বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, স্বৈরাচারের দোসররা এখনো বেশ কয়েকটি জায়গায় বসে আছে। তারা উইপোকার মতো অবস্থান নিয়েছে। এরা এখন নিজেদের নিরপেক্ষ বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই উইপোকারা বটবৃক্ষ খেয়ে ফেলতে পারে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। স্বৈরাচার হাসিনাবিহীন নতুন পরিবেশে দিনযাপন যে কত আনন্দদায়ক, সেটি ৫ আগস্টের পর থেকে দেশের মানুষ বুঝতে পারছে। ৫ আগস্ট পর্যন্ত রক্ত ঝরার বিনিময়ে যে পরিবেশটি ফুটে উঠেছে, সেটি সাধারণ মানুষকে আশাবাদী করছে। সামনে আমরা নির্বিঘ্নে কথা বলতে পারব, চলতে পারব। আমরা ভোট দিতে যাব, সেটির সঠিক প্রতিফলন ঘটবে। কেউ আর ডাকাতের কায়দায় আমাদের ভোট ছিনিয়ে নিতে পারবে না। সভ্য সমাজ গড়ার উপাদানগুলো আজ সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা রেখে তিনি বলেন, তারা রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার করে যাচ্ছেন। জনগণের প্রত্যাশা, গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মনে রাখতে হবে, ১৫ বছর ধরে একটি স্বৈরাচারী সরকার নির্দয়ভাবে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করে নিজেদের লোকদের বসিয়ে রেখেছিল। সুতরাং মনে রাখতে হবে, ফ্যাসিবাদের দোসররা কোনোভাবেই যেন তাদের এ-টিম, বি-টিম বা সি-টিমের লোকদের সেই জায়গাগুলোতে বসাতে না পারে। ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা কায়দায় রং ও বর্ণ পরিবর্তন করে বসার চেষ্টা করছে। এরা এখন নিজেদের নিরপেক্ষ বলার চেষ্টা করছে। এখনো কিছু জায়গায় স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছে, তারা উইপোকার মতো অবস্থান নিয়েছে। এই উইপোকারা বটবৃক্ষ খেয়ে ফেলতে পারে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার প্রশাসন তাকে টিকিয়ে রাখতে বর্বর ভূমিকা পালন করেছে। তারা যদি এখন আবার রং পরিবর্তন করে প্রশাসন ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এসে বসে- অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ছাত্র-জনতার যে প্রত্যাশা, সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফ্যাসিবাদের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থেকে জনঅরণ্যে বসে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করতে ছাত্র-জনতা দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করেছে। বন্যা আঘাত করার পর থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা সেখানে গিয়েছেন এবং জনগণের মাঝে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বন্যায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন এবং সাম্প্রতিক আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের কথা বিবেচনা করে বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে সেদিন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন ও বাদজোহর দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশে সুবিধা অনুযায়ী মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকল আলোচনা সভা ও কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে যে টাকাগুলো খরচ হতো সেগুলো আমরা বন্যার্তদের মাঝে সহযোগিতার জন্য ব্যবহার করব।
রিজভী বলেন, ভারতকে বাংলাদেশের জনগণের সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে, কোনো ব্যক্তির সাথে নয়। আর এটি উভয় দেশের নৈকট্য দৃঢ় করবে।
মন্তব্য করুন