ঢালাওভাবে মামলা নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
শনিবার (২৪ আগস্ট) দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নাছিম বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে ঢালাওভাবে হত্যা মামলার আসামি করছে। ইতোমধ্যে বহু বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্টদের নামে মামলা হয়েছে এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনা মানবাধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা এর নিন্দা এবং অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
বিরুদ্ধ মত দমনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হত্যা মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যাদেরই এই অনির্বাচিত সরকার প্রতিপক্ষ মনে করছে তাদেরই হত্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। বাছবিচারহীনভাবে প্রতিপক্ষকে দমনে হত্যা মামলার এমন অপব্যবহার বাংলাদেশ কখনো দেখেনি।
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা এলাকায় একটি হত্যা মামলায় সাংবাদিক শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রূপাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা আরেকটি হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, একাত্তর টিভির সাবেক বার্তা প্রধান সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আহমেদ জোবায়ের, এটিএন নিউজের সাবেক বার্তা প্রধান মুন্নী সাহা, একাত্তর টিভির প্রিন্সিপাল করেসপনডেন্ট ফারজানা রুপা, একাত্তর টিভির চাকরিচ্যুত হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খানকে আসামি করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করার প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু এসব প্রতিবাদ ও উদ্বেগের তোয়াক্কা করছে না সরকার। গ্রেপ্তারকৃতদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য কোনো আইনজীবীকে লড়তে দেওয়া হচ্ছে না। যা সুষ্পষ্টভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
গত ২০ আগস্ট ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন এবং গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘গণগত্যা’র মামলা দায়ের হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতেই এমন অশুভ চেষ্টা চলছে বলে আমরা মনে করি।
একই সঙ্গে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে হত্যা মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির উপরে আদালত প্রাঙ্গণে হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। পুলিশের হেফাজতে থাকা একজন নারী নেত্রীকে নিরাপত্তা দিতে না পারাকে সরকারের ব্যর্থতা বলে মনে করি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ৫ বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অটিজম বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশে অটিজম সচেতনতা তৈরিতে তার ভূমিকা অন্যন্য। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকার পরও তাকে গত বৃহস্পতিবার একটি হত্যা মামলার আসামি করা হয়। বর্তমান সরকার ভবিষ্যতে যারা তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে তাদেরকেও টার্গেট করে নির্মূলের পথ নিতে চাইছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগের।
আমরা সকল ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন, হত্যা মামলায় ঢালাওভাবে আসামি করা, সাংবাদিকদের থামিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে হত্যা মামলাকে ব্যবহারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন করে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ সম্ভব নয়।