স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি কমানো ও উন্নয়নের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৪ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটভুক্ত ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এসব প্রস্তাবনা দেন দলটির নেতারা।
এনডিপির চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহেরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দলের মহাসচিব আবদুল্লাহ-আল-হারুন (সোহেল), প্রেসিডিয়াম মেম্বার আবু বকর মিয়া, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস ও ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম।
প্রস্তাবনাগুলো হলো-
১। দেশের সব সিভিল সার্জন অফিসে ক্রয় সংক্রান্ত বিশেষ সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ২। বিশেষ অডিটের মাধ্যমে বিগত সরকারের (২০০৯ থেকে ২০২৪) স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি উদঘাটন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে অপরাধীদের মরণোত্তর বিচার করতে হবে। ৩। অনেক হাসপাতালে দুর্নীতির কারণে আমদানি করা চিকিৎসা সরঞ্জামাদি অকেজো পড়ে আছে। তা শনাক্ত করে চাহিদাকৃত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। ৪। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সব জেলা হাসপাতাল পরিদর্শন করে চিকিৎসা পেশাকে জনসেবা ও পুণ্যের কাজ হিসেবে গ্রহণ করার জন্য পেশার সবাইকে উদ্বুদ্ধ করবেন। ৫। মানুষের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় চিকিৎসককে ফি কমানো এবং অপ্রয়োজনীয় ডায়াগনোসিস পরিহার করার জন্য অনুরোধ করতে হবে। ৬। মফস্বল ও গ্রামের হাসপাতালে চিকিৎসকের ডিউটি ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ৭। অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় বন্ধ করে দেশে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে চিকিৎসার জন্য খুব একটা বিদেশে যেতে না হয়। ৮। বাংলাদেশি ওষুধের ব্যয় বিবেচনায় দাম নির্ধারণ করতে হবে। ৯। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়কার পলিসি অনুসরণ করতে হবে। ১০। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করতে হবে। ১১। বিগত সরকারের সময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তদের তদন্তপূর্বক শনাক্ত করে অযোগ্যদের নিয়োগ বাতিল করতে হবে। ১২। নিয়োগ সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। ১৩। মানুষের জীবন রক্ষার চিকিৎসায় ডাক্তার। তাই বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর দক্ষতা, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, যোগ্য শিক্ষকের প্রতুলতা ও পরিবেশ দেখে পারমিট পুনঃবিবেচনা করতে হবে। ১৪। হাসপাতালে বিশ্বমানের সেবার জন্য নার্স ও স্টাফদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সাক্ষাৎকালে ক্বারী আবু তাহের বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষার সরকার। তাই জনগণের স্বার্থে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকাণ্ডে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাবে।
আবদুল্লাহ-আল-হারুন (সোহেল) বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে স্বাস্থ্যবিভাগ ছিল দুর্নীতির অন্যতম আখড়া। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতি বাড়তে থাকে। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসন ও দুর্নীতির কারণে দেশের স্বাস্থ্য খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির লাগাম টানতে সরকারকে কঠিন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এনডিপির প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও এরগণ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু বকর মিয়া বলেন, সরকারি হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস লিমিটেডের ওষুধ নিম্নমানের হওয়ায় বিনাপয়সায় চিকিৎসাপ্রাপ্ত গরিব রোগী সহজে সুস্থ হতে পারে না। তাই সরকারকে এই দিকে নজর দিতে হবে।
মন্তব্য করুন