ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল দেখতে গিয়ে উত্তরায় গুলিতে নিহত ছয় বছর বয়সী শিশু ‘শহীদ’ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল রাজধানীর উত্তরার বাসভবনে গেলে কবির হোসেন এ কথা জানান।
‘শহীদ’ জাবির ইব্রাহিমের পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান এবং তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানের পক্ষ থেকে তাদের বাসভবনে যান বিএনপি নেতারা। জাবির-এর বাবা কবির হোসেন এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতি তারেক রহমান ও ডা. জুবাইদা রহমানের পক্ষ থেকে সহমর্মিতার বার্তা পৌঁছে দেন প্রতিনিধি দলে থাকা ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক ও বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন।
এ সময় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত ‘শহীদ’ শিশু জাবির ইব্রাহিম-এর বাবা কবির হোসেনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি একজন গর্বিত বাবা, আপনার সন্তানের রক্তের বিনিময়ে আবারো দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই রক্তের ঋণ আমরা শোধ করতে পারবো না কখনো। আমরা কৃতজ্ঞ যে, শিশু জাবির ইব্রাহিমের মতো শহীদদের জন্য দেশবাসী এখন নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ডা. জুবাইদা রহমান আপনাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তারা দোয়া করেছেন এবং আপনাদের পরিবারের পাশে সবসময় থাকবেন ইনশাআল্লাহ।’
শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাসভবনে উপস্থিত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আবু সায়েম বলেন, ‘শহীদের মৃত্যু হয় না, শহীদ জাবিরেরও মৃত্যু হয়নি, বরং জাবিরের রক্তে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্বাধীনতা লাভ করেছে। এই স্বাধীনতার জন্য জাবিরসহ সকল শহীদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। সেজন্য আজকে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়াবার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেভাবেই আমাদের কাজ চলছে। আমরা সবসময় নির্যাতিত ও শহীদ পরিবারের পাশে আছি এবং আগামীতেও পাশে থাকবো। দুঃসময়ে অথবা সুসময়ে কখনোই শহীদদের আমরা ভুলবো না।’
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন বলেন, ‘আমাদেরকে পাঠিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমরা ঘরে ঘরে যাচ্ছি, শহীদদের খবর নিচ্ছি। আজকে শিশু ‘শহীদ’ জাবির ইব্রাহিম-এর পরিবারের খবর নিতে এবং তাদেরকে সমবেদনা জানাতে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী-তারা সবাই এই শহীদ পরিবারের পাশে থাকবেন। বিএনপি যতদিন থাকবে, ততদিন তারা এই পরিবারের পাশে থাকবেন ইনশাআল্লাহ।’
এমন সহমর্মিতার জবাবে ‘শহীদ’ শিশু জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারসহ সবার নামে মামলা করবো। এমনকি সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধেও মামলা করবো। কারণ, তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘জাবির ইব্রাহিম দেশের জন্য তার শরীরের সম্পূর্ণ রক্ত দিয়ে গেছে, রক্তক্ষরণে সে মারা গেছে। আমি চাই, যখন যে সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবে, সেই সরকারই আমার সন্তানকে স্মরণ করুক।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ ওনার কাছে। তিনি (তারেক রহমান) যেমন আমার পাশে থাকবেন, আমিও ওনার পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ও সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য সচিব কৃষিবিদ মো. মোকছেদুল মোমিন (মিথুন), সদস্য মাসুদ রানা লিটন, ডেনমার্ক বিএনপির সভাপতি গাজী মনির আহমেদ, জার্মানি বিএনপির মোস্তাক খান, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য মুসতাকিম বিল্লাহ, ফরহাদ আলী সজীব, রুবেল আমিন, শাকিল হোসেন, শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরে রাজধানী ঢাকার উত্তরা-পূর্ব থানা পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় উত্তরার জসীমউদ্দীন সড়কে ছিল ছোট্ট জাবির। মা-বাবার সঙ্গে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল দেখছিল সে। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয় শিশু জাবির ইব্রাহিম।