শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ৫৫ সদস্যবিশিষ্ট নাগরিক কমিটি গঠন

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ নাগরিক কমিটির। ছবি : কালবেলা
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ নাগরিক কমিটির। ছবি : কালবেলা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখতে, হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে, জনতাকে সংহত করে রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করতে এবং ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হয়েছে। ৫৫ সদস্যের এই কমিটিকে আরও বর্ধিত করা হবে, এমনকি গ্রাম পর্যায়েও কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে এই নাগরিক কমিটির। মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি ঘোষণা করেন মুখপাত্র সামান্তা শারমিন।

সামান্তা শারমিন এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার গঠিত হলেও পূর্বেকার ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এখনো জনগণের সাফল্যের প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে সক্রিয়। নিপীড়ক রাষ্ট্রযন্ত্রের ধ্বংসাবশেষ প্রতি পদে রাষ্ট্রের পুনর্গঠনকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজপথে নেমে আসা জনতাকে সংগঠিত করা, ৮ আগস্টে গঠিত সরকারকে যুগপৎ সহযোগিতা করা এবং জবাবদিহিতার আওতায় আনা, তদুপরি জনস্বার্থের পক্ষে নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে আমরা নাগরিক দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করছি। আমরা মনে করি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সংহতি ও প্রতিরোধের চেতনা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার শক্তি। এই নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীকে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে পূর্ণ বিজয় অর্জন করতে হবে। গণহত্যাকারীদের যথাযথ বিচার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন, জনস্বার্থের প্রতি সংবেদনশীল নীতি নির্ধারণ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পূর্বশর্ত।

নাগরিক কমিটি গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে কাজ শুরু করছে। অচিরেই সব মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করব। তৃণমূল পর্যন্ত এ কমিটির বিস্তৃতি ঘটানোর মাধ্যমে আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাব।

কমিটির প্রাথমিক কাজ প্রসঙ্গে সামান্তা শারমিন বলেন, এই কমিটির কাজ হবে- ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা; ছাত্র-জনতার উপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা; রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ও জবাবদিহিতার পরিসর তৈরি করা; বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা; দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা; জনস্বার্থের পক্ষে নীতি নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা; রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণী প্রস্তাবনা তৈরি ও সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষপে গ্রহণ করা এবং গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণআলোচনার আয়োজন করা।

আহ্বায়ক মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আপনারা সবাই জানেন- গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। সেই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনতা অংশগ্রহণ করে এক দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। সেই দফাটা হচ্ছে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। সেই প্রেক্ষিতে কাজ করতে আমাদের এই কমিটি গঠিত হলো। এই কমিটি এখানেই শেষ নয়, বরং এটা আরও বর্ধিত করা হবে। আমরা অতিসত্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করব। এই কমিটিকে আমরা একদম গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যাব।

তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট আহত ও নিহত হওয়াদের মনের আকাঙ্ক্ষা ছিল নতুন একটি বাংলাদেশ তৈরি করা। সে সময় আমিও শহীদ হতে পারতাম, আপনিও হতে পারতেন, কিন্তু যিনি জীবন দিয়ে গেছেন তিনি বাংলাদেশের জন্য এক অমূল্য সম্পদ দিয়ে গেছেন। তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে আমাদের এই বাংলাদেশটা গঠন করতে হবে। আমরা তরুণ প্রজন্ম এবং ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে রাষ্ট্রের পুনর্গঠনে বিনিয়োগ করব। গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে আমরা সব বাধার প্রতিরোধ গড়ে তুলব, দেশি-বিদেশি সব চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেব। জনতা বর্তমানে যে সরকার গঠন করেছে সেখানে আমাদের পুনর্গঠনের কাজ রয়েছে। আমরা সেগুলোতে অতি দ্রুত কাজ শুরু করব।

নাসির আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো রাষ্ট্র কাঠামোর পুনর্গঠন। রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে শুধু রাজনৈতিক দল থাকে না, সিভিল সোসাইটি থাকে, ব্যবসায়ী, স্বাস্থ্যসেবী, প্রবাসী থেকে শুরু করে সবাই থাকে। অর্থাৎ প্রত্যেকটা সেক্টরেই পুনর্গঠনের জন্য তরুণদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদের নিয়ে আমরা কাজ করব। আমরা কোনো দল গঠনের কাজে নামিনি। কোনো দল, স্বাস্থ্য খাত, ব্যবসায়ী, মিডিয়া অর্থাৎ যা কিছুরই পুনর্গঠন প্রয়োজন, তাই করা হবে এই কমিটির মাধ্যমে।

আখতার হোসেন বলেন, আমরা বাংলাদেশের তরুণ, যুবক, ছাত্র-জনতা সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এ দুটো বিষয়কে শতভাগ সফল করে নিয়ে আসতে চাই।

এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে নিহত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র শহীদ আহনাফ আবির আশরাফ উল্লাহর বোন সাইয়্যেদা আক্তার এবং শহীদ রায়হানের বোন স্বর্ণা আক্তার ও ভাগনি কাঁদোস্বরে স্মৃতিচারণ করেন এবং ঘাতকদের অতিদ্রুত চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান। এছাড়া, শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায় সেজন্য গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে নাগরিক কমিটিকে দেশ পুনর্গঠনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- আরিফুল ইসলাম আদীব, সাইফ মোস্তাফিজ, মনিরা শারমিন, নাহিদা সারোয়ার চৌধুরি, সারোয়ার তুষার, মুতাসিম বিল্লাহ, আশরাফ উদ্দিন মাহদি, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, অনিক রায়, জাবেদ রাসিন, মো. নিজাম উদ্দিন, সাবহানাজ রশীদ দিয়া, প্রাঞ্জল কস্তা, মঈনুল ইসলাম তুহিন, আব্দুল্লাহ আল আমিন, হুযাইফা ইবনে ওমর, শ্রবণা শফিক দীপ্তি, সায়ক চাকমা, সানজিদা রহমান তুলি, আবু রায়হান খান, মাহমুদা আলম মিতু, অলিক মৃ, সাগুফতা বুশরা মিশমা, সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ, তাসনিম জারা, মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, মো. আজহার উদ্দিন অনিক, মো. মেসবাহ কামাল, আতাউল্লাহ, এস. এম. শাহরিয়ার, মানজুর-আল-মতিন, প্রীতম দাশ, তাজনূভা জাবীন, অর্পিতা শ্যামা দেব, মাজহারুল ইসলাম ফকির, সালেহ উদ্দিন সিফাত, মুশফিক উস সালেহীন, তাহসীন রিয়াজ, হাসান আলী খান, মো. আব্দুল আহাদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, মশিউর রহমান, আতিক মুজাহিদ, তানজিল মাহমুদ, আবদুল্ল্যাহ আল মামুন ফয়সাল, মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, এস.এম. সুজা, মো. আরিফুর রাহমান, কানেতা ইয়া লাম লাম, সৈয়দা আক্তার, স্বর্ণা আক্তার, সালমান মুহাম্মাদ মুক্তাদির এবং আকরাম হুসেইন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল গৃহবধূর

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আটক

দেশের ৩ অঞ্চলে হিট ওয়েভের শঙ্কা

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ

চট্টগ্রামে হাতকড়া পরে ফিরল সাবেক এমপি ফজলে করিম

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রতিরোধে একমত যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স

প্রধান উপদেষ্টার / সহকারী প্রেস সচিব হলেন দুই তরুণ সাংবাদিক

শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব, শিক্ষাব্যবস্থায় অচলাবস্তা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে ধূম্রজাল

গণপিটুনির ঘটনায় / জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার

১০

জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তারেক রহমান

১১

বিশেষ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার দাবি লায়ন ফারুকের

১২

জাবিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা, এক সমন্বয়ককে অব্যাহতি

১৩

ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের

১৪

মাদারীপুরে কৃষককে পিটিয়ে হত্যায় মানববন্ধন

১৫

জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডের টাওয়ার পদ্মায় বিলীন

১৬

দীঘিনালায় দুপক্ষের সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

১৭

তিন মাস ধরে ১৪০০ চা শ্রমিকের মজুরি বন্ধ

১৮

নীতিমালার খসড়া অনুমোদন / সম্পদের হিসাব দিতে হবে উপদেষ্টাদেরও

১৯

জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডের টাওয়ার পদ্মায় বিলীন

২০
X