শেখ হাসিনাকে গণহত্যা, গুম-খুন, লুটপাট, অর্থপাচার ও ভোটচুরির ফ্যাসিবাদের প্রধান হিসেবে অভিযুক্ত করে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে তাকে এবং তার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এবং আহতদের উন্নত চিকিৎসা, হতাহতদের পরিবারের আর্থিক ও প্রয়োজনানুযায়ী সহায়তা প্রদানের দাবিও ছয় দলীয় এই জোটের। বুধবার (২১ আগস্ট) রাজধানীর তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এসব দাবি জানান।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা রংপুরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদ আবু সাঈদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, পরিবার, আন্দোলনের মানুষজন এবং সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে রংপুর-বগুড়া সফর শেষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজ মিয়া, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর ছোড়া প্রতিটি গুলির হিসাব দিতে হবে। গণহত্যার বিচার করতে হবে। তবে যারা হত্যা করেছে তাদের দিয়ে তদন্ত করানো চলবে না।
তারা বলেন, আবু সাঈদ একটি আলোর বাতিঘর। তার আত্মত্যাগ মানুষের ভয়কে জয় করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সারা দেশের লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতা আরও প্রতিবাদী হয়ে আন্দোলনকে তরান্বিত ও সফল করেছে, অজেয় স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। এ-মুহূর্তে সরকারের প্রধান কাজ হবে, দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করার এই বীরসেনাদের সকলের তালিকা করা। জুলাই গণহত্যার সাথে জড়িত শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে তার দোসর, বিভিন্ন বাহিনীর যারা গণহত্যায় অংশ নিয়েছে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। শহিদ পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে। কোন প্রকার কালক্ষেপণ না করে আহতের দেশে বা প্রয়োজনে বিদেশে নিয়ে সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যেসকল ব্যবসায়ী গ্রুপ ও পরিবার ব্যাংক লুট, দুর্নীতি ও পাচার করেছে তাদের সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ও পচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট বর্তমান ফ্যাসিবাদী, এক ব্যাক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারী রাষ্ট্র সংস্কার করে জবাবদিহিতামূলক, ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র, সমাজ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে আন্দোলনকারী শক্তি, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটিসহ সমাজের সকল অংশের প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের আলাপ শুরুর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
নেতারা আরও বলেন, আমরা আবু সাঈদসহ অনেক শহিদের পরিবার, আন্দোলনরত মানুষ, সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেছি, রংপুর-বগুড়া সফর করেছি, সকল অন্যায়ের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি এখন সর্বত্র। যারা হত্যার সাথে জড়িত তাদের তদন্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। আর, যে ফ্যাসিবাদকে আমরা পরাজিত করেছি তা টিকিয়ে রাখার দোসর সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এমন ফ্যাসিবাদ যেন আর ফিরে না আসে সেজন্য সোচ্চার থাকতে হবে আমাদের সকলকে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুঁইয়া, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব ড. আবু ইউসুফ সেলিম, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুজ্জামান হিরা, জেএসডির দপ্তর সম্পাদক কামরুল ইসলাম অপু, প্রমুখ নেতারা।
মন্তব্য করুন