রাজনীতিবিদদের লুটপাট, চাঁদাবাজি সব পরিহার করতে হবে। স্বৈরাচার যেন আবার ফিরে না আসে তাহলে সংবিধান সংস্কার করতে প্রয়োজন, এটা গণতন্ত্র।

অনেকে বলেছে, নির্বাচন করতে যা সংস্কার করা দরকার, সেটি করেন। রাজনৈতিক দল গুলো যে নির্বাচনের পর সংস্কার করবে, এটা জনগণের বিশ্বাস করে না। এটা আগেও দেখছে, নির্বাচনের পর রাজনৈতিক দল তাদের কমিটমেন্ট ভুলে যায়।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ফ্যাসিবাদের পেছনে কি শুধু আওয়ামী লীগ দায়ী, বিএনপি নয়? ’৭১ স্বাধীনতার পর একটি সংবিধানের বিপরীতে রাজনৈতিক দল গুলো ক্ষমতার অপ্রয়োগ করেছে। ’৯০ এর পরবর্তী একই ঘটনা।

তিনি বলেন, একটি ফ্যাসিবাদ হটিয়ে আরেকটি দল ক্ষমতায় আসবে, এটি তো শুধু নয়, ছাত্ররা যে ১৬ বছরের তৈরি হওয়া জমিনে রক্ত দিয়েছে। ছাত্র এখনো কারো প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেনি, দল যে কেউ গঠন করতে পারে, এটা নাগরিক অধিকার, তবে করতে হবে স্বতন্ত্রভাবে। ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে, এ ঐক্যকে কোনো রাজনৈতিক দল প্রতিপক্ষ ভাবলে সেটা হয়তো রাজনীতিকদের জন্য ভুল হবে।

সুব্রত চৌধুরী বলেন, একটা পাহাড় সমান সমস্যা নিয়ে একটি সরকার বসেছে। একটু ধৈর্যশীল হন। টানাটানি বন্ধ করেন। উল্টাপাল্টা বক্তব্য থেকে বিরত থাকেন। এখনো কিছু সেটাপ করতে পারিনি। কোনভাবেই এ সরকারকে ব্যর্থ করতে দেওয়া যাবে না। অনেকে বলেন ’৭১ ও ’৯০ এ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারিনি। এ বার যদি মিস হয়ে যায়, তবে এ প্রজন্ম তাদেরকে ক্ষমা করবে না।

অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ৭৫ বছরে দলের সভাপতি। যিনি নিজেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধর নেত্রী বলে দাবি করতেন তাহলে কোন কারণে তার নেতাকর্মীদের রেখে কেন পালিয়ে যেতে হল? কি এমন অপরাধ করেছেন তা খুঁজে বের করতে হবে? গুম-খুন-দুর্নীতি ও লুটপাট কোনো পর্যায়ে গেলে বাবা মা তার সন্তানকে নিয়ে শেখ হাসিনার পতনের জন্য রাজপথে নেমে আছে?

তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠী যদি দাবি করে তারা আন্দোলনে সবকিছু করেছে, তা ভুল করবে। ইতোমধ্যে তাদের মধ্যেও বিভাজন শুরু হয়েছে। মুলত ১৭ বছর আন্দোলনের শেষটা তারা করেছেন। সংস্কার কাজ শেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচন দিতে হবে। বাকি সংস্কার কাজ করবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার।

দি মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চেয়ারম্যান এডভোকেট রোখসানা খন্দকারের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্য সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলন সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, সাংবাদিক আবু সাইদ খান, মাসুদ কামাল, মেজর (অব.) জামাল আহমেদ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, কানাডা প্রবাসী হুমায়ুন খান প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের

মাদারীপুরে কৃষককে পিটিয়ে হত্যায় মানববন্ধন

জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডের টাওয়ার পদ্মায় বিলীন

দীঘিনালায় দুপক্ষের সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

তিন মাস ধরে ১৪শ চা শ্রমিকের মজুরি বন্ধ

নীতিমালার খসড়া অনুমোদন / সম্পদের হিসাব দিতে হবে উপদেষ্টাদেরও

জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডের টাওয়ার পদ্মায় বিলীন

বিটকয়েনে বার্গারের দাম পরিশোধ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৭

চর দখলের মতো সাংবাদিক সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টা চলছে : শওকত মাহমুদ

১০

নেতাকর্মীদের জরুরি নির্দেশনা দিল আ.লীগ

১১

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের নির্মাণসামগ্রী ও গবাদিপশু দিল বিএনপি

১২

ছেলে নিহতের চার ঘণ্টা পর মারা গেলেন বাবা

১৩

আন্দোলনে থাকা নেতাকর্মীদের পেছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক 

১৪

দেড় মাসেও হদিস মেলেনি বগুড়া থানার লুট হওয়া অস্ত্রের

১৫

চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দেশকে অকার্যকর করতে চায় : আহলে সুন্নাত

১৬

কুচক্রি মহল জাপা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দিয়েছে : চুন্নু

১৭

হেলিকপ্টারে চট্টগ্রামে নেওয়া হলো সাবেক এমপি ফজলে করিমকে

১৮

৫৬ জেলায় দাবদাহ, তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস

১৯

আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

২০
X