স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন নিশ্চিত করে ছাত্র-জনতার বিজয় ছিনিয়ে আনা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
সোমবার (০৫ আগস্ট) এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, শত শহীদের রক্তস্রোতের ওপর দাঁড়িয়ে ফ্যাসিবাদের পতনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতাকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে তারা বলেন, আজকের এই দিনে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি শহীদ আবু সাঈদ, শান্ত, ওয়াসিম, তানবীন, মুগ্ধসহ শত বীর শহীদদের, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে পেরেছি। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ সবার শাহাদাতের কবুলিয়াত এবং আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী সবার সুস্থতা কামনা করছি।
নেতারা আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেন, বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে তথা, জুলুম-নিপীড়নের মূলোচ্ছেদ করে ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের সৌধের উপর এক আদর্শ সমাজ বিনির্মাণই ইসলামী ছাত্রশিবিরের আদি ও চিরন্তন উদ্দেশ্য। বৈষম্যবিরোধী এই মহাযাত্রায় ছাত্রসমাজের প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে এতটুকুও কার্পণ্য করেনি।
নেতারা বলেন, কোটা সংস্কার থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং এক দফা আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে ছাত্রশিবির নিজের ব্যানারকে, দলীয় প্রচারকে ও নিজস্ব ইমেজকে স্যাক্রিফাইস করে প্রতিটি আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে, ইনশাআল্লাহ। ২৮ অক্টোবর ২০০৬ লগি-বৈঠার পৈশাচিক গণহত্যা থেকে অদ্যাবধি, বিশেষত গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন ‘শিবির’ ট্যাগের আড়ালে বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারী ছাত্রদের হত্যা-নির্যাতন অলিখিতভাবে বৈধ করে নিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বরাবরই ‘Divide & Rule’-এর ঘৃণ্য অপকৌশল ভেঙে দিতে সচেষ্ট ছিল।
নেতারা আরও বলেন, বিগত ১৬ বছরে ছাত্রশিবির নজিরবিহীন দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে এই জুলুমের অবসানের জন্য কাজ করেছে। কিন্তু এতদিন ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়নি। ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানে আপামর ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণ এই জুলুমশাহীর পতন নিশ্চিত করেছে। সারা দেশে আপামর ছাত্র-জনতা যে অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার করেছে, এই ত্যাগ আমাদের উজ্জীবিত ও কৃতজ্ঞ করেছে।
নেতারা আরও বলেন, “অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা রক্ষা, সর্বোপরি একটি সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক জনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
বিবৃতিতে নেতারা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আপামর সচেতন নাগরিকের প্রতি কিছু আহ্বান ব্যক্ত করেন—
স্বৈরাচার থেকে মুক্ত করার জন্য সালাতের মাধ্যমে সবাই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন। দেশে দ্রুত শান্তি ফিরিয়ে আনতে সবাই সহযোগিতা করুন। যারা জুলুমকারী আছে, তাদের শাস্তি দেশের মাটিতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে তার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। দেশের সব সরকারি সম্পদের মালিক জনগণ। তাই কোনো সরকারি সম্পত্তি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেগুলো সুরক্ষার দায়িত্ব প্রত্যেকের নিজেকেই নিতে হবে।
দেশের সব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের মাঝে যে চমৎকার সম্প্রীতি রয়েছে তা যেন কোনোভাবেই নষ্ট না হয় সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। সব ধর্মীয় উপাসনালয় ও প্রতিষ্ঠান সবাই মিলে হেফাজত করতে হবে।
রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব জালিমকে বিচারের আওতায় আনা যায় সেজন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নিবেন না।
সর্বোপরি, দেশ গঠনে যারা দেশে কিংবা প্রবাসে থেকে ভূমিকা রাখছেন, প্রত্যেকের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন