শিক্ষাঙ্গনে অরাজকতা বন্ধ, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু এবং দেশের সব ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব অবসানের দাবি জানিয়েছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাগীব নাঈম, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সভাপতি অঙ্কন চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার এবং বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিকা প্রিয়া স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এসব মন্তব্য করা হয়।
জোটটি বলছে, দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতাদর্শধারী শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার সংকুচিত করা হচ্ছে। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পাঁয়তারা শিক্ষাঙ্গনে ফ্যাসিবাদী মনন গড়ে তুলবে। এই বিরাজনীতিকরণের রাজনীতি গণঅভ্যুত্থান চেতনার পরিপন্থি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনে প্রবল বৈষম্য, অগণতান্ত্রিক পরিবেশ ও রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থান একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষাকে জাগ্রত করেছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের অবসান হলেও এ দেশে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটেনি। তাই গণমানুষের এই রাজনৈতিক জাগরণ পরবর্তী যে কোনো শাসকের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। ফ্যাসিবাদী শোষণ যন্ত্র হিসেবে বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা জনগণকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করতে চায়। এর অংশ হিসেবে জনগণের নানা অংশে বিভাজন সৃষ্টি করা, জনগণের রাজনৈতিক অধিকার সংকুচিত করা ও নানা আইওয়াশের মধ্যে জনগণকে ব্যস্ত রাখার কৌশল কার্যত ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখার কৌশল।
নেতারা বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পরিবেশ, অবকাঠামোগত সংকট, প্রশাসনিক গণতন্ত্রায়ন, আবাসন-পরিবহন সংকট, সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ গোটা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ থাকলেও শুরুতেই রাজনীতি নিষিদ্ধের আওয়াজ তুলে কৃত্রিম বিভাজন তৈরি করা হয়। অথচ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজনীতিতে সক্রিয় কিংবা নিষ্ক্রিয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো বিভাজন ছিল না। সবার অবস্থান ছিল ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে। স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের পাশাপাশি নানা রাজনৈতিক শক্তির সচেতন তাত্ত্বিক ও সাংগঠনিক ভূমিকা এ আন্দোলনকে সফলতার দিকে নিয়ে যায়। অথচ অভ্যুত্থান পরবর্তী অস্থির সময়ে নানা বিভ্রান্ত ও সুযোগসন্ধানী অংশ মব জাস্টিসের মধ্য দিয়ে গণহারে শিক্ষকদের অপদস্ত করা, জবরদস্তিমূলক পদত্যাগ করানো, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ বেশ কিছু গুরুতর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে, যা শিক্ষাঙ্গনের যৌক্তিক, ন্যায়সঙ্গত ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে নেতারা বলেন, ইতোমধ্যে বেরোবি, বাকৃবি, ববি, কুবি, শাবিপ্রবিসহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক মতাদর্শধারী শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার সংকুচিত করা হচ্ছে। কোনো সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক শক্তি সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব কিংবা ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট করলে তা প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু গড়পড়তা ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পাঁয়তারা শিক্ষাঙ্গনে ফ্যাসিবাদী মনন গড়ে তুলবে। অতীত ইতিহাসে আইয়ুব খান, এরশাদসহ প্রতিটি স্বৈরশাসক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পাঁয়তারা করেছিল। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জামায়াতের শাসনকালে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা না হলেও একে কলুষিত করার সব আয়োজন করা হয়।
মন্তব্য করুন