ক্ষমতাসীনরা নিজেরা গাড়ি পুড়িয়ে এবং ভাঙচুর করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আমরা জেনেছি, মাতুয়াইল ও শ্যামলীতে গাড়িতে আগুন দেওয়া ও ভাঙচুর করার ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। অথচ পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে খবর বেরিয়েছে, পুলিশের সামনেই এসব ঘটনা ঘটিয়ে ভিডিও করে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে চলে গেছে। কারা এটা করতে পারে তা অনুমানের জন্য বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার প্রয়োজন নেই।
শনিবার (২৯ জুলাই) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গ্রেপ্তার নেতাদের কাছে খাবার ও ফুল পাঠানো সরকারের নাটক মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান উল্লাহ আমানকে আটক করার পর, হেনস্তা করার পর দেখলাম, ওনাদের কাছে ফুল পাঠানো হচ্ছে, পুলিশের অফিসে নিয়ে মিষ্টি খাওয়ানো হচ্ছে। খাবার খাওয়ানো হচ্ছে... এই বিষয়টা আপনারা কীভাবে দেখছেন?’
তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টা অনেকে যারা সমালোচক আছেন, হিউমার করে কথা বলেন- তারা বলছেন, এটা নাকি ভিসা নীতির একটা পরিণতি। কারণ আসলে নিজেদের রক্ষা করার জন্য, নিজেদের নিরাপরাধ প্রমাণ করার জন্য এ ধরনের নাটক তারা সাজিয়েছেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কমিটমেন্ট টু হিজ পার্টি অ্যান্ড পলিটিক্স, গণতন্ত্র... এটা প্রমাণ করার প্রয়োজন রাখে না। তিনি তার সারা জীবনে, রাজনৈতিক জীবনে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাজনীতি করেছেন, বড় হয়েছেন। আমান উল্লাহ আমানকে প্রমাণ করতে হবে না তিনি তার রাজনীতির প্রতি, দলের প্রতি, তার দেশের মানুষের প্রতি কোনো ঘাটতি আছে। কারণ তিনি নব্বইয়ে গণঅভ্যুত্থানে অন্যতম নায়ক ছিলেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে মানুষ জেনে গেছে, বুঝে গেছে, এগুলো তাদের রক্ষার জন্য নাটক সাজিয়েছে। এর আগেও এসব ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। সুতরাং এই জিনিসগুলো নেতাকর্মী ও জনগণ গুরুত্বই দেয় না। আন্তর্জাতিক মিডিয়া আলজাজিরাতেও দেখবেন খুব পরিষ্কার করে আসল যে ঘটনা সেটাই বলেছে। বাংলাদেশের জনগণ যখন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের জন্য আন্দোলন করছে তখন এসবকে দমন করবার জন্য এই দানবীয় সরকার আবার পূর্বের চেহারায় ফিরে এসেছে, গুম করছে, অত্যাচার-নির্যাতন করছে... এসব করে তারা আন্দোলনকারীদের রুখে দিতে চায়।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আচ্ছা এর আগেও তো অনেক লোককে গ্রেপ্তার করেছে, তাদের নির্যাতন করেছে, ডিবি অফিসে নিয়ে গেছে। তারপর দেখেন আমাকে ও মির্জা আব্বাস সাহেবকে ডিসেম্বরে নিয়ে গেছে, আমাদের এখানে অনেক নেতা আছেন প্রায় সাড়ে ৪০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছিল তখন তো সুস্বাদু আম তাদের খাওয়ানো হয়নি। ফুলও পাঠানো হয়নি। ফলও পাঠানো হয়নি। এখন পাঠানো হচ্ছে ভিসা নীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য।’
একদফার পরবর্তী কর্মসূচি শিগগিরই
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুএকদিনের মধ্যে আপনারা জানতে পারবেন। আপনাদের জানাব।’
গত ১২ জুলাই একদফা আন্দোলন নতুন মাত্রায় শুরুর পর ১৮ ও ১৯ জুলাই মহানগর ও জেলা সদরে পথসভা এবং ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং আজ ঢাকার প্রবেশমুখে পাঁচ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি হয়।
তবে শনিবারে ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলা, গ্রেপ্তারসহ এক দফার পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি বৈঠকে বসে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনে আসেন।
আরও পড়ুন : ঘুমের মধ্যে কে বা কারা ফলের ঝুড়ি দিয়ে নাটক সাজিয়েছে : আমান
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামা ওবায়েদ, জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, শাম্মি আখতার, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, তাইফুল ইসলাম টিপু, কাজী রওনকুল ইসলাম টিপু, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন ও শফিকুল ইসলাম মিল্টন উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন