কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
১২ দলীয় জোট

বাংলাদেশকে নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র ও হুমকি বরদাশত করা হবে না

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১২ দলের বিক্ষোভ সমাবেশে কথা বলছেন নেতৃবৃন্দ। ছবি : কালবেলা
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১২ দলের বিক্ষোভ সমাবেশে কথা বলছেন নেতৃবৃন্দ। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশ নিয়ে কোনো রকম ষড়যন্ত্র ও হুমকি বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন সেজন্য ক্ষমা চাইতে হবে।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১২ দলের উদ্যোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এর আগ্রাসী হুমকির প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে নেতারা উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাব চত্বরে একটি সংক্ষিপ্ত মিছিল বের করেন নেতারা।

তারা বলেন, ভারতের আগ্রাসীনীতির ফলে প্রতিবেশী সব দেশের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান কেউই ভারতকে বিশ্বাস করে না। সবাই এখন ভারতের অবিবেচক ও নেতিবাচক আচরণে অতিষ্ঠ।

নেতারা আরও বলেন, ভারতের পুতুল শেখ হাসিনা সরকারের কারণে বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাংলাদেশের জনগণ ভারতের উৎপীড়নে ক্ষুব্ধ ছিল। খুনি হাসিনা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ভারত আরও দৃঢ়ভাবে বৈরী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ভারতের আগ্রাসী মনোভাব এবং কর্তৃত্বশীল আচরণকে বাংলাদেশের জনগণ কখনোই মেনে নেবে না।

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ১২ দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহ সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্য জোটের সিনিয়র সহসভাপতি শওকত আমীন, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি পিএনপি'র চেয়ারম্যান ফিরোজ মো. লিটন ও নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি মাস্টার এম এ মান্নান। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি পরিহার করে শক্তভাবে নতুন পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন করেছে। তাদেরকে ধন্যবাদ। ভারতের কাছ থেকে অবন্ধুসুলভ আচরণ মানতে পারি না। আমরা তাদেরকে বন্ধু ভেবে থাকি। বাংলাদেশের চারদিকে আসাম, মনিপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অশান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভারত যদি তার নীতি সংশোধন না করে তাহলে আল্লাহ জানেন তাদের ভাগ্যে কী হবে? ইতিমধ্যে ভারতের ৬০ মাইল এলাকা বিদেশি দেশের দখলে চলে গেছে। আমরা বাংলাদেশে শান্তি চাই। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অটুট রেখে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে দেশ পরিচালনা করতে চাই। ভারতের উচিত হবে বাংলাদেশের জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতি সমর্থন জানানো এবং শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়া।

প্রধান বক্তা বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ নানারকম সংকটে পড়েছে। তবুও সেখানকার মানুষ বলে এখনো কেনো শেখ হাসিনার বিচার হচ্ছে না। এই এক মাস ৫ দিনে শেখ পরিবারের কাউকে বিচারের আওতায় আনলে মানুষ বিশ্বাস করত। আমরা আপনাকে বিশ্বাস করি। জনগণ বিশ্বাস করে। কিন্তু তারা প্রশ্ন তুলছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলব, অপরাধীরা কোথায়?

তিনি আরও বলেন, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে বলব আপনারা মন্ত্রী আমিও কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। আপনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সে জন্য আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের মন বড়। তারা ক্ষমা করতে জানে। সুতরাং বাংলাদেশ নিয়ে তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দিলে সেটা কেউ মেনে নেবে না।

তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারা একটা নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিন। আজকে দেশবাসী সবাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি। আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা যাতে বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে না পারে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখা নিয়ে আগামীতে বাংলাদেশ পরিচালিত হবে ইনশাআল্লাহ।

শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী যেভাবে চোখ রাঙিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন তা আমরা সহ্য করব না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান অবিলম্বে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে ব্যাখা নেন। আমরা কিন্তু সহ্য করব না। আমাদের চোখ রাঙানি দেখিয়ে লাভ নেই।

শেখ হাসিনার দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি আগামীতে আন্দোলনকরা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব আপনারা আরও কঠোর হোন এবং কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করুন।

সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আমরা বরদাশত করব না। ভারতের আগ্রাসনের দিন শেষ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। সুতরাং বাংলাদেশের দিকে নজর না দিয়ে নিজের ঘর সামলান। মনিপুরে কিন্তু সাত রং এর পতাকা উড্ডীন হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ নিয়ে সাবধান। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে খুনি, দুর্নীতিবাজ এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার ভিত্তিতে আগামীতে বাংলাদেশ সংস্কার হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মুহিউদ্দিন ইকরাম বলেন, মনিপুর কিন্তু ইতোমধ্যে ভারতের পতাকা ছিঁড়ে ফেলেছে। তারা নিজেদের পতাকা উড্ডীন রেখেছে। সুতরাং ভারতকে বলব- আগে নিজেদের ঘর সামলান। বাংলাদেশ নিয়ে কোনো চক্রান্ত মেনে নেওয়া হবে না। এটা অলি-আউলিয়াদের দেশ। এটা সম্প্রীতির দেশ।

তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে যে ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন সেটা বাস্তবায়ন করুন। আমরা সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ চাই না। অবিলম্বে আপনারা রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।

লায়ন ফারুক বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিদায় হয়েছে তবে তাদের দোসররা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তারা বিভিন্নভাবে প্রতিবিপ্লব ঘটানোর স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে না। এখন সময় এসেছে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ করার। বিএনপি সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে যে ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে সেই মোতাবেক রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। না হলে শেখ হাসিনার মতোই বাংলাদেশ রয়ে যাবে।

অন্য বক্তারা বলেন, দেশের মালিক জনগণ অথচ ভারত বরাবরই জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে ছলে বলে কৌশলে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারকে রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কবর দিতে দ্বিধা করেনি।

নেতারা আরও বলেন, ভারতকে আগ্রাসী নীতি ও ভূমিকা ত্যাগ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি ন্যায়সংগত ও বন্ধুসুলভ আচরণে অভ্যস্ত হতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের আস্থা লাভ করতে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে, ৫৪ টি অভিন্ন নদীর ন্যায়সঙ্গত পানি বণ্টনের চুক্তি করতে হবে, খুনি হাসিনা এবং পলাতক অপরাধীদের বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণ করতে হবে। হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে বন্ধু হিসেবে পাওয়ার চেষ্টাই ভারতের বিচ্যুত পররাষ্ট্রনীতিকে যৌক্তিক কক্ষপথে ফিরিয়ে আনবে এবং সেটাই হবে ভারতের জন্য উত্তম পন্থা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিএমপির ২ থানায় নতুন ওসিসহ ৭ পুলিশ পরিদর্শকের পদায়ন

১৮ সেপ্টেম্বর : নামাজের সময়সূচি

এমবাপ্পে-এনড্রিকে ভর করে রিয়ালের জয় 

মহাসড়ক অবরোধ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিক্ষোভ

সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ গ্রেপ্তার

বড় জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শুরু মার্তিনেজের ভিলার

শিক্ষায় ৩১ বছরের বৈষম্যের অবসান চান মাউশির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

১২ জেলারসহ ৩৪ কারা কর্মকর্তাকে বদলি

ডিএমপির ৮ কর্মকর্তাকে বদলি

মাজার ভাঙার প্রতিবাদে হরিরামপুরে সমাবেশ

১০

ভারতবিরোধী পোস্ট শেয়ার করায় বিএনপি নেতার ভিসা বাতিল

১১

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান মো. শাহজাহানের

১২

সাড়ে ১০ কেজি স্বর্ণালংকারসহ মিয়ানমারের ২ নাগরিক আটক

১৩

অপহৃত ইউপি চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করল সেনাবাহিনী

১৪

আবাসিক হলের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঢাবি উপাচার্যের মতবিনিময়

১৫

বরিশাল মেট্রোপলিটনে চার থানায় নতুন ওসির যোগদান

১৬

পাবনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ / পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

১৭

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু

১৮

‘১০ হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে খুন করেছে আ.লীগ’

১৯

কারাগার থেকে পালানো যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

২০
X