সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) মহাসমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। সেই ২৭ তারিখেই শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একইদিনে কর্মসূচি দেয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আরও সাতটি রাজনৈতিক দল।
বৃহস্পতিবার কর্মদিবস হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি ঘিরে যানজটসহ স্কুল-অফিসগামী মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় নিয়ে বুধবার (২৬ জুলাই) এক ব্রিফিংয়ে ডিএমপি কমিশনার গোলাম ফারুক ছুটির দিনে কর্মসূচি দেওয়ার আহ্বান জানান। ওই ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘যারা সমাবেশের জন্য অনুমতি পাবেন, রাজনৈতিক সমাবেশ করা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুরোধ করব, ওয়ার্কিং ডেতে বিশাল বিশাল সমাবেশ করে লাখ লাখ মানুষকে রাস্তায় যানজটে আটকে রাখা, সেই জিনিসটা মাথায় রেখে তারা যেন ভবিষ্যতে ওয়ার্কিং ডের কর্মসূচিগুলো পরিবর্তন করে বন্ধের দিনে নিয়ে যান।’
আরও পড়ুন : বন্ধের দিন বড় সমাবেশ করার আহ্বান ডিএমপি কমিশনারের
ডিএমপি কমিশনারের দেওয়া এমন অনুরোধ এবং নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ায় রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসমাবেশের তারিখ ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার (২৮ জুলাই) নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন।
এ সময় মির্জা ফখরুল জানান, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন আজ একদফার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) দেশের সব গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল ২৭ জুলাই রাজধানী ঢাকায় শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের কথা গত ২৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ আমাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উচ্চ আদালতের আপত্তি এবং কর্মদিবসে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানে জনদুর্ভোগের অজুহাতে সমাবেশ অনুষ্ঠানে আপত্তি জানিয়েছে। যদিও ইতোপূর্বে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং কর্মদিবসে নয়াপল্টনে অসংখ্য সমাবেশ-মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের দৃষ্টান্ত রয়েছে।
যদিও এখন পর্যন্ত দলটি সোহরাওয়ার্দী কিংবা নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি পায়নি। ২৭ জুলাইয়ের সমাবেশের জন্য দলটিকে রাজধানীর মতিঝিলের গোলাপবাগ মাঠে অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন। তবে বিএনপি সে স্থান পছন্দ করেনি। তারা নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অনড়।
বিএনপির এমন অনড় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয় ঘিরে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বুধবার সন্ধ্যা থেকেই বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত করা হয়। মধ্যরাত পর্যন্ত কার্যালয়ের আশপাশের আবাসিক হোটেল থেকে শুরু করে তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আটকের অভিযোগ করা হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত কার্যালয়ের আশপাশে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : বিএনপিকে নতুন করে আবেদন করতে হবে : ডিএমপি কমিশনার
বিএনপির মহাসমাবেশ একদিন পিছিয়ে শুক্রবার (২৮ জুলাই) ছুটির দিনে নেওয়ার উদ্দেশ্য যাতে পুলিশের বেঁধে দেওয়া স্থান থেকে তাদের পছন্দের সোহরাওয়ার্দী কিংবা নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে পারেন। এ ছাড়া তাদের নেতাকর্মীরাও যেন সমাবেশে আসার পর্যাপ্ত সময় পান। এমনকী জনগণের ভোগান্তিও যেন না হয়।
কিন্তু সমাবেশ পিছিয়ে নেওয়ায় দলটিকে আবারও সমাবেশের অনুমতি নিয়ে চিঠি দেওয়ার কথা বলেছে পুলিশ প্রশাসন। সুতরাং দলটিকে আবারও নতুন করে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত তাদের কোথায় সমাবেশের অনুমতি দেয় তা দেখার অপেক্ষা।
এদিকে বিএনপির মহাসমাবেশের দিনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগও শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে বুধবার রাতে দুপক্ষই তাদের কর্মসূচি এক দিন পিছিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এ সংগঠন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স কালবেলাকে বলেন, বিএনপির কর্মসূচিকে নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে শান্তি সমাবেশের নামে পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটির নিজস্ব কোনো কর্মসূচি নেই। তারা একদফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করে যাবে।
মন্তব্য করুন