অন্তর্বর্তী সরকারে সমতলের আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাসহ ১১ দফা দাবিতে সমাবেশ ও মিছিল করেছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ।
সোমবার (১২ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমতলের ছাত্র-যুব ও সাধারণ জনগণের ব্যানারে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধসহ সকল আন্দোলনে আদিবাসীদের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত পঞ্চাশ বছরে সরকার বদল হলেও আদিবাসীদের ভাগ্যের বদল ঘটেনি। আমরা আদিবাসীদের সকল শোষণ ও বঞ্চনার অবসান চাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও আদিবাসী ছাত্ররা সমর্থন এবং অংশগ্রহণ করেন। আদিবাসীদের একজন শহীদ হন, অনেকজন আহত হন।
সমাবেশ থেকে আগামী ১৬ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৩টায় শাহবাগ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত ‘বৈচিত্র্যের কালচারাল শোডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সমাবেশে লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, বাংলাদেশ বহুত্ববাদী দেশ। এ দেশে বাঙালি ছাড়াও বহু ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের বসবাস। বিভিন্ন স্থানে উন্নয়নের নামে আদিবাসীদের হত্যার বিচার করতে হবে। আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে। আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশনসহ ন্যায্য দাবিসমূহ না মানলে সমতার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে না।
কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এর সদস্য ফারহা তানজিম তিতিল বলেন, সংখ্যালঘু শব্দ একটি বৈষম্যমূলক শব্দ। সংখ্যা দিয়ে মানুষকে বিচার করা যাবে না। আদিবাসী কিংবা প্রান্তিক মানুষ প্রত্যেককে তার সকল নাগরিক অধিকার এবং মর্যাদা দিতে হবে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, সরকার বিভিন্ন সময় আদিবাসীদের জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটেনি। আমরা আর কোনো প্রতিশ্রুতি চাই না, আমরা চাই বাস্তবায়ন। নতুন যে বাংলাদেশ বিনির্মানের স্বপ্ন দেখছি সেখানে সমতলের আদিবাসীদের বাদ দিয়ে কখনো সম্ভব নয়। বর্তমান আন্তর্বতীকালীন সরকারে সমতল থেকে একজন প্রতিনিধি রাখতে হবে এবং আজকের ১১ দফা দাবি মানতে হবে। না হলে অতীতের মত সমতলের আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না।
কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী আদিবাসীদের উপর হুমকি ও হামলার ঘটনা ঘটছে। দিনাজপুরে সিধু কানুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সমতার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। আদিবাসীদের সাংবিধানিক পরিচয়সহ ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠিত না করলে আদিবাসীরা আগের মতই বঞ্চিত থেকে যাবে। এ বঞ্চনার অবসান হোক।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রভাত টুডু বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি হলো সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন। আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দেশের আদিবাসীদের ওপর ঘটে যাওয়া সকল হত্যা, ধর্ষণ ও উচ্ছেদের সকল ঘটনার সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করছি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, আদিবাসী ফোরামের ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক হরেন্দ্রনাথ সিং, আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য রিপন চন্দ্র বানাই প্রমুখ।
সমাবেশে তুলে ধরা ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করা, বাংলাদেশের সংবিধানে আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা, আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত আসন নিশ্চিত করা, সমতলের আদিবাসীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থসামাজিক ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখে বিশেষ ব্যবস্থা (মনিটরিং সেল অথবা বোর্ড গঠন) করা ইত্যাদি।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল রাজু ভাস্কর্য থেকে শাহবাগ মোড় হয়ে স্বৌপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে এসে শেষ হয়।