কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সংস্কার ও নির্বাচনকে পাশাপাশি নিয়ে যেতে হবে : মঈন খান

সংস্কার ও নির্বাচনকে পাশাপাশি নিয়ে যেতে হবে : মঈন খান

সংস্কার ও নির্বাচনকে পাশাপাশি নিয়ে যেতে হবে মন্তব্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন বলেছেন, আজকে সরকার যৌক্তিক সময় দাবি করছে, বিষয়টি এমন অবস্থান থেকে দেখতে হবে। যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করা কঠিন। তিনি বলেন, দেশের বিষয়ে যে কোনো সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব এখন বর্তমান সরকারের। মানুষ জবাব চাইছে বিএনপির কাছে। কারণ মানুষ মনে করছে বিএনপি সরকারে চলে এসেছে। মানুষের এই পারসেপশনের বাস্তবতা অস্বীকার করা যাবে না।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গুলশানের একটি হোটেলে ‘গণতন্ত্র উত্তরণে অন্তর্বতী সরকার তথা রাজনৈতিক দলের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকে অত্যাবশকীয় সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়াকে পাশাপাশি রাখার দাবি জানিয়েছে, রাজনৈতিক শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজ। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার তাদের নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়াও বৈঠকে উঠে আসে, সংস্কারের পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়। এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় ও খান ফাউন্ডেশন।

দ্য মিলিনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারপারসন, বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ অ্যাডভোকেট রোখসানা খন্দকারের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নুর, আইন ও সালিশ কেন্দ্রর সাবেক মহাসচিব নূর খান লিটন, সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ফেমার সাবেক সভাপতি মুনিরা খান, মায়ের ডাকের সমন্বক সানজিা ইসলাম তুলি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে সহসভাপতি তানিয়া রব, ড. শায়ন্ত সাখাওয়াতসহ অনেকে।

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এই সরকারকে ম্যান্ডেট দিয়েছে ছাত্র-জনতা। আজকে ৫৩ বছর পরে ছাত্র জনতা যা করছে তা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। যা কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারেনি। এর কারণও যৌক্তিক- কারণ আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় দিতে চেয়েছিলাম। আমরা ১৭টি জীবন দিয়েছি আর ছাত্ররা ১৭দিনে ১৭শ জীবন দিয়েছে। এ কারণেই তারা সফল হতে পেরেছে।

তিনি বলেন, ছাত্র জনতা যা পেরেছে তা রাজনৈতিক দল করতে পারেনি; কারণ ছাত্রদের কোনো পিছুটান ছিল না। বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, গণতন্ত্র পুনরূপান্তর করতে সুনির্দিষ্ট কিছু সংস্কার প্রয়োজন। কারণ সব সংস্কার নয়, এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার ও নির্বাচনকে পাশাপাশি নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে অন্তবর্তী সরকারের উচিত হবে পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কাঠামো পরিবর্তন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়, জনগণই দিবে অন্য কেউ নয়। এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব একটা সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। বর্তমান সরকারের উচিত এই মুহূর্তে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা; কারণ কোনো পাইপলাইন ছাড়া যে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে দেশ চালানো অসম্ভব।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, একটি কুচক্রী মহল ছাত্রদের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র করছে; এটা হতে দেওয়া যাবেনা। এসব ব্যাপারে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মহাসচিব সাইফুল হক বলেন, আমাদের লড়াইটা ছিলো ১৬ বছরের আর ছাত্র- জনতার আন্দোলন শেষ হলো ৩৬ দিনে। ১৬ বছরে আমরা অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে সরকার পতনের যে পেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিলাম, ছাত্ররা এসে শেষ ধাক্কা দিয়েছে। সরকার বলছে সংস্কার করবে এটা তাদের একার কথা নয় সকল রাজনৈতিক দলের একই দাবি। এই মুহূর্তে হাসিনার বিদায়ে খুশি হলে চলবে না; ৩১ দফা বাস্তবায়নে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার বলছে সংস্কার হলে নির্বাচন, এটা খুবই হতাশার কথা। সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও জরুরি।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ছাত্রজনতার জয় পুরো দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এখন পুরোপুরি গণতন্ত্র ফেরাতে সংস্কার জরুরি। দেশে একটা নির্বাচন ভালোভাবে করতে হলে প্রশাসনকে সাজিয়ে জনবান্ধব পুলিশ গড়ে তুলতে হবে। পুলিশ, সিভিল এডমিনিস্ট্রেশন সব নতুন করে সাজাতে হবে।

মান্না বলেন, একটি উপযোগী ভোট করতে কতোটা সময় লাগতে পারে সে হিসেব করেই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সময় নিতে হবে। কোথায় কোথায় অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাজ করতে হবে; তা খুঁজে বের করে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সবাই মিলে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশ সংস্কারের কাজে এগিয়ে যেতে হবে। নির্বাচনের টাইমফ্রেম বেঁধে দেওয়া এই মূহুর্তে ঠিক হবে না। ড. ইউনুসের উচিৎ হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই দেশ সংস্কারের কাজ করা। ড. ইউনুসের সরকারে কোনো রাজনৈতিক দলের না থাকার কারণে নতুন সংকট সৃষ্টি হওয়ারও আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।

গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা এখন স্বস্তির মধ্যে আছি। তবে অনেক পাপিষ্ঠ আমাদের আশপাশে ঘুরছে। মাঠে ময়দানে জাতীয় পাটি ঘুরে বেড়াচ্ছে; যারা ছাত্র-জনতার আন্দোলন বিবৃতি দিয়ে সমর্থন দিয়েছিল মাঠে নামেনি। তারা পতিত স্বৈরাচারের সঙ্গে মিলে নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছিল। এখন এসব শত্রুদের পরিত্যাগ করতে হবে। আন্দোলনে সকল শহীদের পরিবারকে খুঁজে বের করে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। এই সরকারকে চাপাচাপি করা যাবে না, তাদের সস্কারের সময় দিয়ে তাদের কাজে সহায়তা করতে হবে।

দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ছাত্র - জনতার আন্দোলনে দেশ নতুন করে স্বাধীন হওয়ার পরে এখন পরিবর্তন কিভাবে তা নিয়ে ভাবতে হবে। তবে পরিবর্তন কারো মধ্যেই তেমন হয়নি। ক্ষমতার অপব্যাবহার কমাতে হবে, অতীতের স্বৈরাচার শাসকের পতন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন খোলসে আত্মপ্রকাশ করতে হবে; যদি তারা গণতন্ত্রকে দেশে আবার দেশে ফিরিয়ে আনতে চায়।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বিএনপিকে সবচেয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে সব পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের দায়বদ্ধ হবেন সকল নাগরিকের কাছে। কাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে তাদের হলফনামা পরীক্ষা করে মনোনয়ন নিশ্চিত করুন। বিএনপির জন্য এবারের নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হবে অত্যন্ত কঠিন। তাই তাদের ধৈর্য ধরে অন্তবতীকালীন সরকারকে তারা সহায়তা করুক। কারন এই সরকার ব্যর্থ হলে বিপ্লবের সকল অর্জন ব্যার্থ হয়ে যাবে। তবে এই মুহূর্তেই একটা নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ সামনে এনে সংবিধান সংশোধন জরুরি।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, এই আন্দোলন ২০০৮ সালে আমরাই লিড দিয়েছিলাম। এখনকার মতো ভুক্তভোগীদের সহায়তা করতে পারিনি এটা অত্যান্ত কষ্টের। ধারাবাহিকভাবে এ আন্দোলনে সব শ্রেণিপেশার মানুষের সম্পৃতা সমান। গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিএনপি জামায়াতে মতো মেজর রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত আন্দোলনের ফল হাসিনা সরকারের বিদায়।

তিনি আরও বলেন, এখনো চক্রান্ত চলছে। পুলিশ প্রশাসনকে এই সরকার এখনো নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি, এটা অত্যন্ত জরুরি। প্রসাশনকে ‘মাস্ট বি ক্লিন’ করতে হবে। বিচার বিভাগ এখনো নিরপেক্ষ নয়, যেখানে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন। নতুন নির্বাচন কমিশন, দুনীতি দমন কমিশন দরকার। তিনি বলেন, একটি অনির্বাচিত সরকার বেশিদিন থাকলে; সেখানে ফরেন ইনভেস্টমেন্ট হবে না। এজন্য নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ সামনে সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের অন্তবতীকালীন সরকারে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া ছাড়া সংকটের সমাধান হবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কর ফাঁকির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান

নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে ডিএমপির আর্থিক সহায়তা

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে অভিযান তিতাসের 

আমেরিকান দূতাবাসে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া

আইনজীবী হত্যা : বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে সিএমপির বিৃবতি

লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইরানের প্রতিক্রিয়া

হঠাৎ জর্ডান সীমান্তে গর্ত খুঁড়ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী

কুষ্টিয়ায় টিসিবি পণ্য কিনতে গিয়ে প্রাণ গেল দুই নারীর

কিছু মানুষ জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে : মির্জা ফখরুল

মিতু হত্যা মামলা / বাবুল আক্তারের জামিন

১০

হবিগঞ্জে দুপক্ষের সংঘর্ষে ওসিসহ আহত ৩০

১১

চিঠির সঙ্গে বিপদ ডেকে আনছেন না তো?

১২

ইসকন নিষিদ্ধ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন

১৩

প্রকাশ্যে এসেই ৫২ প্রস্তাব দিলেন শাবিপ্রবি শিবিরের সভাপতি-সেক্রেটারি

১৪

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের মৃত্যু, বয়স কত?

১৫

‘আমার বাবা নির্দোষ, আমার বাবার চাকরি ফেরত চাই’

১৬

চাঁদাবাজির মামলা থেকে তারেক রহমানকে অব্যাহতি

১৭

চীন যাচ্ছেন জামায়াতসহ কয়েকটি ইসলামী দলের নেতারা

১৮

সচিবালয়ে বিক্ষোভ, নিরাপত্তা জোরদার

১৯

চট্টগ্রাম আদালতের কার্যক্রম বন্ধ

২০
X