রাজধানীতে ২৩ শর্তে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন ও বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিকেল ৪টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমাবেশের অনুমতি দেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
তিনি বলেন, সমাবেশ করার জন্য বিএনপিকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল পর্যন্ত সভা-সমাবেশ ও মাইকের ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও মাইকিং মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে শুরু করে মুক্তাঙ্গন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন এবং নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে বিএনপি। ওইদিন দুপুর ২টা থেকে এ সমাবেশ শুরু হবে।
এর আগে বিএনপিকে গোলাপবাগ মাঠ এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনকে আগারগাঁও মাঠে ডিএমপি সমাবেশ করার পরামর্শ দিলেও তাতে রাজি নয় দুই দল।
বিএনপি নয়া পল্টনে আর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ সমাবেশ করতে চেয়েছিল বায়তুল মোকারমের দক্ষিণ গেটে।
গতকাল বুধবার (২৬ জুলাই) দেশজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে শেষ মুহূর্তে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। ভেন্যু নিয়ে দিনভর আলোচনার পর মহাসমাবেশের কর্মসূচি এক দিন পিছিয়ে শুক্রবার নির্ধারণ করে বিএনপি। নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন দলের নেতারা।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে তাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শেষ পর্যন্ত তারাও এক দিন পিছিয়ে শুক্রবার শেরেবাংলা নগরে বাণিজ্য মেলার পুরোনো মাঠে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে বৃহস্পতিবার ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিল বিএনপি। দলটি সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টন চাইলেও গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশ সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের পাশে গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে সমাবেশ করার পরামর্শ দেয়।
এমন প্রেক্ষাপটে ভার্চুয়াল মাধ্যমে স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক করে বিএনপি। বুধবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে মহাসমাবেশ এক দিন পেছানোর ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সংগঠনের শান্তি সমাবেশের স্থান নিয়েও গতকাল বুধবার দিনভর চলে নাটকীয়তা। শেষ পর্যন্ত রাতে সরকারি দলের পক্ষ থেকেও আসে কর্মসূচি পেছানোর ঘোষণা।
আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান জানান, সমাবেশের স্থান উপযুক্ত না হওয়ায় একদিন পিছিয়ে শুক্রবারে নেওয়া হয়েছে।
এর আগে আজ বৃহস্পতিবার বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে চিঠি দিয়েছিল আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন। তবে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে পুলিশের পক্ষ থেকে তা নাকচ করে দেওয়া হয়।
এরপর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম মাঠে সমাবেশ করার কথা জানানো হয় পুলিশকে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি না পাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম মাঠের জন্য অনুমতি চাওয়া হয় কর্তৃপক্ষের কাছে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঢাবি কর্তৃপক্ষ অনুমতি না দেওয়ায় নতুন মাঠের কথা চিন্তা করা হয়। এর মধ্যে মহানগর নাট্যমঞ্চের কথা বিবেচনা করা হলেও স্থান ছোট হওয়ায় সেখানেও করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো।
অবশেষে দুদলকেই তাদের পছন্দের স্থানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি।
মন্তব্য করুন