সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ‘মদদপুষ্ট’ নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বুধবার (০৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক অনুষ্ঠানে দেশের দুই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে বিগত শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা বসে আছে অভিযোগ করে অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্যোগ নিতে বলেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই নেতা।
তিনি বলেন, এখন অতীব জরুরি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা, এর সাথে জরুরি দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠন করা। কারণ এই দুটা প্রতিষ্ঠানে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। এই সমস্ত সুবিধাভোগীদের ঝেটিয়ে বিদায় করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা আশা করি, এই সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল... তারা তাদের সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন কমিটির আহ্বায়ক এজেডএম জাহিদ হোসেন।
শেখ হাসিনার শাসনামলে গঠিত নির্বাচন কমিশন তাদের ‘তল্পিবাহক’ ছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন এই দেশের বিগত রেজিম যেটি ছিল সেটিকে পাকাপোক্ত করার জন্য যারা সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে সেটি হলো এই ভুয়া নির্বাচন কমিশন। তারা দলদাস তল্পিবাহক একটি কমিশন। ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও আজ তাদের গঠন করা নির্বাচন কমিশন বহাল তবিয়তে বসে আছে। যারা গত ৭ জানুয়ারি ‘আমি আর ডামি’র নির্বাচন করেছে, যারা এক সময়ে দিনের ভোট রাতে করেছে, যারা এক সময়ে বিনা ভোটে এমপি উপহার দিয়েছে... এই তিনটা নির্বাচন কমিশন আমরা এরকমই দেখেছি। বর্তমান এই কমিশন আজ অবধি নির্লজ্জের মতো বসে আছে। আমি মনে করি, এই নির্বাচন কমিশনের বোধদয় হওয়া উচিত... জনগণের রোষ থেকে বাঁচার জন্য পদত্যাগ করে এই সরকারকে সুযোগ দেওয়া উচিত নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের।
অন্যথায় ‘সত্যিকার অর্থে জনরোষ থেকে কেউ রক্ষা পাবে না’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দুদকের যে সমস্ত কমিশনার ও কর্মকর্তারা এখনো বসে আছেন বিগত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে... অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, অতীব জরুরি দুদক পুনর্গঠন করা। কারণ দুদকে পতিতদের আত্মীয়স্বজন, উনাদের সুবিধাভোগী লোকজনকে বসিয়ে রেখে তৎকালীন বিরোধীদলসহ দেশের মানুষের ওপর র্নিযাতন চালানো হয়েছে। আজকে ১৮ লাখ কোটি টাকা বলেন আর ১৫ লাখ কোটি টাকা বলেন পাচার কৃত অর্থ ফেরত আনতে হলে, ব্যাংক লুটের অর্থ ফিরিয়ে আনতে হলে, সেই হোক সংবাদ কর্মী অথবা চিকিৎসক। স্বাস্থ্যখাত, আইসিটির দুর্নীতি বের করতে হলে অথবা গেটওয়ের দুর্নীতি বের করতে হলে শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন দরকার। নির্মোহভাবে যারা দায়িত্ব পালন করবেন... এসব সুবিধাভোগীচদেরকে ঝেটিয়ে বিদায় করা সরকারের দায়িত্ব।
বন্যায় ত্রাণসামগ্রী বণ্টন বিষয়ে ডা. জাহিদ বলেন, বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ দুর্গত মানুষের জন্য নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ত্রাণ সামগ্রী দিচ্ছে। আমি দুদিন আগে বলেছিলাম প্রায় ১০ কোটি টাকার ত্রাণসামগ্রী বন্যাকবলিত এলাকায় সমন্বিতভাবে বিতরণ করা হয়েছিল আজ থেকে তিনদিন আগে। আমাদের এই ত্রাণের কার্য্ক্রম, ব্যাপকতা, গ্রহণযোগ্যতা, অংশগ্রহণ এমন আকার ধারণ করেছে আমরা গতকাল রাত পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটি টাকার অধিক ত্রাণসামগ্রী এবং নগদ অর্থ দুর্গত মানুষের মাঝে বিতরণ করতে পেরেছি।
বিতর্কিতদের ত্রাণ গ্রহণ করছি না উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, আমরা সুস্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এই ত্রাণ আমরা শুধু একটি জিনিস খেয়াল রাখছি নৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে যারা আছেন তাদের ত্রাণ আমরা গ্রহন করছি না। মনে রাখতে হবে আমরা চাই, বিগত রেজিমে সুবিধাভোগী মানুষ যাতে এখানে ঢুকে না পড়ে, ত্রাণ দিয়ে নিজেকে আড়াল করতে না পারে সেই বিষয়টি বিএনপি অত্যন্ত সচেতনতার সাথে খেয়াল রাখছে। দুই একটি জায়গায় একটু ভুল হয়েছিলো আমরা তাদের সেই ত্রাণ সহায়তা ফিরিয়ে দিয়েছি। কাজেই আমরা এই ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ... এই ত্রাণে অংশগ্রহণ করছে এদেশের বেশিরভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, জাতীয়তাবাদী পরিবার এবং সেই সাথে সাধারণ শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করছে।
তিনি জানান, বন্যার্তদের জন্য খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ আরও দুদিন চলবে। এরপর বিএনপি পুনর্বাসন কাজে নামবে। এর মধ্যে থাকে বন্যাকবলিত এলাকায়, মানুষের বাড়িঘর নির্মাণে সহযোগিতা করা, গবাদি-পশু দিয়ে সহায়তা করা, বীজ সরবারহ করা, শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বই-খাতা প্রভৃতি কাজ সাধ্যমত বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় করবে।
তিনি বলেন, একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে... আমরা তো সরকার না। সরকার তার নিজস্ব কার্য্ক্রম করছে। সরকারের পাশাপাশি বিএনপি রাজনৈতিকদল হিসেবে ব্যক্তি ও জনগণেরদল... সেই জন্য দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরামর্শক্রম এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনায় এই ত্রাণ কার্য্ক্রম চালাচ্ছে। আমরা বিএনপি পরিবার বন্যার্তদের পাশে আছে, থাকবে।
সংবাদ সম্মেলন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব ও ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম আজাদ, সদস্য মীর সরফত আলী সপু, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন