শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ধবংস করতেই সরকারবিরোধী দলের ওপরে সহিংসতার দোষ চাপাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীতে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মঞ্চের সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘সারা দেশ আজকে এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। শত শত শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এটাকে ঢাকার জন্য তারা নানা রকম রাজনৈতিক কৌশল ব্যবহার করছে। একদিকে সরকার বলছে- এ কাজ জামায়াত-শিবির করেছে, তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্যদিকে আমরা দেখি তারা (সরকার) যে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করছে তার ৮০ থেকে ৯০ ভাগের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। এই রাজনৈতিক পরিচয়হীন শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করছে। সরকারের প্রতারণা আজকে পরিষ্কার। তারা অতীতের মতো এবারও সহিংসতার দায় চাপিয়ে আন্দোলনকে ধবংস করতে চায়।’
গণতন্ত্র মঞ্চের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বেলা সাড়ে ১১টায় পুরানা পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার কর্মসূচি ছিল। কিন্তু সকাল ১০টা থেকে সেখানে ব্যাপক পুলিশ, প্রিজনভ্যানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেয়। এ রকম অবস্থায় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা তাৎক্ষণিক বিজয় নগরে আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনের ফুটপাতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদে এবং এই হত্যার বিচারের দাবিতে আজকে আমরা একটা সমাবেশ অনুষ্ঠান করার কথা বলেছিলাম। আজকে পুলিশ কোনো রকম ন্যূনতম আইন-কানুনের ধার না ধেরে তারা যেভাবে পুরানা পল্টন এলাকা কর্ডন করে রেখেছে, আগ্রাসী ভূমিকার মধ্য দিয়ে আমাদের সমাবেশ পণ্ড করার চেষ্টা করছে, আমাদের মাইক কেড়ে নিয়েছে- আমরা পুলিশের এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা পরিষ্কার করে বলি, আমরা গণতন্ত্র মঞ্চসহ সকল বিরোধী দল নির্বাচনের আগে থেকেই এই সরকারের পদত্যাগ চেয়েছি। আজকে বাংলার ঘরে ঘরে এই সরকারের পদত্যাগের ধ্বনি উঠেছে, এই লড়াইটা চালাতে হবে।’
সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে গণতন্ত্র মঞ্চের এই সমন্বয়ক বলেন, ‘সহিংসতা হয়েছে অনেকগুলো স্থাপনায়, এটা কারা করেছে? আমরা স্বাধীন নিরপেক্ষ বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চাই। কিন্তু তার আগেই এই সমস্ত কাজের দোষ তারা আন্দোলকারীদের ওপর দিয়েছে, বিরোধীদলের ওপর দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা দেখলাম, তারা নির্বিচারে গ্রেপ্তার-হয়রানি, হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করছেন। আন্দোলনকারী নেতৃত্বকে তুলে নিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার নামে হেফাজতে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গণতন্ত্র মঞ্চ সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘এখন সরকার শুধু টিকে আছে প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে। সরকারের ভাগ্য এখন চিকন সুতার ওপরে ঝুলছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি কেবলমাত্র পেশাদারি দায়িত্ব পালন করে, এই সরকার পালিয়ে যাবার আর কোনো পথ পাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই- সংকটটা রাজনৈতিক। রাজনৈতিক সংকটকে রাজনৈতিকভাবে সমাধান করেন। এটা করতে হলে কীভাবে আপনারা পদত্যাগ করবেন, পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সম্ভব স্বল্পতম সময়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ আপনারা তৈরি করতে পারেন। সরকার যদি সেই পথে না হাঁটে, তাহলে যে গণজাগরণ তৈরি হয়েছে, মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ তাদের টেনে নামাতে বাধ্য করবে।’
জনগণের উদ্দেশে গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা বলেন, ‘মানুষের গণঐক্য তৈরি করেন, সকল বিরোধীদলের কার্যকর ঐক্য তৈরি করেন। সমগ্র শ্রেণিপেশার মানুষ ভয়কে জয় করে রাজপথে নামতে শুরু করেছে। এই সংগ্রামে এবার বাংলাদেশের মানুষের বিজয় হবে, ছাত্র-শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় হবে। আমরা দেশকে রক্ষা করব, দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎকে রক্ষা করব।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিম ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভুঁইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য আকবর খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন