রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:৩৪ পিএম
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৬:০১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রধান উপদেষ্টাকে যেসব প্রস্তাব দিল খেলাফত মজলিস

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে খেলাফত মজলিসের নেতারা। ছবি : সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে খেলাফত মজলিসের নেতারা। ছবি : সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে বসেছে খেলাফত মজলিসের একটি প্রতিনিধি দল। শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকাল ৩টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দলটির নেতারা প্রবেশ করেন।

প্রতিনিধি দলে রয়েছেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী ও অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম। সংলাপে উপস্থাপন করা হয় বেশ কিছু প্রত্যাশা ও সংস্কার প্রস্তাবনা।

খেলাফত মজলিসের প্রত্যাশা ও আশু সংস্কার প্রস্তাবনা

১. মানবতাবিরোধী ও গণহত্যাকারী খুনি হাসিনাকে দ্রুত দেশে এনে বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা এবং স্বৈরাচারের দোসর, লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের ‘বিশেষ ট্রাইবুনালে’ দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

২. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে শহীদ, চিরতরে অক্ষম ও আহতদের দ্রুত তালিকা প্রণয়নপূর্বক ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা অনুযায়ী আশু ও ক্ষেত্র বিশেষে দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে জুলাই বিপ্লবে শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করতে হবে।

৩. দেশের ধ্বংসপ্রায় বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ, অর্থ ও ব্যাংকিং বিভাগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ সব বিভাগকে দ্রুত সংস্কারের আওতায় এনে মানুষের কল্যাণে কর্মক্ষম করে তুলতে হবে।

৪. দেশের আইন সভা-জাতীয় সংসদ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক বিভাগ যেন স্বাধীনভাবে ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সমন্বয় করে স্বার্থক ও সুন্দরভাবে চলতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।

৫. ভারতের সেবাদাস পতিত হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পাদিত সব চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন এবং দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল ও ক্ষেত্র বিশেষে চুক্তির ধারা সংশোধন করতে হবে।

৬. বিডিআর হত্যাকাণ্ডের অপ্রকাশিত তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ, প্রয়োজনে নতুন তদন্ত কমিশন গঠন এবং প্রকৃত দায়ীদের শনাক্ত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে শাপলা চত্বর হত্যা, সাগর-রুনি হত্যা, ‘আয়নাঘর’ কাণ্ডসহ সব গুম ও খুনের যথাযথ বিচার করতে হবে।

৭. রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও দমনপীড়নের উদ্দেশ্যে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী, আলেম-উলামাসহ বিরোধী মতের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।

৮. জুলাই বিপ্লবের মূল নিয়ামক ছাত্র-জনতার ঐক্যকে সংহত ও এগিয়ে নিতে হবে। বিপ্লব বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে গড়ে ওঠা ঐক্যকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আরো আধুনিক ও শক্তিশালী করা এবং সক্ষম সকল নাগরিককে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে দ্রব্যমূল্য কমানো, ভারতের পানি আগ্রাসন মোকাবিলা ও পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

১০. বিপ্লব-পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর দ্রুত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, সংস্কার কার্যক্রম জোরদার এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে যৌক্তিক দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১১. আওয়ামী দলীয় ক্যাডারদের হাতে থাকা সকল বৈধ-অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১২. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আশু সংস্কার বিষয়ে খেলাফত মজলিসের প্রস্তাবনা

১. সরকার ব্যবস্থায় সংস্কার : দেশের বর্তমান ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে যে ব্যাপক ক্ষমতা ও স্বেচ্ছাচারী হওয়ার প্রভূত সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা দূরীকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য বিধান করতে হবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি কেউই যেন একাধিক্রমে দুই মেয়াদের বেশি স্বপদে থাকতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না।

২. নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার : অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা চালু করা। সৎ ও যোগ্য প্রার্থীরা যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে সেজন্য নির্বাচনী ব্যয় কমানো, শুধু নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে প্রার্থীদের নির্বাচনী সভার আয়োজন করা এবং অর্থ ও পেশিশক্তির দাপট নিবারণসহ সব অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে। নিম্ন কক্ষে সংসদীয় আসন ৫০০ তে উন্নীত করার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারী দল থেকে স্পিকার ও বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার করতে হবে।

৩. স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সংষ্কার : স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তাকে স্থানীয় উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিভাগ স্থানীয় সরকারের অধীনে দিতে হবে। সংসদ সদস্যরা যাতে দেশের আইন ও নীতি প্রণয়নের কাজে ব্যস্ত থাকেন ও স্থানীয় সরকারের কাজে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ না করেন তার কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

৪. প্রশাসনিক সংষ্কার : সীমাহীন দলীয়করণের মাধ্যমে প্রশাসনের সর্বস্তরে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার যে প্রচণ্ড ক্ষতের সৃষ্টি করে গেছে তা দ্রুত দূর করার জন্য প্রশাসনিক সংষ্কার কমিশন গঠন করে জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সর্বত্র সুষ্ঠু নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা বিধান নিশ্চিত করতে হবে যাতে প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।

৫. অর্থ ও ব্যাংক ব্যবস্থা সংস্কার : দুর্নীতিবাজ মাফিয়া হাসিনা সরকার দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থায় যে সীমাহীন দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা ও দূরাবস্থা সৃষ্টি করেছে দ্রুত আর্থিক সংস্কার কমিশন গঠন করে তা উত্তরণে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও ইতিবাচক ও আস্থার পবিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনতে হবে। দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রণয়নে গঠিত জাতীয় কমিটি যাতে দ্রুত তা প্রণয়ন ও প্রকাশ করে তার ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।

৬. শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার : দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে মানসম্মত নৈতিক, কারিগরী ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে দ্রুত শিক্ষা কমিশন গঠন, নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তণ এবং চলমান শিক্ষানীতি ও ক্রম বাতিল করতে হবে। ৭. আইনি সংস্কার : ব্যাপকভাবে সমালোচিত বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল, আইসিটি ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংশোধন এবং অনাস্থা প্রস্তাব ও বাজেট প্রস্তাব পাশের ক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রয়োগের ধারা বাতিল করতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত করার জন্য ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার প্রবর্তিত বিচারপতি অভিশংসন আইন বাতিল করতে হবে। বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে প্রতিটি প্রশাসনিক বিভাগে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গ্রেপ্তার

বরকত উল্লাহ বুলুর ছেলের উপর চলা পাশবিক নির্যাতনের করুণ কাহিনি

বগুড়ায় সাবেক দুই এমপিসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

‘আমার মতো কষ্ট দুনিয়াতে কারু নাই’

ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ, সম্পাদক আরিফ

বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তার খরচ নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহর নতুন পোস্ট

ফেনীতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বন্যাকবলিত মানুষ 

ফেনী ও কুমিল্লায় কৃষকদের মাঝে আনসারের ধানের চারা বিতরণ

রূপগঞ্জে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৩০

এই জমিনে কোনো জালেমকে ছাত্র-জনতা বরদাশত করবে না : হেফাজতে ইসলাম

১০

মহেশপুরের শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক মাসুম, শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিকা তুহিন

১১

কুয়াকাটায় হোটেল থেকে তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

১২

ব‌রিশা‌লে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন প্রত্যাহা‌রের দাবি

১৩

খুনের বদলা খুন চাই না, আমরা চাই সমতার চৌদ্দগ্রাম : ডা. তাহের

১৪

এক হেলিকপ্টার থেকে ত্রাণ, অন্যটি থেকে গুলি 

১৫

প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করল জাতীয় নাগরিক কমিটি

১৬

সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদে কল্যাণ ফ্রন্টের মানববন্ধন

১৭

ফানাই নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে সড়ক

১৮

আনিসুল ও সালমানের বিরুদ্ধে এবার অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রা রাখার মামলা

১৯

যশোরে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড

২০
X